বাংলাদেশকে নতুন করে দেখা....


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 30-10-2024

বাংলাদেশকে নতুন করে দেখা....

আগেই বলেছি, এবারের চার সপ্তাহের সফরে অন্যতম উদ্দেশ ছিল ফরিদপুরে মায়ের নামে থাকা পৈতৃক বাড়ি : ‘ইফ্ফাত মঞ্জিল’ ডেভেলপারের মাধ্যমে ‘ইফ্ফাত গার্ডেন’ নির্মাণকাজের সূচনা। রিফাতকে সঙ্গে করে এক শনিবার সকালে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর পৌঁছে প্রতিবেশী বাল্যবন্ধু তসলিমের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করে কাজের সূচনা করলাম। ইনশাআল্লাহ ‘ইফ্ফাত গার্ডেন’ ফরিদপুর শহরে মাথা তুলবে। আমাদের ছেলেমেয়েদের দাদা-নানার বাসায় থাকার সৌভাগ্য হবে। শৈশব-কৈশোরের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে বাড়িটি ঘিরে। ফরিদপুরে বাস করা বড় ভাইয়ের ছোট মেয়ে স্নিগ্ধার শ্বশুরবাড়িতে সময় কাটিয়ে ওইদিন বিকালে ফিরে আসি.. পদ্মা সেতু নির্মাণের পথ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের সব শহরের যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিক হলেও ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত সড়ক এখনো অবিন্যস্ত। দুঃখ লাগলো ফরিদপুর শহরের চৌকষ বাসিন্দারা কেন মেনে নিচ্ছে। আমরা পদ্মা পেরিয়ে বিকালেই হানিফ ফ্লাইওভার পৌঁছলেও ঢাকা শহরের অসহনীয় যানজট পেরিয়ে ধানমন্ডি হয়ে উত্তরায় আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। বলা যায়, জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময়ে কিছুদিন ছাত্র বন্ধুদের ব্যতিক্রমধর্মী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কারণে যানজট মুক্ত হলেও আবারও পরিস্থিতি আগের মতো হয়ে গেছে।

যানজটের বিড়ম্বনায় আরো পড়েছি একদিন উত্তরা থেকে বনানীতে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লাগায়। সাধারণত জিটিসিএল সহকর্মীদের সঙ্গে আগারগাঁও অফিসে পৌঁছে সেখান থেকে গ্যাস সেক্টরের হালহকিকত জেনেছি। তবে যাতায়াত সুবিধা এবং মেট্রো পরিচালনা পরিস্থিতি দেখার জন্য মেট্রোকার্ড কিনে কয়েক দিন উত্তরা উত্তর থেকে কাওরান বাজার এবং সচিবালয় স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করেছি। কাওরান বাজার পৌঁছে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশের প্রাচীনতম এবং সর্ববৃহৎ কোম্পানি তিতাস গ্যাসের পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জগুলো অবহিত হয়েছি। পেট্রোবাংলার কার্যালয়ে চেয়ারম্যান, পরিচালকবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে মূলত এলএনজি আমদানি, গভীর সাগরে গ্যা- তেল অনুসন্ধান বিষয় এবং ২০২৫ নাগাদ ৫০ কূপখনন এবং ২০২৮ নাগাদ ১০০ কূপখনন বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছি। পাশাপাশি রেগুলেটরি কমিশন চেয়ারম্যানের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছি।

সচিবালয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিব, জ্বালানি সচিব, বিদ্যুৎ সচিব এবং পর্যটন সচিবের সঙ্গে কথা বলে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছে, সচিবালয়ে কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ততা নেই। সবাই যেন অজানা আতঙ্কে আছে।

আমি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সবার উপস্থিতিতে গ্যাস সরবরাহ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট আমার অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। দিনক্ষণ স্থির হলেও সুযোগ হয়নি কোনো অজানা কারণে। যাক সেই প্রসঙ্গ আমি আমার প্রতিবেদন চেয়ারম্যান বার্ক এবং জ্বালানি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিবকে দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ হলে বাংলাদেশ জ্বালানি সেক্টর উপকৃত হতো।

আমরা যমুনা রেলসেতু বরাবরে নির্মিত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম জিটিসিএলের প্রকল্প পরিদর্শকের সঙ্গে। জ্বালানি প্রযুক্তিতে নির্মাণাধীন রেলসেতুতে চীনের ঠিকাদার আধুনিক প্রযুক্তিতে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করছে। আমি নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছি। জিটিসিএলের উচিত হবে এই কাজ শেষ হলে মূল যমুনা সেতু বরাবরে চালু থাকা গ্যাস পাইপলাইনটি শুধু বিকল্প হিসেবে যখন প্রয়োজন ব্যবহার করা। আমরা একই দিনে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি অফিসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড়ে চালু থাকা এনডব্লিুউ পিজিসিএলের বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করি। ফিরতি পথে অবশ্যই প্রকল্প কর্মকর্তাদের উপাদেয় মধ্যাহ্নভোজ এবং উপহার হিসেবে পাওয়া টাঙ্গাইলের বিখ্যাত মিষ্টির উল্লেখ করতে হয়, আমার মনে হয় গ্যাস পাইপলাইনসহ যমুনা রেলসেতু চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে। যমুনা নদীতে নৌকাযোগে পাইপলাইন পরিদর্শনের সময় কিছুটা আবেগাক্রান্ত ছিলাম।

অনেক দিন থেকেই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রিয় বন্ধু ডক্টর সামসুল আলম আমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছিলেন ওনাদের আশুলিয়া গ্রিন ক্যাম্পাস পরিদর্শনের। উনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংগঠনের উপদেষ্টা। ওনার সঙ্গে কিছু বিষয়ে আমার মতের অমিল থাকলেও বিতর্ক করে মজা পাই। নির্দিষ্ট দিনে সকালে গ্যাস সেক্টরের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে উত্তরায় প্রাতরাশ সভায় মিলিত হয়ে ওদের একজনকে সঙ্গী করে আশুলিয়া ভ্রমণ করি। শামসুল আলম ভাইয়ের সঙ্গে নানা বচসার পর জিটিসিএলের আশুলিয়া সিজিএস পরিদর্শন করি। এই সিজিএসের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ আশুলিয়া অঞ্চল এবং সাভার ইপিজেডে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। সিজিএসের রেকর্ড থেকে গ্যাস সংকট বিষয়টি সম্যকভাবে উপলব্ধি করি। দেখলাম, ওখানে জিটিসিএল একটি আধুনিক সিজিএস স্থাপন করছে। আমরা সিজিএস প্রাঙ্গণে কয়েকটি আমের চারা লাগাই।

ঢাকার শিল্পাঞ্চলসমূহ বিশেষত গাজীপুর, টঙ্গী, আশুলিয়া, সাভার অঞ্চলের শিল্পকারখানাগুলোর গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য গ্যাস ব্যবহার কৌশল পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করি। (চলবে)


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)