কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলটির ভেতরে ভয়াবহ সাংগঠনিক সঙ্কট ফুটে উঠেছে। দলাদলি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ কাউকেই এখন আস্থায় নিতেই পারছে না। পারছে না কেউ কারো ওপর বিশ্বাস রাখতে। এসব খবর মিলেছে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একান্তে কথা বলে।
কেনো এমন হলো?
দলের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত থাকা প্রকৃত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এমন বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে দেশ প্রতিনিধির কথা হয়। তাদের মতে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকারীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি এটি সহিংসতায় রূপ নেয়ায় বিপাকে পড়েছে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এমনকি দলের সাধারণ সমর্থকরাও। তাদের মতে, দলের হাইকান্ডের চরম ভুলের মাসুল গুণতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
এখন দলের অবস্থা
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সন্ত্রাস-সহিংসতা প্রতিরোধে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে না থাকার অভিযোগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ২৭টি ইউনিট কমিটি। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা-১৩ আসনের তিনটি থানা ও আটটি ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা থেকে এসব কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়। আর এর পরপরই শুরু হয়েছে অতীতে দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। শীর্ষ নেতাদের সামনেই কয়েকদফা হয়ে গেছে হাতাহাতি। কারো কারো মত, দলে সামনে বাড়তে পারে নিজেদের মধ্যে খুন-খারাবিও। অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ২৭টি ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সন্ত্রাস-সহিংসতা মোকাবিলায় সরাসরি অংশ নেননি। তবে এটা শুধু এসব এলাকাতেই নয় দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক দুর্বলতা এখন চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
স্বতন্ত্ররা এক্টিভ ছিল
এদিকে কোটা আন্দোলনে সরকারি দলটির ব্যর্থতায় ফুঠে উঠেছে আরো ভয়াবহ চিত্র। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থতার অভিযোগ উঠে। পাশাপাশি অভিযোগ আসে হাইকমান্ড এবার জাতীয় সংসদে যেসব দলীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের মনোনয়ন দিয়েছেন তাদেরই অসহযোগিতার বিষয়টি। অনেকে অভিযোগ করেন সহিংসতাময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগরীর ঐসব এমপিদের পাশে পাওয়া যায়নি। এমপিরা যেভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল, তা করেননি তারা। আবার দেখা গেছে ঢাকার যে আসনগুলিতে বেশি সহিংসতা হয়েছে সেখানে প্রায় সবই স্বতন্ত্র এমপি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধ্যমতো তারা মাঠে থাকার চেষ্টা করে দলের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এসব নিয়েও দলে আলোচিত হচ্ছে। এমন কয়েকজনের নামও বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এরা হলেন, ঢাকা-৪ আসনের এমপি আওলাদ হোসেন, ঢাকা-৫ আসনের এমপি মশিউর রহমান মোল্লাা সজল এবং ঢাকা-১৮ আসনের এমপি খসরু চৌধুরী। অভিযোগ উঠে আসে সহিংসতা মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকেও পাশে পাওয়া যায়নি।
শেষ কথা
দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় ক্ষমসতাসীন আওয়ামী লীগ। একের পর এক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয় পেতে থাকে। যদিও অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কৌশল আর ভূ-রাজনৈতিক মারপ্যাচকে কব্জা করে দফায় দফায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে। তবে এভাবে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে কারো কারো মতে, দলের বিভিন্ন স্তরে শুরু হয় মাইম্যান তৈরির বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প। চলে বিপুল বাণিজ্য নানান ধরনের পদ-পদবিকে কেন্দ্র করে। এভাবে কেন্দ্র কে দেখানো হয়েছে দলভারি করার প্রচেষ্টা। আর এসব করতে গিয়ে দলের ঢুকে পড়ে জামায়াত-শিবির নেতারা নানান ধরনের কৌশলে। নেতা-কর্মী হত্যাসহ নাশকতা ও অবৈধ অস্ত্রের একাধিক মামলা’র ওয়ালাদের ঠায় দেয়া হয় আওয়ামী লীগেরই ছায়াতলে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তা বনে যান। অথচ ’অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে নয়’ দলের হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কাজ হয়নি। আর এসব কারণে ধীরে ধীরে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির সাংগঠনিক কাঠামো, যা কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক ধাক্কায় ফুটে উঠেছে। দেখা গেলো কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধাক্কায় কিভাবে তছনছ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।