শাপলা চত্বরে গণহত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 06-11-2024

শাপলা চত্বরে গণহত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি

সেই ভোর থেকেই সব রাস্তা যেন গিয়ে মিশেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মুহূর্তে যেন ভরে ওঠে গোটা সোহরাওয়ার্দী। তিল ধারনের ঠাঁই নেই। মঙ্গলবার। অফিস ডে। কিন্তু এদিনেও যেদিক চোখ যায় শুধু সাদা আর সাদা। সাদা টুপি আর সাদা পাঞ্জাবী। এ এক অন্যরকম দৃশ্য! মতিঝিলে ২০১৩-এর পর ওলামা মাশায়েখদের এত বিশাল জমায়েত আর কখনও দেখা গেছে বলে মনে হয় না। 

এদিন ইসলামের শীর্ষ আলেমগণ ডাক দিয়েছিলেন মহাসমাবেশের জন্য তৌহিদী জনতাকে। সে ডাকে সারা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা হাজির। ছোট ছোট মিছিল করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান তারা। যেখানে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ছিলেন মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ দেশ বরেণ্য অলেম ও মুরব্বীগণ। 

ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে দাওয়াত ও তাবলীগ, মাদারেসে ক্বওমিয়া এবং দ্বীনের হেফাজতের লক্ষ্যে এই ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় মুসল্লিদের পদচারণায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়। মুসল্লিরা বিভিন্ন বিছানা নিয়ে গাছের নীচে রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। 

সম্মেলনে যে ৯ দফা দাবি দেয়া হয় তার মধ্যে ২০১৩ সনে মতিঝিল শাপলা চত্তরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের জোর দাবি জানানো হয়। 

যা বললেন আল্লামা বাবুনগরী 

মহাসম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব। ওলামায়ে কেরামের দাওয়াতের মাধ্যমেই আজ পুরো বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে কুরআন ও সুন্নাহর সহীহ বাণী পৌঁছেছে। আলোকিত হয়েছে সারা বিশ্ব। দাওয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে খালেকের সাথে মাখলুকের তায়াল্লুক সৃষ্টি করে দেয়া। আত্মভোলা মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেয়া। এই দায়িত্ব আমার আপনার এবং উম্মতে মুহাম্মদী সকলের। এই দায়িত্ব পালনের জন্যই মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) তাবলীগের কাজ শুরু করেছিলেন। দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বী মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসূল (সা.), নবুওয়ত, সাহাবায়ে কেরাম এবং শরয়ী মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যগুলো কুরআন-সুন্নাহবিরোধী, যা মেনে নেয়া যায় না। নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিতর্কিত মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দিলে এই সরকারকেও পালিয়ে যেতে হবে। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী হেফাজত আমিরের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। 

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা খলিল আহমাদ কাসেমী। এতে ৯ দফা ঘোষণা পাঠ করেন বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

হেফাজত আমির বলেন, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাগত বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতা এবং অনেক বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও জুমহুরের মুত্তাফাকা তথা ঐক্যমতসমর্থিত মাসআলা ও মাযহাবের খেলাফ করার কারণে শরীয়ত মতে মাওলানা সাদের এতা'য়াত জায়েয নেই। বিতর্কিত মাওলানা সাদের কারণে ছাত্রজনতা ও আলেম ওলামাদের কুরবানীর বদৌলতে অর্জিত স্বাধীন নতুন এই বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক এবং অন্তবর্তীকালীন সরকার বেকায়দায় পড়–ক তা’ আমরা চাই না। আমি আশা করি সার্বিক বিবেচনায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলাম, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন। মাওলানা সাদের এ সব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে তিনি চরম বিতর্কিত হয়েছেন। বিতর্কিত মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না। আলেমরা দায়িত্ব নিয়ে তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজের বক্তব্য সংশোধন করতে রাজি হননি। আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, দাওয়াতে তাবলিগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে। যারা মাওলানা সাআদের বিরোধীতাকারী আলেমদেরকে দেওবন্দি, হেফাজতি বলছে তারা গোমরাহিতে আছে। হযরতজ্বী ইলিয়াছ (রহ.) বলে গেছেন, যদি তাবলীগ থেকে ইলম ও জিকির উঠে যায়, তাহলে দাওয়াতে তাবলিগের কাজে গোমরাহি ডুকে যাবে। অতএব সরকারের প্রতি আমার দাবি হলো, যতদিন মাওলানা সাআদ তার গোমরাহি বক্তব্য থেকে তাওবা না করবে, ততদিন তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া যাবে না। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা আলেমদের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত হবে। কাকরাইল মারকাজের কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামে জিম্মাদারীতে চালু রাখতে হবে।

তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি না দেয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেবো না। তাদের সব ষড়যন্ত্র যে কোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেবো। সাদপন্থিদের আর টঙ্গীতে আলাদা ইজতেমা করতে দেওয়া হবে না’ দেশে ইজতেমা একবার হবে, দুবার নয়। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক ওলামায়ে কেরাম শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। আওয়ামী জালিম সরকারের অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলবো কীসের পরামর্শ, এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করবো। সরকারকেও আলেমদের সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো পূর্ববর্তী সরকারের মতোই তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।

মহাসম্মেলনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর যৌথ সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা শেখ আহমাদ, মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক, আল্লামা সাজিদুর রহমান প্রমুখ। 

৯ দফা দাবি 

সম্মেলনে ৯ দফা ঘোষণায় বলা হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যার দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে। ২০১৮ সালের টঙ্গী ময়দানের সাদপন্থীদের নৃশংস হামলার বিচার করতে হবে, কোনো ভাবেই বিতর্কিত মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া যাবে না। আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে, অর্থাৎ ৩১ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে এবং অভিশপ্ত কাদিয়ানীদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)