জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক আগমণ ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উভয় দলের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ড. ইউনূসের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করেছে।
জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের নিরাপদ দূরত্বে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশ হলেও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মাঝে অপ্রত্যশিতভাবে ধাক্কা-ধাক্তি আর হাতাহতির ঘটনা ঘটে। উদ্ভুত পরিস্থিতে জেএফকে আর নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গত ২২ সেপ্টেম্বরও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অনুষ্ঠানে ব্যানার ছিড়ে নেয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানটি জ্যাকসন হাইটসের কাবাব কিংৎ রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মূলত বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন খোকনকে কেন্দ্র করেই এই মারামারির ঘটনা। অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলেছেন, তিনি এখন কেন এসেছেন? তার কাজ কী? ধান্ধা না দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা?
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক আগমনকে স্বাগত জানাতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি জেএফকেতে স্বাগত সমাবেশ কররে। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার দিনও বিএনপি জাতিসংঘ ভবনের সামনে স্বাগত সমাবেশ আয়োজন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জেএফকে’র স্বাগত সমাবেশে বিএনপি’র সর্বস্তরের আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মী যোগ দেন এবং নানা শ্লোগান দেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, বিএনপির জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্যাহ আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাইদ, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকন, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ চৌধুরী, দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাবেক সহ সভাপতি এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভুইয়া, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা এবাদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, আতিকুল হক আজাদ, বদরুল হক আজাদ, ভিপি জসীম, খলকুর রহমান, শরিফ খালিসদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর খান হারুণ, দেওয়ান কাউছার, শাহাদাত হোসেন রাজু প্রমুখ অংশ নেন।
বিএনপি’র সমাবেশ চলাকালীন সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি আর হাতাহতির ঘটনা ঘটে। এব্যাপারে গিয়াস আহমেদ বলেন, ঘটনার সময় বৃষ্টি আসায় আর টার্মিনালের কন্সট্রাকশনের কাজ চলায় সেখানে স্থানাভাবের ফলে ধাক্কা-ধাক্কাধাক্কির ঘটনা এক সময় হাতাহতিতে পরিণত হয়। অন্য কিছু নয়।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্তি আর হাতাহতির ঘটনা ঘটেছে সত্য, তা অন্য কোন কারণে নয়, সমাবেশে অধিক সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতির ফলে স্থান সংকট হওয়ায় অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে।
বিএনপি’র একটি সূত্রের দাবী লন্ডন প্রবাসী দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের সমাবেশে যোগদান অনেকেই মেনে নিতে পারেনি বলেই ধাক্কাধাক্কি আর হাতাহতির ঘটনা ঘটেছে। কেননা, আনোয়ার হোসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র ষ্টেট কমিটি গঠনের নামে ‘অর্থ বাণিজ্য’ করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। যেখানে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কোন কমিটি নেই, সেখানে আনোয়ার হোসেন খোকনের কর্মকাণ্ড দলের অনেক নেতা-কর্মী মেনে নিতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একাধিক নেতাও কেন্দ্রীয় নেতা খোকনের বিরুদ্ধে নানা অভিয়োগ তুলেন এবং তাকে কোন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে না বলেও জানান।
অপরদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক আগমনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ জেএফকে-তে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারকে ‘অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার’ দাবী করে এর প্রতিবাদে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। তারা শেখ হাসিনার পক্ষেও নানা শ্লোগান দেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মী এই সমাবেশে যোগ দেন। বিক্ষোভে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলের যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম বাদশা, সোলায়মান আলী, দরুদ মিয়া রুনেল, শাহানারা রহমান, আক্তার হোসেন, মমতাজ শাহনাজ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ ড. ইউনূসের জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার দিনও একইভাবে জাতিসংঘ ভবনের সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।