বেড়ায় যখন ক্ষেত খায়!


হাবিব রহমান , আপডেট করা হয়েছে : 19-12-2024

বেড়ায় যখন ক্ষেত খায়!

বছরে দুই লক্ষ ডলারের বেশি আয় করা এনওয়াইপিডির এক পুলিশ সার্জেন্টকে চুরির অপরাধে গ্রেফতার করেছে নাসাউ কাউন্টি পুলিশ। তিনি গত ৭ ডিসেম্বর লং আইল‍্যান্ডের ভ‍্যালি স্ট্রিমের একটি টার্গেট স্টোর থেকে ৯.১১ ডলার দামের একটি কফ সিরাপ এবং ৪.৯৯ ডলার দামের একটি রিকোলা কফ ড্রপ‍ চুরি করেন। তাকে বিনা বেতনে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর তার কোর্টে হাজিরার তারিখ। ঘটনাটি নিউইয়র্কে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

জানা গেছে, সার্জেন্ট রায়েনা মাধো নামের এই মহিলা পুলিশ এর আগেও গত ২৪ নভেম্বর একই দোকান থেকে আরো পণ‍্য সামগ্রী চুরি করেন। তিনি এবছর বেতন থেকে আয় করেছেন ২ লাখ ১ হাজার ৬২৫ ডলার। এর মধ্যে ৫৪ হাজার ৯৩৯ ডলার ছিল তার ওভারটাইম। এর বাইরেও অন‍্যান‍্য ভাতা বাবদ তিনি আরো ২০ হাজার ৪৭৫ ডলার আয় করেছেন। তিনি ২০০৬ সালে নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তিনি ডিটেকটিভ পদে উন্নীত হন। তার জন্ম ত্রিনিদাদে।

কে প্রথম? কে আসল!

মান্নাদের একটা বিখ‍্যাত গান আছে না?

‘কে প্রথম কাছে এসেছি?/ কে প্রথম চেয়ে দেখেছি?

কিছুতেই পাই না ভেবে/ কে প্রথম ভালোবেসেছি?

তুমি, না আমি?’..

জ‍্যাকসন হাইটস ৩৭ অ্যাভিনিউ গেলে আমার এই গানটার কথা মনে পড়ি। আপনা বাজারের উল্টা দিকের ডান পাশে স্ট্রিট ফুড মার্কেট। অনেকগুলো কার্টের ছড়াছড়ি। এগুলোতে চটপটি, ফুচকা, মুড়িমাখাসহ নানারকম মুখরোচক স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায়। রাস্তাটা ক্রস করলে হাতের বাঁ-পাশের প্রথম দোকানটা টং-এনওয়াইসি। তার নিচেই লেখাÑফার্স্ট ফুচকা কার্ট ইন ইউএসএ। সাদামাটা ভাষায় যদি বলি তাহলে বলা যায়, সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে আমরাই প্রথম ফুচকার দোকানের দাবিদার।

এবার একটু ডান দিকে তাকালেই চোখে পড়বে একই ধরনের খাবারের আর একটা দোকান। নাম-ফুচকা হাউস। নিচে লেখা-উই আর দ‍্য অরিজিনাল। তার মানে আমাদেরটাই আসল।

একটু ব‍্যাখ‍্যা করলে এভাবেই বলতে হয়, ‘টং এনওয়াইসি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফুচকা দোকান। আর ‘ফুচকা হাউস’ হচ্ছে এ ধরনের দোকানে আদি, অকৃত্রিম বা অরিজিনাল প্রতিষ্ঠান।

এবার তাহলে একটু তর্কের খাতিরে তর্ক করি।

যিনি দাবি করলেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ব‍্যবসার প্রথম দোকান তিনি কি বাকি ৪৯টা স্টেট ঘুরে দেখেছেন? অন‍্য কোনো স্টেটে তার আগে যুক্তরাস্ট্রে আসা কোন বাংলাদেশি এ ধরনের ফুচকার দোকান দিয়েছিলেন কিনা তা তিনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন?

এবার অন‍্য দোকানটা প্রসঙ্গে আসি। ঘোষণা অনুযায়ী তার দোকানটাই এ ধরনের ব্যবসায়ে আদি, অকৃত্রিম বা অরিজিনাল। তাহলে কি বলবো এ ধরনের অন‍্য দেকানগুলো ২ নম্বর? বা ডুপ্লিকেট? অরিজিনালের বিপরীতে ডুপ্লিকেট বা ২ নম্বর কথাটিই তো প্রথম মাথায় চলে আসে। তার প্রতিষ্ঠান ‘অরিজিনাল’ অন্যের প্রতিষ্ঠান ডুপ্লিকেট বা ২ নম্বর এটা তিনি কীভাবে নিরুপম করলেন? আর এই তুলনা করার মাপকাঠি ই বা কি?

একটা প্রবাদ আছে, ‘বৃক্ষ তোর নাম কি ফলে পরিচয় বা ‘ফলেন পরিচয়তে’। অর্থাৎ বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে। বৃক্ষ দিয়ে ফলের পরিচয় হয় না। ফল টক না সুস্বাদু তা দিয়েই বৃক্ষের বিচার হয়। তাই বলছিলাম, কে প্রথম কে দ্বিতীয় অথবা কে আসল বা কে আদি বা অকৃত্রিম নিজেদের সেভাবে বিচার না করে আসুন প্রত্যেকে নিজেদের খাদ্যের গুণগত মান দিয়ে বিচার করি। গ্রাহকদের হাতেই ছেড়ে দিই সেই সুবিচারের ভার।

ইউএস সিটিজেনদের জন‍্য ‘ইটিএ’ চালু

আগামী জানুয়ারি মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা আর বিনা ভিসায় যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন না। নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পুরণ করে ১০ পাউন্ডের সম পরিমাণ ডলার জমা দিয়ে তাদের ‘ইলেকট্রনিক ভিসা অথরাইজেশন’ বা ইটিএ সংগ্রহ করতে হবে। এই নতুন আইন আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

জানা গেছে, ইউএস সিটিজেনদের যারা ভ্রমণ, পরিবারের সদস‍্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, বিজনেস মিটিং, কনফারেন্স অথবা স্বল্প মেয়াদের পড়াশোনার জন‍্য যুক্তরাজ্যে যেতে চান তাদের এই ‘ইটিএ’ সংগ্রহ করতে হবে।

আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে এই নতুন নিয়ম চালু হলেও ২৭ ডিসেম্বর থেকেই এজন‍্য আবেদন করা যাবে। এজন্য ‘গভ.ইউকে’ এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে ১০ পাউন্ডের সমপরিমাণ ডলার ফি হিসাবে পরিশোধ করতে হবে।

একবার এই ইলেকট্রনিক ভিসা অথরাইজেশন বা ইটিএ গ্রহণ করলে পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত দেশটিতে মাল্টিপল ভ্রমণ করা যাবে এবং সেখানে একসঙ্গে ৬ মাস বসবাসের অনুমতি মিলবে।

সব ফ্রি ফ্রি নয়

সেদিন নর্দান বুলোভার্ড দিয়ে যাচ্ছিলাম। দূর থেকে একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়লো। বড় করে লিখা আছে, ‘ফ্রি কার ওয়াশ’। কাছে গেলে দেখা গেল ছোট অক্ষরে লেখা আছে-অয়েল চেঞ্জ করলে কার ওয়াশ ফ্রি।

ছোটবেলায় একটা গল্প শুনেছিলাম। এক হুজুর কোনো এক মাহফিলে ওয়াজ করছেন। রাস্তায় কোনো জিনিস পেলে নিজে নেওয়ার আগে কোনো জনসমাগম স্থানে গিয়ে তিনবার জোরে জোরে বলতে হবে-এই জিনিসটা কার। কেউ দাবি না করলে বা মালিক না পাওয়া গেলে তখন নিজে জিনিসটা ঘরে নিয়ে ব‍্যবহার করা যাবে।

কিছুদিন পর গ্রামের রাস্তায় একটা মুরগি পাওয়া গেলো। কেউ দাবিদার নেই। তখন একজন অতি চালাক লোক মুরগিকে একটি স্থানীয় বাজারের কাছে নিয়ে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো-কারগো। আর মুরগি শব্দটা উচ্চারণ করলো খুব নিচু শব্দে যেন অন‍্য কেউ শুনতে না পারে। মুরগি শব্দটা শুনতে না পায়।

অর্থাৎ হুজুরের কথা মত আইনও মানা হলো। আর মুরগিটাও নিজের হলো। আমি জানি না, সেই কার ওয়াশ কোম্পানি হুজুরের কথামত আইন মানতে গিয়ে ‘অয়েল চেঞ্জ করলে’ কথাটা ছোট করে লিখেছেন কিনা!

লেখাটা শেষ করার আগে আপনাদের ফ্রিতে একটা ”ফ্রি” নিয়ে গল্প শোনাই।

এখন ফ্রির যুগ। সর্বত্র “সেল”এ জিনিসপত্র পাওয়া যায়।একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। নৈতিকতার দিক থেকে এটা ঠিক নয়। কারণ ক্রেতা কিনতে যায় তার নিজ প্রয়োজনে। কোন লোভের কারণে নয়। তাই পণ্যের বাইরে ক্রেতাকে কোন অতিরিক্ত জিনিস দেওয়া বেআইনী হওয়া উচিত। তারপরেও চলছে এই সেল প্রথা বা এক জিনিসের জন‍্য অন‍্য আরেকটি জিনিস ফ্রি দেওয়া। অসুস্থ এই প্রতিযোগিতার বাংলাদেশেও দেখা যায়। ফ্ল্যাট কিনতে গেলে মিলছে ফ্রি টিভি ফ্রিজ, স্বর্ণের অলংকার। গুড়া দুধের সঙ্গে চমৎকার মগ। আরো আরো অনেক ফ্রি পাওয়ার অফার।

আসুন দেখি এই ফ্রি কালচার আমাদের কি ক্ষতি করছে।

এক. ক্রেতাদের লোভ জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ পণ্য কিনছে। লোভ সব সময়ই খারাপ। এই ফ্রি অফার মানুষকে বিত্ত বৈভবের প্রতি লোভী বানাচ্ছে। এমনকি শিশুরাও এই লোভের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে মুক্ত নয়।

দুই. ফ্রির দিকে নজর থাকায় কম দামী পণ্য বেশি দামে কিনে ঠকছে ক্রেতা। মূলত ফ্রি বলে দেওয়া হলেও মূল্যের সঙ্গে ফ্রি জিনিসের দামও রেখে দিচ্ছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

তিন. অপ্রয়োজনী ফ্রির দিকে নজর থাকায় পণ্যের গুণাগুণ বিচার করছে না ক্রেতারা। ফলে যেন তেন পণ্য গছানো যাচ্ছে ক্রেতার কাছে। ক্রেতারাও অন্ধের মতো কেবল ফ্রির দিকে নজর রেখে পণ্য কিনে যাচ্ছেন।

চার. ছোট ছোট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের পুঁজি কম, তারা এই ফ্রি অফারের কাছে মার খাচ্ছে। তাদের পণ্য নিয়ে বাজারে দাঁড়াতেই পারছে না তারা। ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একচেটিয়া বড় কোম্পানি ও বিদেশি কোম্পানির বাজারে পরিণত হয়েছে আমাদের দেশ।

যাকগে-এবার তাহলে গল্পটা শোনাই।

সুন্দরী এক মহিলা এক ট্রাভেল এজেন্সিতে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো : ভালো ট্যুর প্যাকেজ কি আছে? আমরা স্বামী-স্ত্রী যেতে চাই।

ট্যুর কোম্পানি : আছে পাঁচদিনের ইউরোপ ট্যুর ৫ লাখ।

এর চেয়ে কম?

তিনদিন দিন চীন সফর ৩ লাখ।

আরো কম নেই?

পাঁচদিন কাশ্মীর ট্যুর ১ লাখ।

এর চেয়ে কম আর নেই?

ট‍্যুর কোম্পানি লোকটা এবার অনেক ভেবে চিন্তে বলল- আছে ম্যাডাম। ১১ দিনের আমেরিকা ট্যুর মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকায়। সঙ্গে গাড়ি খাওয়া-দাওয়া থাকা সব ফ্রি।

মহিলাটি এবার খুব উৎসাহ নিয়ে বলল, তাহলে এই প‍্যাকেজটিই আমাকে দেন। আমি এটাই নেব। কথা ফাইন‍্যাল।

ট‍্যুর কোম্পানির লোকটি এবার তার উৎসাহে পানি ঢেলে বলল, ম্যাডাম! অবশ‍্যই আপনাকে আমরা এই প‍্যাকেজটা দেবো। তবে এই প‍্যাকেজটার জন‍্য একটি বিশেষ শর্ত আছে।

এত কম টাকায় আমেরিকা যাবার প্যাকেজটা হারাতে রাজি নন মহিলা। তাই আরো আগ্রহ নিয়ে বলল, বলুন, বলুন কি শর্ত? আমি রাজি আছি।

ট‍্যুর কোম্পানির লোকটি এবার ঠান্ডা মাথায় জবাব দিলো-আমরা কিন্তু হাজব‍্যান্ড সিলেক্ট করে দেবো!

সুতরাং বুঝতেই পারছেন সব সময় সস্তা বা ফিরি খুঁজতে গেলে কিন্তু বিপদও আছে।

(বি:দ্র: আমার নিজের একটা ট্যুর কোম্পানি আছে। এই গল্পের সঙ্গে কিন্তু আমার ট্যুর কোম্পানির কোনো সম্পর্ক নেই। -লেখক)।

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)