কাদের ও আসাদুজ্জামানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বাইডেন প্রশাসনকে ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 14-08-2024

কাদের ও আসাদুজ্জামানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বাইডেন প্রশাসনকে ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও এর ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ-সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও অর্থমন্ত্রী ইয়েলেনকে চিঠি লিখেছেন ছয় জন কংগ্রেস সদস্য। চিঠিতে শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানান এ আইনপ্রণেতারা। একই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, আন্দোলনে বেশির ভাগ সহিংসতার জন্য দায়ী দুই বাহিনী-পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এর দায়ভার আসাদুজ্জামান খানের। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগকে পাঠান। সেই সঙ্গে ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ দেন তিনি।

গত ৭ আগস্ট বুধবার লেখা এ চিঠিতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ- সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের এই সদস্যরা বলেন, হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটাব্যবস্থার প্রতিবাদে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে গত ১৫ জুলাই পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সপ্তাহজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অসংগতিপূর্ণ ও বেআইনি বলপ্রয়োগ করে। ছোড়ে রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও তাজা গুলি।

এ আইনপ্রণেতারা বলেন, এসব ঘটনা বিস্তৃত পরিসরে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চালানো দমনপীড়নেরই অংশ। নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দলটির নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তবু তাদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ‘গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট’সহ প্রয়োগ উপযোগী সব আইনের আওতায় ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানান কংগ্রেস সদস্যরা।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ জুলাই সহিংস দমনাভিযানের পর শেখ হাসিনা দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট যোগাযোগ। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে। আন্দোলনে বেশির ভাগ সহিংসতার জন্য দায়ী দুই বাহিনী-পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এর দায়ভার আসাদুজ্জামান খানের।

ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগকে পাঠান। সেই সঙ্গে ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ দেন তিনি। সহিংসতায় অন্তত ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হন কয়েক হাজার। নিহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরো বেশি। এছাড়া পুলিশ ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আটক- গ্রেফতার করে; নানা অভিযোগে আসামি করে ২ লাখ লোককে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষায়, এটি ছিল ‘উইচ হান্ট’। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ আরেকবার বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুমে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালায়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালাতে ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন। এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় ওই দিন প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হন। শেখ হাসিনা আবার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেন এবং বন্ধ করে দেওয়া হয় যোগাযোগব্যবস্থা। এতে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে আরো একবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জরুরিভিত্তিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘অসম্মানজনক কাজে’ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কোনো পরিণামের মুখে পড়তে হয়নি।

এ আইনপ্রণেতারা বলেন, ‘র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে সফলতা এনেছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এটাই যথেষ্ট নয়। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামানের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রয়োগযোগ্য সব ক্ষমতা খাটিয়ে আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় শক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানাই আমরা। ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেস সদস্যরা হলেন-লয়েড ডগেট, এডওয়ার্ড জে মার্কি, উইলিয়াম আর কিটিং, ক্রিস ভন হলেন, জেমস পি ম্যাকগভার্ন ও অল গ্রিন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)