৪৫ বছরের কারাদণ্ডের সম্মুখীন মেয়র এরিক অ্যাডামস


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 02-10-2024

৪৫ বছরের কারাদণ্ডের সম্মুখীন মেয়র এরিক অ্যাডামস

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং বিদেশি নির্বাচনী অনুদান গ্রহণের অভিযোগে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মামলা করেছে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগ বৃহস্পতিবার সকালে ৫৭ পৃষ্ঠার একটি ক্রিমিনাল অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। এই অভিযোগপত্রে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে প্রভাব কেনাবেচার অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বিলাসবহুল ভ্রমণ ও নির্বাচনী প্রচারণার অনুদানের বিনিময়ে তিনি সুবিধা প্রদান করেছেন। নিউইয়র্ক সিটির সংকটাপন্ন মেয়র এরিক অ্যাডামস ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ফেডারেল দুর্নীতির অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন যে অ্যাডামস তার ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করে বিনা মূল্যে বিলাসবহুল ভ্রমণ, হোটেল থাকার সুবিধা এবং সন্দেহজনক নির্বাচনী অনুদান সংগ্রহ করেছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অ্যাডামস পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন: ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি, অবৈধ বিদেশি নির্বাচনী অনুদান গ্রহণ, ওয়্যার জালিয়াতি, এবং ষড়যন্ত্র। এর ফলে নিউইয়র্ক সিটির সাবেক পুলিশ ক্যাপ্টেন অ্যাডামস ফেডারেল অপরাধে অভিযুক্ত প্রথম বর্তমান মেয়র হিসেবে দায়ী হয়েছেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তুরস্কের সঙ্গে অ্যাডামসের সম্পর্ক, যা ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল এবং ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশ্যে আসে যখন ফেডারেল এজেন্টরা অ্যাডামসের ২০২১ সালের নির্বাচনী প্রচারণার ফান্ডরেইজার ব্রায়ানা সাগসের বাড়িতে অভিযান চালায়। সাগস অভিযোগপত্রে ‘অ্যাডামসের ফান্ড রেইজার হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লিখিত। অ্যাডামসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে ২০২১ এবং ২০২৫ সালের মেয়র নির্বাচন প্রচারণার জন্য অবৈধ বিদেশি অনুদান সংগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কিত। অভিযোগে বলা হয়েছে, অ্যাডামস এবং তার কর্মী ও ফান্ড রেইজার জেনেশুনে অবৈধ অনুদান সংগ্রহ করেছিলেন। এর বিনিময়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছিলেন। অ্যাডামস তুরস্কের জন্য সুবিধা প্রদান করেছিলেন, যেমন-আর্মেনিয়ান গণহত্যার বিষয়ে নিরব থাকা, অবৈধ অনুদান দাতাকে তার মেয়রের ট্রানজিশন টিমে নিয়োগ দেওয়া এবং নিউইয়র্ক সিটিতে তুর্কি সরকারের একটি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন দ্রুত শেষ করা। অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে যে, ২০১৬ সাল থেকে অ্যাডামস তুরস্কের জাতীয় বিমান সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে বা কম খরচে বিলাসবহুল ভ্রমণ করেছেন। তিনি বারবার এই সুবিধাগুলো গোপন করার চেষ্টা করেছেন, যেমন টেক্সট মেসেজ মুছে ফেলা এবং নামমাত্র অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য একটি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করার চেষ্টা করা। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অ্যাডামস প্রায় এক লক্ষ ডলার মূল্যের ভ্রমণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তিনি এগুলো প্রয়োজনীয় বার্ষিক প্রকাশন ফর্মে উল্লেখ করেননি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের কারাদ- হতে পারে।

মেয়র অ্যাডামস তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জনগণকে তার কাহিনি শোনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেসি ম্যানশনে আয়োজিত একটি প্রেস কনফারেন্সে তিনি তার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং তার পাশে উপস্থিত ব্ল্যাক ক্লার্জি সদস্যদের সমর্থন পেয়েছেন। তবে কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সংবাদ সম্মেলনটি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ কিছু প্রতিবাদকারী তাকে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিল। অ্যাডামস বলেন, আমরা এ সবকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমি নিউইয়র্কবাসীকে অনুরোধ করবো আমাদের কথা শোনার আগে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য।

২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মেয়র এরিক অ্যাডামস ফেডারেল আদালতে হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। অ্যাডামস শুক্রবার ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে বলেন, ‘আমি দোষী নই, মাননীয় বিচারক’। ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক ক্যাথরিন পার্কার শুনানির পর অ্যাডামসকে শর্তসাপেক্ষে জামিনে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। মেয়র অভিযুক্তদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মেয়র তার দৈনন্দিন কাজকর্ম বজায় রাখতে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। বিচারক অ্যাডামসকে তার পাসপোর্ট রাখারও অনুমতি দিয়েছেন। একজন আসামি হিসেবে আদালতে অ্যাডামসের উপস্থিতি তার আগের কর্মজীবনের বিপরীতমুখী ঘটনা। যেখানে তিনি এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন হিসেবে অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে ইউএস অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, অ্যাডামস জনগণের বিশ্বাসের ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, এটি ছিল একটি বহু বছরের ষড়যন্ত্র, যেখানে একজন উঠতি রাজনীতিবিদকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আমরা আরো অনেককে দায়ী করবো। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ডেমিয়ান উইলিয়ামস আরো বলেন, অভিযোগ অনুযায়ী, মেয়র অ্যাডামস তার শহরের সর্বোচ্চ নির্বাচিত কর্মকর্তা হিসাবে এবং তার আগে ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘুষ গ্রহণ এবং অবৈধ প্রচারাভিযানের অনুদান চেয়েছেন। বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ম্যানহাটনের একটি আকাশচুম্বী ভবনকে অগ্নিপরীক্ষা ছাড়াই খোলার অনুমতি দেন। অ্যাডামস তার উপকারভোগীদের স্বার্থকে তার ভোটারদের চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এ অফিস এবং এফবিআই এবং ডিওআইয়ের সহযোগীদের সঙ্গে আমরা এ শহরের যে কোনো স্থানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো, বিশেষ করে যখন এ দুর্নীতি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবৈধ বিদেশি প্রভাবের রূপ নেয়।

এফবিআইয়ের সহকারী পরিচালক জেমস ই. ডেনেহি বলেছেন, আজকের অভিযোগ একটি গভীর মুহূর্তকে নির্দেশ করে এবং একই সঙ্গে দেশের প্রতিটি নির্বাচিত কর্মকর্তাকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়: জনসেবা একটি গভীর দায়িত্ব এবং এটি একটি মহৎ কাজ হওয়া উচিত। যখন এটি লোভ এবং অসততার মাধ্যমে বিকৃত হয়, তখন এটি আমাদের বিশ্বাসকে লুণ্ঠন করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় বা অপরাধের বাইরে নয়। ডিওআই কমিশনার জোসেলিন ই. স্ট্রাউবার বলেন, আজকের অভিযোগে বলা হয়েছে, মেয়র অ্যাডামস তার ক্ষমতা ও পদকে প্রায় এক দশক ধরে অপব্যবহার করেছেন, বিদেশি নাগরিক এবং অন্যদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা, অবৈধ প্রচারাভিযানের অনুদান গ্রহণ করেছেন, যা তাদের তার ওপর অতিরিক্ত প্রভাব দিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এ অবৈধ কার্যকলাপ একজন নির্বাচিত কর্মকর্তা হিসেবে তার সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করেছে। নিউইয়র্কের বাসিন্দারা এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন। আমি নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি অফিস এবং এফবিআইকে ধন্যবাদ জানাই, যারা সিটি সরকারের দুর্নীতি খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে, অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটি সরকারের বিভিন্ন বিশিষ্ট পদ ব্যবহার করে অবৈধ প্রচারাভিযানের অনুদান এবং বিলাসবহুল ভ্রমণ গ্রহণ করেছেন। অ্যাডামস বিদেশি নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং অন্যদের কাছ থেকে এসব সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এরপর অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটি ফায়ার ডিপার্টমেন্টকে চাপ দেন, যাতে তারা একটি বিদেশি সরকারের ম্যানহাটনের আকাশচুম্বী ভবনটি, যা অগ্নি পরিদর্শন ছাড়াই ছিল, চালু করার অনুমতি দেয়। এই অপরাধমূলক কার্যকলাপ লুকানোর জন্য, অ্যাডামস বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যাতে তার বেআইনি সুবিধাগুলো জনসাধারণ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টির বাইরে থাকে। ২০১৪ সালে, অ্যাডামস ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিদেশি ব্যবসায়ী এবং কমপক্ষে একজন তুর্কি সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে বিলাসবহুল আন্তর্জাতিক ভ্রমণসহ মূল্যবান অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকেন। ২০১৮ সালের মধ্যে, অ্যাডামস, যিনি তখন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রার্থিতা করার পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন, অবৈধ প্রচারাভিযানের অনুদান গ্রহণ করা শুরু করেন। অ্যাডামস অবৈধ প্রচারাভিযানের অনুদান গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে তাদের প্রকৃত অবদানকারীদের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন।

নিউইয়র্কের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নির্বাচিত কর্মকর্তা বিবাদমান নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসকে ফেডারেল ফৌজদারি অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৬ জন নির্বাচিত কর্মকর্তা অ্যাডামসকে পদত্যাগ করার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়র প্রার্থী এবং নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, মেয়র প্রার্থী এবং প্রাক্তন নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার, মেয়র প্রার্থী এবং স্টেট সিনেটর জেলনর মাইরি, মেয়র প্রার্থী এবং অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি, কংগ্রেসের প্রতিনিধি: কংগ্রেসম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, কংগ্রেসম্যান এলিস স্টেফানিক, কংগ্রেসম্যান নাইডিয়া ভেলাজকুয়েজ, কংগ্রেসম্যান নিকোল মালিওটাকিস, কংগ্রেসম্যান জেরি ন্যাডলার, স্টেট সিনেটর: জুলিয়া সালাজার, জাবারি ব্রিসপোর্ট, গুস্তাভো রিভেরা, ব্র্যাড হোয়েলম্যান-সিগাল, স্টেট সিনেটর জন ল্যু, অ্যান্ড্রু গৌনার্ডস, ক্রিস্টেন গঞ্জালেজ, ইওয়েন চু, অ্যাসেম্বলি সদস্য: এমিলি গ্যালাগার, জেসিন ওডি, জেসিন ওডি, গনজালেজ-রোজাস, রবার্ট ক্যারল, টনি সিমোন, ফারা সোফ্রান্ট-ফরেস্ট, লিন্ডা রোজেনথাল, মার্সেলা মিটেইনস, গ্রেস লি, হার্ভে এপস্টেইন, জো অ্যান সাইমন, বরো প্রেসিডেন্ট: ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও রেইনোসিটি কাউন্সিল সদস্য, অ্যালেক্সা, এমসিবিসিটি কাউন্সিল সদস্য টিফানি ক্যাবান, কারমেন দে লা রোসা, স্যান্ডি নার্স, জেনিফার গুটিয়েরেজ, চি ওসে, লিঙ্কন রেসলার, শাহানা হানিফ, শেখর কৃষ্ণান, রবার্ট হোল্ডেন, ক্রিস ব্যাংকস, জুলি ওয়ান, শন অ্যাব্রেউ, এরিক বটচার, ক্রিস্টাল হাডসন।

এই দীর্ঘ অভিযোগপত্রটি অ্যাডামস প্রশাসনের সাম্প্রতিক অন্যান্য আইনি সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি মাত্র অংশ। আরো কয়েকটি ফেডারেল তদন্ত চলছে, যার মধ্যে রয়েছে এডওয়ার্ড কাবান, ডেভিড ব্যাংকস এবং শীনা রাইটের মতো শীর্ষস্থানীয় মেয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত। এছাড়া, রানা আব্বাসোভা, একজন সিটি হল সহকারী এবং প্রাক্তন বরো প্রেসিডেন্টের অফিসের সদস্য, এবং তুরস্কের এয়ারলাইনসের সাবেক নির্বাহী চেংক ওকালের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। আব্বাসোভা অভিযোগপত্রে ’অ্যাডামসের স্টাফার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসনে চলমান ফেডারেল তদন্তগুলি আরও গভীরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। তার বেশ কয়েকজন সহযোগী এবং প্রশাসনের সদস্যরা তদন্তের আওতায় এসেছেন। মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনায় তাকে নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেও তার প্রশাসনের অনেকেই এখন বিভিন্ন ফেডারেল তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নিচে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা হলো:

ইনগ্রিড লুইস মার্টিন মেয়রের প্রধান উপদেষ্টা

মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রধান উপদেষ্টা ইনগ্রিড লুইস মার্টিন, যিনি অ্যাডামসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবেও পরিচিত, তিনিও ফেডারেল তদন্তের আওতায় রয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জাপান থেকে ফিরে আসার সময়, তাকে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তদন্তকারীরা থামিয়ে তার ফোন জব্দ করে এবং তাকে একটি সমন প্রদান করে। তার অ্যাপার্টমেন্টেও একই সময়ে আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তারা তল্লাশি চালান।

মলি শেফার অভিবাসী শরণার্থী কার্যক্রমের পরিচালক

মলি শেফার, যিনি মেয়র অ্যাডামসের প্রশাসনের শরণার্থী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি সমন প্রদান করা হয়েছিল। যদিও তিনি কোনো সরাসরি অভিযোগের সম্মুখীন হননি, তবে তার কাছে অভিবাসী সংকট এবং শরণার্থী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য সমন প্রদান করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টম ডনলন-অন্তর্বর্তীকালীন এনওয়াইপিডি কমিশনার

টম ডনলন, যিনি প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড কাবানের স্থলাভিষিক্ত হন, তাকেও ফেডারেল তদন্তকারীরা ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার বাড়ি থেকে কয়েকটি উপকরণ জব্দ করা হয়, যেগুলো তিনি প্রায় ২০ বছর আগে তার এফবিআই এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পোস্ট থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

ফ্রাঙ্ক ক্যারোন প্রাক্তন চিফ অব স্টাফ

মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রাক্তন চিফ অব স্টাফ ফ্রাঙ্ক ক্যারোন, যিনি বর্তমানে মেয়রের পুনর্নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তাকেও ফেডারেল তদন্তকারীরা লক্ষ্যবস্তু করেছেন। তারা ব্রুকলিনের এক চার্চের সঙ্গে ক্যারোনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত করছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি অভিযোগ আনা হয়নি, তবে ক্যারোন এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাদ্রী মন্সিগনর জেমি গিগানটিয়েলোর মধ্যে সম্ভাব্য ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি সমন জারি করা হয়েছে।

এরিক উলরিচ প্রাক্তন বিল্ডিং কমিশনার

নিউইয়র্ক সিটির প্রাক্তন বিল্ডিং কমিশনার এবং প্রাক্তন সিটি কাউন্সিল সদস্য এরিক উলরিচের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ষড়যন্ত্র এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নির অফিস থেকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত এবং অর্থনৈতিক লাভের জন্য তার সরকারি পদ ব্যবহার করার অভিযোগ। উলরিচ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

ডেভিড ব্যাংকস নিউইয়র্ক সিটি স্কুল চ্যান্সেলর

স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাংকস, যিনি মেয়র অ্যাডামসের ডেপুটি মেয়র ফিল ব্যাংকসের ভাই, তার বাড়িতেও ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফেডারেল এজেন্টরা অভিযান চালায়। তারা তার ফোনও জব্দ করে। তদন্তের পুরো পরিধি এখনো স্পষ্ট নয়, তবে মনে করা হচ্ছে, তিনি সিটি হলের বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নিউইয়র্ক সিটির স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাংকস গত ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘোষণা মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসনকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। ডেভিড ব্যাংকসের পদত্যাগ অ্যাডামস প্রশাসনের জন্য একটি বড় আঘাত।

শিনা রাইট প্রথম ডেপুটি মেয়র

শিনা রাইট, যিনি ডেভিড ব্যাংকসের সঙ্গী হিসেবে পরিচিত, তার ফোনও ৪ সেপ্টেম্বর ফেডারেল এজেন্টরা জব্দ করে। যদিও তিনি প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন, তার বিরুদ্ধেও কোনো সরাসরি অভিযোগ আনা হয়নি।

ইনগ্রিড লুইস মার্টিন এবং অন্যরা

মেয়র অ্যাডামসের প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। এটি শহরের রাজনীতিতে একটি বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যেখানে প্রশাসনের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে এবং কিছু লোক এখনো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তীব্র নজরদারিতে রয়েছেন। এসব তদন্ত এখনো চলছে এবং মেয়র অ্যাডামসের প্রশাসনের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

নিউইয়র্ক সিটির হেলথ কমিশনার অশ্বিন বসান পদত্যাগ করেছেন

নিউইয়র্ক সিটির হেলথ কমিশনার অশ্বিন বসান গত ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার মেয়র অ্যাডামস প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেছেন। যখন ফেডারেল তদন্তের মুখোমুখি বেশ কয়েকজন সিটি অফিসিয়াল। বসান, যিনি মার্চ ২০২২ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির হেলথ কমিশনার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সিটি হল এবং তার নিজস্ব কর্মীদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তবে বলেছেন যে, মেয়র অ্যাডামস তার স্থলাভিষিক্ত খোঁজা পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। বসান কোনো তদন্তের সঙ্গে জড়িত নন, তবে তার বিদায়ের ঘটনা আরো অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদত্যাগের ধারাবাহিকতার অংশ। গত সপ্তাহে, ক্রিস্টেন এডগ্রিন কফম্যান অ্যাডামসের ডেপুটি কমিশনার, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপস এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান তিন বছর পর তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এছাড়াও আইনজীবী লিসা জর্নবার্গ হঠাৎ গত ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে পদত্যাগ করেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)