একদিন আগে অর্থাৎ ৪ আগস্টও নিউইয়র্কসহ আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে ছিল প্রতিবাদ বিক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি। মূলত আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর সরকারি বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি এবং অন্যান্য দলীয় ক্যাডারদের গুলি, নির্যাতন, হত্যা, হামলার প্রতিবাদে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল। সেই জাতিসংঘ থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জ্যাকসন হাইটস থেকে জ্যামাইকা, ব্রুকলিন থেকে ব্রঙ্কস, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে লাগাতার কর্মসূচি চলছিল। যদিও সরকারি দল এবং অঙ্গ সংগঠন তাদের নিজস্ব দলের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানান। তবে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভের কাছে সেগুলো ম্লান হয়ে যায়। সেই প্রতিবাদের ভাষা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং বিজয় উল্লাসে রূপ নেয়।
বাংলাদেশের সময় যখন দুপুর তখন আমেরিকায় ভোর, কিন্তু সেই ভোরের সূর্য উঁকি দিয়েছে নতুন খবরে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এই সংবাদে উল্লাসে ফেটে পড়েছেন নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীরা। প্রিয় জন্মভূমি আবার স্বাধীন হয়েছে মনে করে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তারা। ফজরের নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া হয়েছে, ভোরেও খোলা হয়েছে মিস্টির দোকান। একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে আনন্দ অশ্রু ঝরিয়েছেন। এ যেন এক বিজয়, শিক্ষার্থী-জনতার জয়। ভোর হতেই নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, ব্রঙ্কস, স্টারলিং, ওজন পার্কসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় নেমে আসেন নির্ঘুম রাত কাটানো কয়েক হাজার প্রবাসী। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গত কয়েকদিন যারা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করেছেন, তারা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন ভোরের বাতাসে।
এ আনন্দ-উচ্ছ্বাস এবং বাঁধভাঙা উল্লাসে ছিল যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পরিবার-পরিজন এবং নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে তারা উল্লাসে যোগ দেন। তাদের হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা, মথায় ছিল বাংলাদেশের পতাকা, হাতে ছিল শেখ হাসিনা ঘৃণামূল বিভিন্ন প্ল্যাকার্র্ড। অনেক স্থানে তারা ঢাকঢোল নিয়েও উপস্থিত হন এবং সংগীত পরিবেশন করেন। সেই এক অন্যরকম দৃশ্য। বৃষ্টিও তাদের দমাতে পারেনি। সবকিছু উপেক্ষা করে তারা ভোর রাতেই বেরিয়ে এসেছেন। মিষ্টি বিতরণ করেছেন। জ্যাকসন হাইটসসহ অনেকে এলাকাতেই মিষ্টির দোকান খালি হয়ে যায়।
এই আন্দোলন এবং আনন্দ-উল্লাসে অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছেন আল আমিন রাসেল, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রসমাজ। শেষ দিন যোগ দিয়েছিলেন নিউইয়র্ক সাংবাদিক এবং পেশাজীবীরা।
আনন্দ-উল্লাসে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, শিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, মিজানুর রহমান মিল্টন ভুইয়া, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মওলানা অলিউল্যাহ আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ, নিউইয়র্ক দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, নিউইয়র্ক উত্তর বিএনপির সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকন, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, এমদাদুল হক কামাল, নিয়াজ আহমেদ জুয়েল, আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভুইয়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম ফারুক শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর এম আলম, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম খান, ইঞ্জিনিয়ার মাঈন উদ্দিন, রুহুল আমিন, জাফর তালুকদার, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, ভিপি জসীম, বাসেত রহমান, আব্দুস সবুর, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবু সাইদ আহমেদ, এম এ বাতিন, খলকুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাউছার আহমেদ, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক বদরুল হক আজাদ, দেওয়ান কাওসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ আলী মন্ডল, মাজহারুল ইসলাম জনি, বাদল মির্জা, মনির হোসেন, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, আমিনুল ইসলাম স্বপন, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান হোসাইন, মো. শাহীন চৌধুরী, আলোমগীর হোসেন মৃধা, মো. লিয়াকত আলী, বাচ্চু মিয়া, নাছিম আহমেদ, মোতাহার হোসেন, প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, রাফেল তালুকদার, এ কে এম রফিকুল ইসলাম ডালিম, গোলাম এম হায়দার মুকুট, আব্দুর রহিম, এ আর মাহবুব, সোয়েব আহমেদ, দিলরুবা আক্তার মায়া, মোমতাজ উদ্দিন, আক্তার হোসেন নান্নু, আরিফুর রহমান কাইজার, বেগ হোসাইন ইসলাম মিঠু, জিল্লুর রহমান খান, তপদী রায় বরুণ, আ. আহাদ হেলাল, শেখ মো. ইসাহক আলী, রুবেল হোসেন, মুরাদ হোসেন, মঈনুল হোসেন, আ. মালেক রুকন, রুহুল আমিন নাসির, নাসির উদ্দিন, রেজবুল ক্রিম, জামাল হোসেন, হাজি সাব্বির রহমান, হুমায়ুন কবির, এম এ কাইয়ুম, তাজুল ইসলাম (চেয়ারম্যান), মুক্তাদির হোসেন, আশরাফ হোসেন, এম এ কালাম, রাহিমুল ইসলাম প্রিন্স, বাইতুল্লাহ শাহীন, জ্যামাইকা ফ্রেন্ড সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ইমদাদুল হক, জাহিদুর রহমান, বেলায়েত হোসেন, শফিকুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, ফারুক হোসেন পাটোয়ারী, মামুন সরকার, আল আমিন, জিসান, নূরুল ইসলাম, গোলাম দস্তগীর, ফখরুল ইসলাম মনজু, জেএসডির আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হায়দার, যুগ্ম-আহ্বায়ক সামছুদ্দিন আহমেদ শামীম, সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক এম এ মালেক, যুক্তরাষ্ট্র জেএসডির যুগ্ম-আহ্বায়ক এম জাকির হোসেন স্বপন, তছলিম উদ্দিন খান, মোহাম্মদ রফিকুল উল্লাহ, সদস্য গাজী আজম বাদল, মোহাম্মদ বাহার, ফরিদ উদ্দিন রতন, সামওয়ান বিন রব (রাব্বুল) আনোয়ার হোসেন লিটন প্রমুখ।
অনেকেই বলেছেন, আমরা ১৯৭১ সাল দেখেছি, কিন্তু ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের পর যেন নতুন এক বাংলাদেশ দেখছি, জলুমের শেষ আছে, অহংকারের পতন হয়েছে। আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারিনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবেন।
তারা আরো বলেন, দেশের মানুষ নতুন সূর্য দেখছে, আনন্দে শরিক হচ্ছি আমরা। হাসিনার পতন জেল-জলুম, হত্যা-নির্যাতনের ফল। দেশের শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন করেছে তা নজির হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে।
তারা আরো বলেন, মুগ্ধ সাঈদসহ শত শত শিক্ষার্থী-জনতার রক্তের বিনিময়ে এ বিজয়, তিনি সরকারের নিযার্তনে এবং অবিচারে গত ১৫-১৬ বছরে যত মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারের প্রতি এ বিজয় উৎসর্গ করেন।