নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে সিস্টেমে এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকারী স্ক্যানারের এক মাসব্যাপী পরীক্ষায় কোনো আগ্নেয়াস্ত্র শনাক্ত করতে পারেনি। নতুন প্রকাশিত পুলিশ ডাটা অনুযায়ী, প্রায় ৩ হাজার অনুসন্ধানের মধ্যে স্ক্যানারগুলো ১১৮টির বেশি মিথ্যা পজিটিভ সংকেত দেয়, যদিও ১২টি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ছুরিগুলোর মধ্যে কিছু বৈধ পকেট ছুরি বা টুল হতে পারে, তবে এগুলো অবৈধ কিনা তা নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি।
মেয়র এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে সিস্টেমে সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগের ঘোষণা দেন। এটি মূলত এভলভ কোম্পানির তৈরি পোর্টেবল স্ক্যানারগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা ধাতব ডিটেক্টরের মতো দেখতে হলেও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অস্ত্র শনাক্ত করার দাবি করে। যদিও নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে সিস্টেমে সহিংস অপরাধের ঘটনা খুব কম ঘটে, তবুও উচ্চ-প্রোফাইল বন্দুক হামলার কিছু ঘটনার পর এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়। মেয়র অ্যাডামস জানান, এই স্ক্যানারগুলো শহরের হাসপাতাল এবং স্কুলেও স্থাপন করা হবে।
এনওয়াইপিডি জানিয়েছে, ৩০ দিনের পরীক্ষায় ২০টি স্টেশনে মোট ২ হাজার ৭৪৯টি স্ক্যানিং সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮টি মিথ্যা সংকেত পাওয়া গেছে, যার হার ৪.২৯ শতাংশ। তবে স্ক্যানিংয়ের সময়কাল, কতজন কর্মকর্তা ডিভাইসগুলো পরিচালনা করেছেন এবং কতজন যাত্রী অনুসন্ধান প্রত্যাখ্যান করেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি।
এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন নাগরিক স্বাধীনতা সংগঠন এবং যাত্রী। তারা বলছে, এই স্ক্যানারগুলো দিয়ে কয়েক মিলিয়ন যাত্রীকে প্রতিদিন স্ক্যান করা অবাস্তব, এবং এটি সম্ভবত সংবিধানের পরিপন্থী। এছাড়া প্রযুক্তির সঠিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
লিগ্যাল এইড সোসাইটি এই পরীক্ষাটিকে ‘অবজেক্টিভভাবে ব্যর্থ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলেছে, প্রশাসন এই ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি করেছে কারণ স্ক্যানার কোনো আগ্নেয়াস্ত্র শনাক্ত করতে পারেনি এবং ১১৮টি মিথ্যা অ্যালার্ম দিয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এভলভ কোম্পানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মার্কেটিং প্র্যাকটিস নিয়ে ফেডারেল তদন্ত চলছে এবং বিনিয়োগকারীদের দ্বারা দায়ের করা একটি ক্লাস-অ্যাকশন মামলায় কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা প্রযুক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছে। এভলভের দাবি ছিল, তাদের স্ক্যানার অস্ত্র সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন সমালোচনা ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এনওয়াইপিডি জানিয়েছে যে তারা এখনো এভলভের সঙ্গে কোনো স্থায়ী চুক্তিতে আবদ্ধ নয় এবং এই পরীক্ষার জন্য কোনো অর্থ প্রদান করা হয়নি। পুলিশ বিভাগ বলেছে, তারা এখনো এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা মূল্যায়ণ করছে। তবে লিগ্যাল এইড সোসাইটি এবং অন্যান্য নাগরিক স্বাধীনতা সংগঠনগুলো এই প্রযুক্তি স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি কার্যকর নয় এবং যাত্রীদের গোপনীয়তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এদিকে নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টিগেশন এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত করছে।
নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে সিস্টেমে এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকারী স্ক্যানারগুলোর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম মিশ্র ফলাফল প্রদর্শন করেছে। একদিকে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র শনাক্ত না হওয়া এবং প্রচুর মিথ্যা সংকেত দেখা দেওয়ায় প্রযুক্তিটির কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এই উদ্যোগ সহিংসতা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল, বাস্তবায়নের জটিলতা, গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা এবং প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা প্রশাসনের পরিকল্পনাকে ব্যর্থতার মুখে ফেলেছে। লিগ্যাল এইড সোসাইটি এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো এই প্রযুক্তি স্থায়ীভাবে বাতিল করার দাবি জানিয়েছে এবং এটি নিয়ে চলমান তদন্তে এর ভবিষ্যৎ আরো স্পষ্ট হবে।