গত ১৩ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ছিলেন নেত্রীর আস্থাভাজনদের একজন। যেজন্য আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও তাকে পদচ্যুত করতে পারেনি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত। তাদের নেত্রী পলাতক। নেত্রীর মাথার ওপর খাঁড়া ঝুলছে প্রায় ২০০ হত্যা মামলা আর হাজার কোটি টাকা পাচারের দায়।
এমন পরিস্থিতিতে ড. সিদ্দিকুর রহমান আর দলের বোঝা টানতে চাইছেন না। জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নেত্রীর কাছে ফোন করে তিনি এই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। কিন্তু নেত্রী তার এই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। দুর্মুখরা বলছে, এখন তো আর মধু নেই। তাই তিনিও আর পদে থাকতে আগ্রহী নন।
মূল্যবোধের অবক্ষয়
পৃথিবীতে কেউই পাপী কিংবা অপরাধী হয়ে জন্মায় না। মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পরিবেশ বা সমাজ ব্যবস্থাই তার আচরণকে প্রভাবিত করে, তাকে ভালো কিংবা খারাপ করে গড়ে তোলে।
একসঙ্গে চলতে গেলে একজন মানুষ খুব সহজেই আর একজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। আর তাই অসৎসঙ্গে পড়ে কেউ কেউ তার নীতি-নৈতিকতাকে, মূল্যবোধকে নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় মানুষের উচ্চাকাক্সক্ষা, উচ্চাভিলাষ তার নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়। অধিক সুখ আর বিলাসী জীবনের আশায় মানুষ বিপথগামী হয়।
প্রসঙ্গটা টানলাম ছোট্ট একটি ঘটনা থেকে। মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার একজন হিসেবে প্রায়শই আমাকে বাস ভ্রমণ করতে হয়। স্টপে ২০ জন যাত্রী হলেও দুই বা তিনজন টিকেট দিয়ে ভ্রমণ করেন। আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাংলাদেশিদের টিকেট কেটে ভ্রমণের সংখ্যা প্রায় একেবারেই শূন্যের কোঠায়। অন্যান্য কমিউনিটিরও যারা টিকেট কেটে ভ্রমণ করেন, তাদের বয়স প্রায় সবারই ষাটোর্ধ্ব। তার মানে নতুন প্রজন্ম এই টিকেট কাটাকে একেবারেই মূল্যহীন মনে করছে।
এই অবক্ষয়ের চিত্র আমাদের প্রবাসী কমিউনিটিতেও ছায়াপাত করছে। এর প্রতিচ্ছবি আমরা দেখছি নতুন প্রজন্মের মধ্যে। তারা তাদের গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখছে ‘দূর শালা’, ‘হালার পো হালা’, ‘তোর বাপ’ ইত্যাদি ইত্যাদি-এটা নিশ্চয়ই আমাদের মূল্যবোধের পরিচয় বহন করে না।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মানুষকে ন্যায়ের পথে, কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। অন্যায়-অবিচার করা থেকে মানুষকে দূরে রাখে। এটা মানতেই হবে, আমাদের চলনে, স্বভাবে, মানসিকতায় চরম অবক্ষয় ঘটেছে। আমাদের শেকড় আর আমাদের সনাতন সংস্কৃতি হারিয়ে গেলে আমরাও হারিয়ে যাবো। তাই বলা যায়, এই সংকট উত্তরণে আমাদের পরিবার, সমাজ একযোগে ভূমিকা পালন করা উচিত।
রাজনীতি মানে কি সত্যকে উপেক্ষা করা!
বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন হয়েছে। হাজার খানেক শহিদ, কয়েকশ চক্ষুহীন, কয়েক হাজার আহত ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখি সরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ এবং আরো অনেকে দেশ থেকে পাচার করেছে হাজার কোটি টাকা। এসব দেখেও প্রবাসের কিছু সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী দলকানার মতো আচরণ করছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করছেন। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছেন সব সময়।
তাদের কাছে ছাত্র-জনতার এই আত্মত্যাগ, ট্যাক্সপেয়ারদের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার দলান্ধটার কারণে অর্থহীন। তাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন জাগে রাজনীতি মানে কি দলান্ধতা? রাজনীতি মানে কি সত্যকে উপেক্ষা করা?
স্টিকওয়ালা সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য
একসময় সাংবাদিক বলতে প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরতদের বোঝাতো। এখনো প্রিন্ট জার্নালিজম সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে অনেকে বলেন, প্রিন্ট সাংবাদিকতা এখন ক্রমেই ঔজ্জ্বল্য হারাচ্ছে। প্রিন্ট জার্নালিজম মরছে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এই বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্বে জর্জরিত। উৎপাদানের উচ্চ খরচ, কম সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা এবং অন্যান্য সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বৃদ্ধি প্রিন্ট সাংবাদিকতার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
তারপর রেডিও, টেলিভিশন চালু হলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকতা চালু হলো। এলো সম্প্রচার/টিভি/রেডিও সাংবাদিকতার যুগ। এটি সেই সাংবাদিকতার বিভাগগুলোর মধ্যে একটি যা টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমে সংবাদ সম্প্রচারের সঙ্গে কাজ করে। এই উভয় মাধ্যমই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। প্রিন্ট জার্নালিজমের চেয়ে টিভি সাংবাদিকতা বেশি জনপ্রিয় হওয়ার একটি কারণ হলো-এটি কেবল চোখের জন্য নয়, কানের জন্যও সংবাদ সরবরাহ করে। টিভি সাংবাদিকতার মাধ্যমে দর্শকদের দেওয়া অডিও-ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা তাদের সম্পৃক্ত করে। এই সাংবাদিকতার বড় বাজেট এবং সংস্থান রয়েছে, যা সাংবাদিকদের উচ্চমানের সামগ্রী তৈরি করতে সহায়তা করে। টিভির বিপরীতে, রেডিও শ্রোতাদের সঙ্গে অনেক মিথস্ক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করে। যাই হোক, এটি সাধারণত সীমিত সংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে সংগ্রহ করে কারণ সম্প্রচারটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। রেডিও চ্যানেলের সাধারণত টিভি চ্যানেলের তুলনায় কম বাজেট থাকে, যার ফলে কম গল্প কভার করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
তারপর অনলাইন পত্রিকা চালু হলে আরো একটি গ্রুপ হলো, যাদের পরিচয় অনলাইন সাংবাদিক। সাইবার সাংবাদিকতা, অনলাইন-ডিজিটাল সাংবাদিকতা নামেও যা পরিচিত।
এখন প্রবাসে চালু হয়েছে সাংবাদিকতার আরেক ধারা। অনেকে বলেন, এর নাম স্টিক সাংবাদিকতা। এরা পকেটে একটি সেলফোন আর হাতে একটি স্টিক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সাংবাদিকতার কোনো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। অনুষ্ঠান আয়োজকদের সঙ্গে একটা অর্থের চুক্তি করে তারা স্টিক আর সেলফোন দিয়ে তাৎক্ষণিক লাইভ সম্প্রচার করে। এতে অনুষ্ঠান আয়োজকরাও তুষ্ট হন।
গত সপ্তাহে ব্রঙ্কসে একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ছিল। একজন ‘স্টিক সাংবাদিককে’ দাওয়াত দিলে দাম দরে মেলেনি বলে তিনি আর আসেননি। আয়োজকরা দুঃখ করে জানান, ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের এখন প্রমোশনের সুযোগ কম। পকেটমানি না দিলে বেশির ভাগ মিডিয়ার লোকই আসতে চান না। তা স্টিক সাংবাদিক বা অন্য যে কোনো লেভেলেরই মিডিয়া হোক না কেন!