আমেরিকা প্রবাসীদের সহায়তায় গত ২৪ বছরে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ১৩ সহস্রাধিক শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীর উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্খা পূরণে অসাধারণ ভূমিকা পালনরত ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’র তহবিল সংগ্রহের বার্ষিক পুনর্মিলনী সভা গত ১৩ অক্টোবর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের স্পন্সরকারীসহ কম্যুনিটির বিশিষ্টজনেরা মানবতার কল্যাণে নিরন্তরভাবে কর্মরত ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’র পাশে থাকার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।
নিউইয়র্কভিত্তিক এই অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি বাংলাদেশের বাগেরহাট, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, দিনাজপুর, ফেনী, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, মাগুরা, মৌলভীবাজার, মুন্সিগঞ্জ, নরাইল, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট জেলা এবং সাভার উপজেলায় কাজ করছে।
২৫৬ ব্যক্তিসহ ৩০টি কর্পোরেশন থেকে পাওয়া অর্থে ঝরে পড়ার আশঙ্কায়য় থাকা মেধাবি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে অবদান রাখছে এই সংস্থাটি। জানা গেছে, দৈনিক ৪০ সেন্ট অর্থাৎ মাসে ১১.২৫ ডলার তথা বার্ষিক ১৩৫ ডলার করে দিতে হচ্ছে হাই স্কুল পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য। আর কলেজ-ভার্সিটির (মেডিকেল, প্রকৌশল, কারিগরি) শিক্ষার্থীর জন্য লাগছে বার্ষিক ৩১০ ডলার করে। সভামঞ্চে বড় স্ক্রিনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা তুলে ধরা হয়। দ্য অপ্টিমিস্টস’র সহযোগিতায় কীভাবে তারা স্বপ্নের জীবনের পথে এগোচ্ছেন তা বিবৃত হয় ভিডিওতে ধারণকৃত বক্তব্যে এবং সকলেই সংস্থাটির কর্মকতাদের মাধ্যমে স্পন্সরকারিদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে অসহায় মানুষের ভাগ্য এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মরত সংস্থাগুলোর অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশে এনজিও ব্যুরো থেকে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’ নিবন্ধিত হয়েছে। আরো উল্লেখ্য, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানসিক উন্নতির কথা বিবেচনা করে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৪ বছরের ‘চাইল্ড স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম’ এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যাললে ৪ বছরের ‘স্পেশাল স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় নগদ অর্থ-সহায়তা দিয়ে আসছে।
এ অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বিশিষ্ট সমাজকর্মী সৈয়দ জাকি হোসেন বলেন, বিপুল অর্থ-বিত্তের অধিকারি হলেই মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়া যায় না, এজন্য দরকার উদারচিত্ত, ধৈর্য-ধারণ এবং মানবিকতায় আত্মনিয়োগের অভিজ্ঞতা। টাকা থাকলেই চেক ইস্যু করা যায়। কিন্তু সেই টাকা কীভাবে কী খাতে ব্যয় হবে তা নির্ণয়ে মুন্সিয়ানার প্রয়োজন। বিশেষ করে মানবতার কল্যাণে যারা আগ্রহী তাদের জন্য বিচক্ষণতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিউইয়র্ক অঞ্চলের খ্যাতনামা মানবহিতৈষী সৈয়দ জাকি মাদার তেরেসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, একজন সাধারণ মানুষ হয়েও সারাবিশ্বে মানবতার কাজে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলেন।
সংস্থাটির কাজের প্রশংসা করে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান যোহরান মামদানি বলেন, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত দ্য অপ্টিমিস্টস’র সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি। এ সময় তিনি গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানান। স্টেট অ্যাসেম্বলির পক্ষ থেকে এই সংস্থার অন্যতম সদস্য তারেক আলমকে বিশেষ সম্মাননা-স্মারক প্রদান করেন যোহরান মামদানি।
দ্য অপ্টিমিস্টস’র নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাতেমা উদ্দিন রুমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান মিনহাজ আহমেদ সাম্মু। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম এবং প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকউদ্দিন চৌধুরী রানা, অতিরিক্ত প্রধান উপদেষ্টা শামীম আহমেদ, প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটর মাহদী-উজ-জামান, মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুবে খোদা, কোষাধ্যক্ষ আমিন মেহেদী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী, পরিচালনা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট শাহেদুল ইসলাম প্রমুখ অতিথি ও স্পন্সরদেকে স্বাগত জানান।
আমেরিকা প্রবাসীদের উদ্যোগে গত তিন দশকে মানবিক কল্যাণমূলক এমন অনেক সংস্থার আবির্ভাব ঘটলেও পরবর্তীতে সেগুলোর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’ হচ্ছে একেবারেই ব্যতিক্রম। সারাবছরের কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনসহ স্পন্সরকারীদের শিক্ষার্থীর সাথে পরিচয় করিয়েও দেওয়া হয় ভার্চুয়ালে অথবা বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর নিতেও সহায়তা দেওয়া হয়। আর্থিক আয়-ব্যয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকায় ক্রমান্বয়ে স্পন্সরকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।