অবশেষে দেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠনে প্রজ্ঞাপন জারির খবর পেয়ে ধারণা করা হচ্ছে সামনেই চলে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এতে করে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।
নির্বাচন নিয়ে কেমন ছিল পরিস্থিতি
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। কিন্তু সে-ই সংলাপেও নির্বাচন প্রশ্নে দুই যুগের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতের ‘দুই ধরনের অবস্থান’ ফুটে উঠে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার পায়। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করলেও জামায়াত বলেছে, ‘নির্বাচনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার’। কেননা বিএনপি নেতারা মনে করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতো দেরিতে হবে ততই নানান ধরনের যড়যন্ত্র ও গুঞ্জন ডালপালা মেলবে। কিন্তু দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াত তার নিজস্ব পথে হাঁটতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা ঘোলাটে পরিবেশ লক্ষ্য করছিল বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে সাধারণ জনগণ পড়ে যায় বেকায়দায়। অন্য দিকে এসব প্রশ্নের সুরাহা যখন হচ্ছে না তখন সেই পরিস্থিতিতে মাঠে চলে আসে আরেকটি ইস্যু।
সেটি হচ্ছে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে সরাতে হবে। কিন্তু এমন ইস্যুটিতেও জামায়াত বাধ সাধে। ফলে সঙ্কট দেখা দেয় আসলে কি হতে যাচ্ছে? পরিস্থিতি যখন বেশ উত্তপ্ত অবস্থার দিকে যাচ্ছিল তখন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের প্রশ্নে দেশে প্রধান দল বিএনপি শক্তভাবে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিলে একটি পক্ষ হোঁচট খায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে সেটি ফুটে উঠে। এমন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি বেশ কঠিন হয়ে পড়ে যায়। মাঠ ঘুরে দেখা যায় রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের প্রশ্নে এখন উচ্চবাচ্য কমে গেছে। কিন্তু দেশের কখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে? না হবে না এমন এখন প্রশ্ন দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছিল। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনেই। এ নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাচ্ছে।
অন্যদিকে স্পষ্ট হয়ে বিএনপিসহ দলটির সাথে যারা এতোদিন ধরে একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে আগানোর দাবি জানাচ্ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন সেপথে হাঁটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের কখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না হবে না এমন এখন প্রশ্ন দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছিল। আর এতে করে মাঠে নানান ধরনের গুঞ্জন বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের প্রশ্নে দেশে একধরনের রাজনৈতক উত্তেজনা দেখা দেয়। মেলে নানান ধরনের গুজবের ডাল-পালা। কিন্তু সেই গুজবে এখন পানি ঢেলে দেয়া হলো। কেননা গত ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানালেন আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সই হওয়ার পর মঙ্গলবার অথবা ৩০ অক্টোবর বুধবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তিনি জানান ভোটার তালিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোই ছিল ভুয়া। তাই ভোটার তালিকা নিয়ে তেমন কথা হয়নি। এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুন্দর নির্বাচন দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামতই একটু ভিন্ন ধরনের। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠনে প্রজ্ঞাপন জারির খবরের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি অপসারণ নিয়ে বিএনপি’র শক্ত অবস্থানটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসলে বিএনপি’র পরিষ্কার গঠনমূলক পরামর্শই মানছে। আর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকরা।