ইতিহাস পাল্টানোর অধিকার নেই অনির্বাচিত সরকারের


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 23-10-2024

ইতিহাস পাল্টানোর অধিকার নেই অনির্বাচিত সরকারের

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ বাংলাদেশ সৃষ্টির এবং বাঁক বদলের কিছু মাইলফলক দিনবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু এখনো অসাংবিধানিক। দেশে কিন্তু সংবিধান এখনো বহাল আছে। মানলাম, এই সরকার একটি সফল বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অরাজনৈতিক এই সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জাতিকে বিভক্ত করবে, সেটি মেনে নেওয়া যায় না। সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসা এই সরকারকে মূলত অবাধ, সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার প্রধান কাজ হলো নানা কারণে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে জাতিকে আবারও দুই ধারায় বিভক্ত করবে, তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করবে দেশ-বিদেশে।

৭ মার্চ ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, প্রেক্ষাপট। সেই দিনের রমনা রেসকোর্সের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতি দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হয়তো এই প্রজন্মের কিছু বিভ্রান্ত যুবকের কাছে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম.. গুরুত্ব বহন করে না। ঐতিহাসিক সেই ভাষণকে কিন্তু জাতিসংঘ গুরুত্ব দিয়েছে। ৭ মার্চকে গুরুত্বহীন করার অর্থ হলো ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরকে গুরুত্বহীন করা। ১৫ আগস্ট কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত জাতির জনককে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। জাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি দিনকে গুরুত্বহীন করার সিদ্ধান্তকে আমি প্রত্যাখ্যান করছি। দাবি জানাচ্ছি, সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করার।

আমি এই বিষয়ে একজন যুবক উপদেষ্টার মিডিয়া সাক্ষাৎকার শুনেছি। তার কথা সংবিধানবিরোধী। সংবিধান স্বীকৃত কোনো কথা বলার অধিকার কারো নেই। বাংলাদেশের সংবিধান কেবল নির্বাচিত জাতীয় সংসদ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনে পাল্টাতে পারে। সময় পাল্টালে হয়তো হয়তো উপদেষ্টাকে এই বক্তব্যের জন্য মূল্য দিতে হবে।

বাংলাদেশের নতুন সরকার কিন্তু অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জুলাই-আগস্ট সংঘটিত গণহত্যার সঠিক বিচার, আহতদের শুশ্রূষা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো বিষয় নিয়ে সংকটে আছে। মহাসড়কগুলোতে যানজট, দেশব্যাপী সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ম্য, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওয়ায আনা যখন বিশাল চ্যালেঞ্জ, তখন মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি সরকারের জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করবে। সরকারের এখন মূললক্ষ্য হওয়া উচিত প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি। পুলিশ এবং বেসামরিক প্রশাসন এখনো নড়বড়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত, দ্বিধাগ্রস্ত। 

সেনা বাহিনীতেও অস্থিরতার ইঙ্গিত মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢালাও পরিবর্তন কাক্সিক্ষত নয়। আর অনেক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে পড়েও না। 

সরকার এখনো দুর্নীতি দমন সংস্থা, নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করেনি। স্থানীয় সরকারগুলো নিষ্ক্রিয় আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রণীত নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট আইকনকে দেশের মাটিতে খেলে অবসর নেওয়ার নিরাপত্তা দিতে পারছে না সরকার। এহেন অবস্থায় কেন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ কিন্তু স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী। এখনো কিন্তু ৭ মার্চ দেখা জানা অনেক মানুষ দেশে প্রবাসে রয়েছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত কিন্তু সরকারে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। আবারও দাবি জানাচ্ছি, কিছু দিন অস্বীকার করার সরকারি সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করার।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)