গর্তে পড়লে হাতি..


হাবিব রহমান , আপডেট করা হয়েছে : 09-10-2024

গর্তে পড়লে হাতি..

গ্রামবাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘গর্তে পড়িল হাতি/চামচিকাও মারে লাথি।’ অর্থাৎ হাতি গর্তে পড়লে চামচিকাও নাকি পাছায় লাথি মারে। আগে ভাবতাম আসলে এটা মনে হয় কথার কথা, বাস্তবে কি তাই হয়? আদৌ কি তা সম্ভব? কিন্তু এখন দেখছি তা সম্ভব। বাস্তবে মানুষ বিপদে পড়লে সুযোগসন্ধানী কিছু মানুষ, মানুষের বিপদকে কাজে লাগিয়ে মৌখিক বাকভঙ্গি বা কথার মধ্য দিয়ে একধরনের লাথি প্রয়োগ করে থাকে, যা হয়তো কারো গায়ে না লাগলেও মনে আঁচড় কাটে। মনে হয় এটাই হলো চামচিকের সেই লাথি।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখন চরম দুঃসময়। তিনি গদিচ্যুত হয়ে এখন ভারতে নির্বাসন জীবনযাপন করছেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবেন সে সম্ভাবনাও কম। যারা তার সুদিনে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন এখন তার সুসময়ের সঙ্গীরা অনেকেই ভোল পাল্টাচ্ছেন। নেত্রী যদি দিনকে রাত বলতেন, তারা তাতেই সহমত পোষণ করতেন। কিন্তু এখন তাদের অনেকেই ভিন্ন সুরে কথা বলছেন।

কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সারওয়ার হোসেন গত ২৯ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখেন- ‘আওয়ামী লীগ সরকারের এ রকম পতনের জন্য নেতৃত্বই দায়ী। এটা আল্লাহর তরফ থেকে গজব এসেছে।

‘আমি আন্দালিব পার্থর সঙ্গে একমত।’

তিনি আরো লিখেছেন- ‘বারবার বিনা ভোটের অটো নির্বাচিত এমপি-মন্ত্রীরা কই? যারা শত শত কোটি টাকা বানিয়ে আজ পলাতক। অন্যদিকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মিথ্যা খুনের মামলা মাথায় নিয়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরছেন। এসবের জবাব আগামীতে অবশ্যই দিতে হবে।’

তিনি লিখেছেন- ‘আমার মনের কথাগুলো আর ভেতরে আটকিয়ে রাখতে না পেরে প্রকাশ করছি, কারো পছন্দ না-ও হতে পারে, এটা আমার একান্ত নিজের মতামত এবং চিন্তাভাবনা। কে আমাকে কী ভাবলো দেখার বিষয় নয়।’

জ্যামাইকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘কী কারণে দলের পতন হবে, দুই বছর আগেই বলে দিয়েছিলাম। কেউ আমার কথা শুনে নাই।’

যত অন্যায় হয়েছে ৯০ ভাগ শেখ হাসিনা করেছেন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে ছিল তার মধুর সম্পর্ক। শেখ হাসিনাকে তিনি বোন বলে ডাকতেন। নিজের আলাদা দল থাকলেও শেখ হাসিনা ডাকলেই তিনি কাছে ছুটে যেতেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর এখন তার কণ্ঠেও ভিন্ন সুর।

গত ১ অক্টোবর টাঙ্গাইল শহরের করের বেতকায় নিহত সেনাসদস্য তানজিম সরোয়ার নির্জনের বাসায় তার স্বজনদের সঙ্গে সমবেদনা ও সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিগত ১৬-১৭ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটা ভালো চলেনি। এ দেশ আওয়ামী লীগ সরকারের ছিল না এবং মানুষের সরকার ছিল না। এ দেশ ছিল শেখ হাসিনা সরকারের। এ দেশে যত অন্যায় হয়েছে তার ৯০ ভাগ শেখ হাসিনা নিজে করেছেন। বাকি ১০ ভাগ যারা করেছেন তারা বাধ্য হয়ে করেছেন।

আ.লীগের অপকর্মের দায় নিতে রাজি নয় ১৪ দল

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্মরণকালের মহাবিপর্যয় ঘটেছে দলটির। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ প্রধানের ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং দলটির সব পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রী ও এমপিদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পরই দীর্ঘদিন ধরে সুখে-দুঃখে পাশে থাকা জোটসঙ্গী দলগুলোও ভোল পাল্টাতে শুরু করেছে।

জোটসঙ্গী হিসেবে টানা ১৬ বছর সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও এখন আওয়ামী লীগের অতীতের কোনো অপকর্মের দায়ভার নিতেও রাজি নয় শরিকদলগুলো। যদিও গণহত্যার হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিকদলগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ড. ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে ডজনখানেক গুজব

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশের নতুন এই পরিস্থিতিতে এ সরকার ও সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইভেন্ট জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের ফলে ১৫ বছর পর সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্যদিকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দল হিসেবে অস্তিত্ব সংকটে আওয়ামী লীগ। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। এ অধিবেশন শুরুর পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে নানা গুজব।

এসব গুজবের মধ্যে ছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর ব্যাপারে জাতিসংঘের ঘোষণা, জাতিসংঘের অধিবেশনে ড. ইউনূসের যোগদানের বিষয়ে রাশিয়াসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের আপত্তি ও ভাষণ বাতিল, জাতিসংঘ অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১১৮ দেশের স্বীকৃতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র জাতিসংঘে জমা না দিলে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি।

ফেসবুকের পাশাপাশি প্রায় এক ডজন গুজবের কিছু ছড়িয়েছে ইউটিউব এবং টিকটক থেকে। এসব গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে পুরনো ভিডিও।

এ সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘এই সরকারের যারা বিরোধী বা যারা বিগত সরকারের সমর্থক, তারা তো নানাভাবেই সরকারের ভাবমূর্তি সংকটে ফেলতে চাচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনটা তাদের জন্য একটি উপলক্ষ হয়ে এসেছিল। তারা এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেলে তারা (আওয়ামী লীগ) ডিমরালাইজড (নৈতিকভাবে দুর্বল) হয়ে যাবে। দেশেও তাদের পজিশন নেই, ইন্টারন্যাশনালিও পজিশন হারাবে। তাই তারা এ অধিবেশনটাকে লড়াইয়ের উপলক্ষ হিসেবে নিয়েছে।’

এ গুজবের প্রভাব সম্পর্কে সুমন রহমান বলেন, এসব গুজব খুব একটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারেনি। মানুষকে খুব মিসগাইড করতে পারেনি। একটা বড় কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযাগ্যতা সম্পর্কে জানে। ফলে সাধারণভাবেই মানুষ গুজবগুলো ধরতে পেরেছে।

শেখ হাসিনা সংগ্রাম পরিষদ

নিউইয়র্কে শেখ হাসিনা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছে। এখনো ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না তাদের কর্মকা- কি হবে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া অন্য কেউ আওয়ামী লীগের নীতিগত বিষয়ে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করছেন না। যদিও দলান্ধ লোকজন ছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের লোকজন যে বিষয়টিকে খুব সুনজরে দেখছেন তা কিন্তু নয়। ৫ আগস্টের পর থেকে জয়ের দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতিগুলো কেবল বাস্তবতাবর্জিতই নয়, অনেকখানি স্ববিরোধিতাপূর্ণও। তারপরও শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একমাত্র নীতিনির্ধারক হিসেবে জয় নিজেকে তুলে ধরায় তার দলের ভেতরেই এমন সন্দেহ দানা বেধেছে যে শেখ হাসিনা নিজ পরিবারের বাইরের কারো হাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছাড়তে নারাজ।

এছাড়া আন্দোলন দমনের নামে হত্যা, বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে বারবার তামাশার নির্বাচন, সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ পাচার ইত্যাদি বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্রও দেখা যাচ্ছে না। বরং নানা যুক্তি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের সবই সঠিক ছিল।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপযোগী করে নিজেদের শুধরে নেওয়ার বদলে অনুকূল সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকার কৌশল নিয়েছে। তাই দলীয় অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগছে নিজেদের শোধরানোর উদ্যোগ না নিলে সেই অপেক্ষার প্রহর আদৌ শেষ হবে কি?

কমিউনিটিতে আরো একটি ডক্টরেট!

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ডক্টরেট ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত কিছুদিন আগে একসঙ্গে দুটি ডক্টরেট নিয়েছেন ডাউনটাউন ম্যানহাটনের একটি মসজিদের বাংলাদেশি সাধারণ সম্পাদক। এর আগেও কমিউনিটির কয়েকজন পরিচিত মুখ এ ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর ‘মানবতার দর্শনে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ’ পেলেন কমিউনিটির পরিচিত মুখ, বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা কণ্ঠশিল্পী সবিতা দাস।

মানবসেবায় নিরলসভাবে সরব থাকায় সবিতা দাসকে এ অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে ‘ইউনাইটেড গ্র্যাজুয়েট কলেজ অ্যান্ড সেমিনারি ইন্টারন্যাশনাল।’ এ প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টান ধর্মীয় উচ্চশিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)