গত সপ্তাহে একজন ইভিকশান লইয়ারের চেম্বারে বসেছিলাম। এমন সময় একজন বাংলাদেশি ভদ্রলোক এলেন। বয়স ৩০-৩৫-এর কোটায়। তিনি একটু হেলপ চান। জানা গেল, তার নিজস্ব একটা প্রাইভেট হাউজ আছে। কয়েক বছর আগে কিনেছেন। বেসমেন্ট ভাড়া দেন। ১ম ফ্লোরে তার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং দ্বিতীয় ফ্লোরে তিনি নিজে থাকেন। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। একসঙ্গেই খাওয়া-দাওয়া করেন। কোনো ভাড়া নেন না তাদের কাছ থেকে। তার এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দিয়েছে তিনি যদি তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ভাড়ার ব্যাপারে ডিফল্টার দেখিয়ে কোর্টে একটি মামলা করেন, আর তারা যদি এই মামলার কাগজ নিয়ে সিটিতে দেখান, তাহলে ওয়ান শট ডিল বাবদ তিনি একটা ভালো অঙ্ক পেতে পারেন সিটির কাছ থেকে। তিনি এই মামলার জন্য উকিলের সন্ধানে এখানে এসেছেন।
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, তিনি তো আপনার ভাড়াটিয়া নন, আত্মীয়। অহেতুক তাদের নিয়ে কেন মিথ্যা মামলা রুজু করবেন। তিনি বলেন, সিটির টাকা অনেকেই অনেকভাবে নিচ্ছে। তাহলে আমি নিলে দোষের কি আছে! আমি তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম।
নিউইয়র্কে সাংবাদিকতা করবেন জায়েদ খান!
বাংলাদেশের চিত্রনায়ক জায়েদ খান। সিনেমা রেখে এবার সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছেন তিনি। জানা গেছে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদপত্র ঠিকানায় তিনি যোগ দিয়েছেন। জানা যায়, পত্রিকাটিতে প্রথমবারের মতো উপস্থাপক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন তিনি। পত্রিকাটির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেলিব্রিটিদের নিয়ে বিনোদনমূলত একটি টকশো উপস্থাপনা করবেন জায়েদ। খুব শিগগির অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হবে।
সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জায়েদ খান জানান, প্রথম কোনো কিছু সব সময়ই স্পেশাল। প্রথমবার দর্শক আমাকে উপস্থাপক হিসেবে দেখবেন। আমি খুব এক্সাইটেড এবং নার্ভাস। দর্শক কীভাবে আমাকে গ্রহণ করে সেটি দেখার অপেক্ষায়। দেশের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি তুলে ধরবো অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাইয়ে নিউইয়র্কে আসেন জায়েদ খান। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। আসামিদের তালিকায় অন্যদের সঙ্গে তার নামও রয়েছে। এরপর আর তিনি দেশে ফিরে যাননি।
নিউইয়র্কে ‘হলিডে নস্টালজিয়া ট্রেন’ চালু
ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে নিউইয়র্কে চালু হয়েছে হলিডে নস্টালজিয়া ট্রেন। ১২০ বছর আগে নিউইয়র্কে চালু এই ট্রেনে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন। এটা চলবে পুরো ডিসেম্বর মাস। প্রতি রোববার এই ট্রেনটি সেকেন্ড অ্যাভিনিউয়ের হিউস্টন স্ট্রিটের আপটাউন এফ লাইন এবং ৯৬ স্ট্রিট এবং সেকেন্ড অ্যাভিনিউ কিউ লাইন থেকে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর রওয়ানা দেবে। নিয়মিত মেট্রোকার্ড এবং অমনি কার্ড দিয়ে আগের নিয়মেই এই বিশেষ ট্রেনটি ব্যবহারের সুযোগ মিলবে।
সাংবাদিকের বাম্পার ফলন!
সাপ্তাহিক আড্ডায় বসেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। একজন জানতে চাইলেন-নিউইয়র্কে নাকি সাংবাদিকের বাম্পার ফলন হয়েছে! বললাম,‘বাম্পার ফলন’ কথাটি নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কারণ ফসলের বাম্পার ফলন হয়। সাংবাদিক তো মানুষ। মানুষের কি কখনো বাম্পার ফলন হয় নাকি! যদিও আড্ডায় আমার এই কথা কোনো গুরুত্ব পায় না। তার বক্তব্য নিউইয়র্কে একহালির বেশি প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে ১৪০টির বেশি প্রেসকার্ড ইস্যু হয়, এটা সাংবাদিকদের বাম্পার ফলন না তো কি! জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় এই সাংবাদিকের পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আড্ডায় বন্ধুদের মুখে এসব শুনে মাথাটা যেন কেমন আউলা ঝাউলা হয়ে যায়। তারপর সাংবাদিকের বাম্পার ফলন কথাটি ইচ্ছে না থাকলেও মেনে না নিয়ে আর উপায় থাকে না।
নিউইয়র্ক থেকে ১৫-২০টা পত্রিকা প্রকাশিত হয়। হাতেগোনা দু-একটা পত্রিকা ছাড়া বেশির ভাগই কাটপেস্ট বা ঢাকা থেকে পত্রিকা রেডি করে এনে এখানে ছাপা হয়। তাই এখানে বেশি সাংবাদিক একামোডেট করার তেমন সুযোগ নেই। শত শত সাংবাদিক কোথায় কাজ করেন, তাদের সংবাদ কোথায় প্রকাশিত হয় সে প্রশ্নটা থেকেই যায়!
আরো একটা অপ্রস্তুত করার মতো প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন আড্ডার আর এক বন্ধু। বললেন, আপনাদের আব্দুল্লাহ উপন্যাসের সেই লাইনটা মনে আছে? ‘এক ঘরমে দো পির নেহি রাহেগে, যাও বাচ্চা সো রাহো’। জানতে চাইলাম, আড্ডায় কথা হচ্ছিলো নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের নিয়ে। তা এখানে হঠাৎ আবদুল্লাহ উপন্যাসের প্রসঙ্গ কেন!
বন্ধুটি হেসে বললেন, আপনি হয়তো জানেন না, নিউইয়র্কে এখন আবদুল্লাহ উপন্যাসের চরিত্রের মতো এক ঘরমে দো পির রয়েছে। অর্থাৎ এক ঘরে এবং এক ছাদের নিচে এখন একাধিক সাংবাদিক বসবাস করেন। কেউ কেউ স্বামী-স্ত্রী। দু’জনে মিলেই পত্রিকা চালান। একজন সাংবাদিককে দাওয়াত করলে বাইওয়ান গেট ওয়ানের মতো অন্য একজন সাংবাদিককে ফ্রিতে পাওয়া যায়। ব্যাপারটা কেমন মজার না!
মাথাটা এমনিতেই আওলা ঝাওলা ছিল। এসব শোনার পর কানটা যেন কেমন ঝাঁ ঝাঁ করা শুরু করলো। ফলে কাউকে কিছু না বলে আড্ডা থেকে মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে এলাম।
নিউইয়র্ক, ৯ ডিসেম্বর ২৪।