কার ভূলের মাশুল গুনলো এতগুলো তাজা প্রাণ?


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 09-06-2022

কার ভূলের মাশুল গুনলো এতগুলো তাজা প্রাণ?

বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রধান বন্দর , বৃহহম শিল্পনগরীর স্পর্শকাতর স্থান সীতাকুন্ড।  একদিকে সাগর, আরেক দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। রেলপথ , পাহাড়।  আছে মাটির নিচে দুটি উচ্চচাপ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন। এমন এলাকায় জনবসতির সংলগ্ন স্থানে জাহাজ ভাঙা শিল্প , রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণের /প্রস্ততির জন্য আইসিটি টার্মিনাল স্থাপন কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত? আবার সেখানে অগ্নি সম্ভাবনা এবং বিস্ফোরক সম্বভা রাসায়নিক গুদাম দেশে বিদ্যমান বিল্ডিং কোড ,বিস্ফোরক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে জোরে শোরে,সীতাকুন্ডে ডিপোতে অগ্নিকান্ডে জানার আগ্রহ বাড়ছে । 

৪৫ মৃত্যু ( ৯ জন প্রশিক্ষিত ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তা সহ) , ১৫০ অগ্নিদগ্ধ হলো। কার ভূলের মাশুল গুনলো এতগুলো তাজা প্রাণ?   টার্মিনালটি আদৌ কি রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত ছিল? আর যদি অনুমোদন থেকেই থাকে তাহলে জন বসতির মাঝে কি ভাবে অনুমোদন পেলো? টার্মিনালে কি অগ্নি নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বা দুর্ঘটনা রোধের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ছিল? স্থানীয় ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃপক্ষকে টার্মিনালে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি  রাখার কথা জানানো হয়েছিলো ? 

হয়তো সরকার গঠিত অনুসন্ধান কমিটি উপরের প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে দায়ী ব্যাক্তি আর সংস্থাগুলোর দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করবে এবং দায়ী ব্যাক্তি বা কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনবে। কিন্তু অতীতে এই ধরণের অনেক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যাবস্থার কোনো শুভ প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয়নি। এবারেও এতগুলো মৃত্যুর পরেও এযাবৎ করা মামলায় টার্মিনালের মালিক পক্ষের কাউকে দায়ী করা হয়নি। কয়েকজন বেতনভুক কর্মকর্তাকে অবশ্যই দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী করা যায়।

কিন্ত মূল দায়িত্ব মালিক পক্ষের। শোনা যাচ্ছে, টার্মিনালে রাসায়নিক দ্রব্যাদি গুদামজাত করার জন্য বিস্ফোরক দপ্তর থেকে অনুমোদন নেয়া হয়নি। হয়তো পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন দেয় নি। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে কোন জাদুমন্ত্র বলে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ এই ধরণের অর্ন্তঘাতমুল কাজ করলো? আর বিস্ফোরক দপ্তর , বন্দর কর্তৃপক্ষ , পরিবেশ অধিদপ্তর কি মহান দ্বায়িত্বটা বরাবরের মত পালন করে চললো?

মালিক কোন দলের রাজনীতি করে সেটি মুখ নয়। এই ক্ষেত্রে বিচ্যুতির  জন্য টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ বা রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর দায় দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। দেখা গেলো পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরাও যথা সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারে ৯ জন প্রশিক্ষিত জনবল হারালো। প্রশ্ন আছে, এই ধরণের আগুন দুর্ঘটনা বা বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা প্রশিক্ষিত জনবল কি বাংলাদেশের আছে?

তবে একটি জিনিস সুস্পষ্ট সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় হীনতা আছে। প্রশ্ন আছে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিরন্ত্রণকারী সংস্থা কেন দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বাধীন নয়? আরো প্রশ্ন আছে চট্টগ্রামের মতো শিল্প নগরী ,বন্দর নগরীতে কেন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা সংম্বলিত হাসপাতাল / বার্ন ইউনিট নাই? 

এতদসত্ত্বেও ফায়ার ব্রিগেড জীবন দিয়ে জনসেবা করেছে, চট্টগ্রামের চিকিৎসক সমাজ দেশ প্রেম নিয়ে জীবন রক্ষায় কাজ করেছে।  আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনৈক উন্নয়নের পাশাপাশি এখন সকল স্তরে কারিগরি এবং বাস্তব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিবিড় ভাবে পান মূল্যায়নের অপরিহার্যতা রয়েছে। প্রয়োজনে রেগুলেশন হালনাগাদ করতে হবে।

রেগুলেটরি সংস্থা গুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সুশাসনের অভাবে কোনো সরকারি সংস্থা এখন জবাব দিহিতার আওতায় নাই। একশ্রেণীর দুর্বৃত্তরা আইন কানুন কিছুই মানে না। তাই দুর্ঘটনা নিরন্তর ঘটে চলছে। এই অবস্থার অবসান না হলে উন্নয়নের সুফল কখনো সাধারণ মানুষ পাবে না। আশা করি ৪৫ জনের দুর্ভাগ্যজনক জীবন হানি থেকে বাংলাদেশ দ্রুত শিক্ষা নেবে। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)