জ্বালানি সেক্টরে প্রয়োজন সুসমন্বিত পরিকল্পিত উন্নয়ন


খন্দকার সালেক , আপডেট করা হয়েছে : 11-09-2024

জ্বালানি সেক্টরে প্রয়োজন সুসমন্বিত পরিকল্পিত উন্নয়ন

সুশাসনের অভাব, অবাধ দুর্নীতি এবং লোক দেখানো জৌলুসপূর্ণ তথাকথিত উন্নয়ন প্লাবনে জ্বালানি খাতের এখন ত্রাহি মধুসূধন অবস্থা। মাটির নিচে পড়ে রয়েছে আবিষ্কৃত মূল্যবান কয়লাসম্পদ, জলে-স্থলে অনাবিষ্কৃত রয়েছে বিপুল পরিমাণ পেট্রোলিয়াম সম্পদ, সৌর, বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা। আমলাতন্ত্রণের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে পেশাদাররা কোনঠাসা। অশুভ মাফিয়া সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলো। সিন্ডিকেটের স্বার্থে দেশের জ্বালানিসম্পদ উন্নয়ন উপেক্ষা করে জ্বালানি আমদানিকে উৎসাহিত করে সংকটে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণবিপ্লবের পথ ধরে বিদায় নিয়েছে কর্তৃত্ববাদী শাসন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন সংস্কারের মহান কাজ হাতে দিয়েছে।

দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানিনিরাপত্তা সৃষ্টি করতে হলে ২০০০-২০২৪ পর্যন্ত কুশাসন, দুর্নীতির কারণে সংকটাপন্ন পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই খাতে বিগত সময়ে সৃষ্ট সব দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। জ্বালানি খাতকে অবিলম্বে আমলাতন্ত্রের নিরংকুশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে যোগ্য, দক্ষ,অভিজ্ঞ পেশাদারদের নিয়োজিত করে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ দিতে হবে।

বিগত সময়ে বিশেষত ২০১০-২০২৪ পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিসমূহের কাজের পরিবেশ সরকারের পলিসিমেকার্সদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বিনষ্ট করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আধাশিক্ষিত অকারিগরি কর্মরতদের পেট্রোবাংলার শীর্ষপদ এবং কোম্পানিগুলোর পরিচালকম-লীতে সন্নিবেশিত করে জ্বালানি ক্ষেত্রে দক্ষতার অবক্ষয় করা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ আইন ২০২০-এর আলোকে প্রতিযোগিতাবিহীন প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প অস্বচ্ছ উপায়ে বাস্তবায়ন করে কোম্পানিগুলোকে পঙ্গু করা হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোতে যথেচ্ছ গ্যাস চুরি এবং অবৈধ ব্যবহার করে গ্যাস বিতরণকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ নিজস্ব কয়লা এবং গ্যাস উত্তোলন বিষয় ওপেক্ষা করে জ্বালানিসংকট সৃষ্টি করে জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো ম্যাজিক ফরমুলা নেই। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে পারে।

২০১০-২০২৪ জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সবার আমলনামা ও সম্পদের হিসাব গ্রহণ। কখন কি পরিস্থিতিতে কাদের সুপারিশে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বা পরিচালক কে হয়েছে, তাদের মাধ্যমে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে অনুসন্ধান করা। কেন বাপেক্সকে পর্যাপ্ত শক্তিশালী করে জ্বালানি অনুসন্ধানে প্রকৃত দক্ষ করা হয়নি? কেন গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ বাপেক্সকে অনুদান দিয়ে সমন্বিতভাবে অনুসন্ধান কাজ করা হয়নি? কেন উন্নয়ন গ্যাসকূপ খননের কাজ বাপেক্সকে বাদ দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে অতিরিক্ত মূল্যে দেওয়া হলো?

বিজিএফসিএলের গ্যাসকূপ মুখে কমপ্রেশার স্টেশন স্থাপনকাজে ঠিকাদার নিয়োগের দুর্নীতি অনুসন্ধান ঘুচাইতে জিটিসিএলএর গ্যাস কমপ্রেশার স্থাপনকাজ কেন শেভরনকে দেওয়া হলো? কেন এলেঙ্গা কমপ্রেশার শুরু থেকে আজ অবধি চালু করা গেল না? কেন গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত না হয়েই জিটিসিএলকে দিয়ে অনেক গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো গড়ে তোলা হলো?

বিপুল গ্যাস ঘাটতি থাকা অবস্থায় সংযোগ বন্ধ থাকার পরেও কীভাবে বিতরণ এলাকায় অসংখ অবৈধ গ্যাসসংযোগ গড়ে উঠলো? প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা কী বিবেচনায়, কীভাবে শিল্পকারখানায় গ্যাসসংযোগ দিলেন? ২০১০ থেকে শুরু করা এলএনজি আমদানি কাযক্রম কী কারণে ২০১৮ পর্যন্ত বিলম্বিত হলো? কেন এলএনজি আমদানি কার্যক্রম একটি কোম্পানির কাছে সীমিত হয়ে এলো? কেন আরপিজিসিএলের ভূমিভিত্তিক টার্মিনাল নির্মাণকাজ বিলম্বিত হলো?

২০১০-২০২৪ পেট্রোবাংলায় নিয়োজিত সব চেয়ারম্যান, পরিচালক, তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলী, বাখরাবাদ এবং জিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কার্যসময়ের কার্যক্রম অনুসন্ধান জরুরি। বিশেষত কয়েকজন পেট্রোবাংলা পরিচালকদের দুর্নীতির কারণে গ্যাস সেক্টরে দুর্নীতিবাজদের প্রতাপ সৃষ্টি হয়েছে। সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাববোধ করেছে। 

জ্বালানি সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার করে দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা না হলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি হবে না। শিল্পায়ন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন শ্লথ হয়ে পড়বে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)