অবশেষে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের দ্বার খুলতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব ইস্যু সম্পাদন করার কথা ছিল তারমধ্যে অন্যতম বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়াও সাংবাদিক সাগর রুনী হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে ইসলামের উপর নরকীয় হত্যাকাণ্ডও রয়েছে। কিন্তু এসব ইস্যুতে কিছুটা নীরব থাকায় সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। অবশেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) ঘোষণা দিলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
উপদেষ্টা গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিং এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে পুনঃতদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে আমি প্রথম থেকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সোচ্চার ছিলাম এবং এখনো রয়েছি। এ বিষয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমবার এবং গত ৪ নভেম্বর বিজিবি সদরদপ্তর পরিদর্শনকালে দ্বিতীয় বার ঘোষণা দেই, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি শুরু থেকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করে আসছি। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের অধিকার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সিভিল সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে সদস্য ৫ জন, ৭ জন, ৯ জনও হতে পারে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা একটু বেশি থাকবে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কী পুনঃতদন্তের দিকে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই আদেশ দিতে পারে আদালত। আর আমরা হলো একটা শুধু প্রেস ইনকোয়ারি করতে পারি। কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পাঁচ কার্যদিবসের সময় আমরা বলব। আগে কমিটি গঠনের জন্য নামগুলো নিতে হবে। আপনারা জানেন এসব কমিটিতে সবাই আসতে চায় না। নাম সংগ্রহে যদি সময় না লাগতো তাহলে অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যেত। নাম পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর আমরা সময়টা বলতে পারব। কাজের পরিধি কী হবে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনার পর বলতে পারব।
বিচারপতি নাকি অন্য কারও নেতৃত্বে কমিটি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যে মোস্ট সিনিয়র থাকবে তার নেতৃত্বেই এই কমিটি হবে। কমিটি না কমিশন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রয়োজন যেটা হবে সেটাই করা হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো বিভ্রান্তি আছে কি না এমন এক প্রশ্নের উপরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘না আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো বিভ্রান্তি নেই। তবে বসার সময় আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বসে তাদের আলাদা মতামতের দরকার হলে আমরা নেব।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত ড. নাসিম আহমেদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।