শান্তি-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার এখন স্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টির জন্য জ্বালানি-বিদ্যুৎ সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার। সেক্টরে সুশাসন নেই, নেই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সেই সঙ্গে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। ২০১০-২০২৪ জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ অ্যাক্টের আড়ালে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে অযাচিত সুবিধা দেওয়ার নামে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা, মুখ্য সচিববৃন্দ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সচিব, সংশ্লিষ্ট করপোরেশন চেয়ারম্যানবৃন্দ, কোম্পানি বোর্ড পরিচালকবৃন্দ সবাই সেক্টরকে কুশাসন এবং দুর্নীতির চারণ ভূমি বানিয়েছে। ভেবে দেখেন গ্রিড, নন-গ্রিড মিলিয়ে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও বাংলাদেশ ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।
ব্যাপক লোডশেডিং শিল্পখাতকে পঙ্গু করে ফেলছে। শুনবেন জ্বালানি সংকট। কেন গ্যাস নেই? কেন কয়লা, তরল জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না? কেন দেশের আবিষ্কৃত কয়লা মাটির নিচে? কেন জলে-স্থলে ব্যাপক অনুসন্ধান করে গ্যাস উত্তোলন করা হয়নি দীর্ঘদিন? কেন পেট্রোবাংলার শীর্ষপদ, কোম্পানির বোর্ডগুলো আঁকড়ে আছে আমলারা? কাদের স্বার্থে চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে প্রায় শতভাগ রিজার্ভ মার্জিন করা হলো? এখন বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার জন্য ভর্তুকির বিশাল বোঝা সেক্টরের কাঁধে। দেশের জ্বালানি আহরণ উপেক্ষা করে কাদের স্বার্থে জ্বালানিখাতকে আমদানিনির্ভর করা হয়েছে? সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, ইউনাইটেড গ্রুপের মতো কোম্পানিগুলোকে অযাচিত সুবিধা করে দিয়ে বিপিডিবি, বিপিসি এবং পেট্রোবাংলাকে পঙ্গু করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জ্বালানি বিদ্যুৎখাতকে পাঁচ দশক ধরে পর্যবেক্ষণে যা দেখেছি এবং বাস্তবে কাজ করে গেছি ১৯৭৭-২০০৫। আমার ওই অভিজ্ঞতা বলছে বিপুল সম্ভাবনা আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। এখনো সেক্টরে অনেক মেধাবী নবীন কর্মকর্তা আছেন। প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, সঠিক ব্যবস্থাপনা, দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালন।
২০১০-২০২৪ পর্যন্ত সেক্টরে কাজ করা শীর্ষ ব্যক্তিদের দুষ্কর্মের বিচার দাবি করছি। তিন-চারজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। সেক্টরে সুশাসন এবং জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি না হলে কখনোই দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জিত হবে না অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।
বিদ্যুতের লোডশেডিং রাজধানীতে তেমন একটি সংক্রমিত না করলেও ঢাকার বাইরে গ্রামগঞ্জে লোডশেডিং রয়েছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ফলে এ ব্যাপারটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেখে কাজ না করলে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। ফলে এ ব্যাপারটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।