নীরব কেন সরকার সচিবালয়ে আগুন সরষেয় ভূত?


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 01-01-2025

নীরব কেন সরকার সচিবালয়ে আগুন সরষেয় ভূত?

বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের অন্যতম সুরক্ষিত স্থাপনা (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়। যা দেখে মনে হয়েছে পরিকল্পিত। নতুবা একই সঙ্গে এ বিল্ডিংয়ের একপ্রান্তে আগুন, অন্য বিল্ডিংয়ের অন্যপ্রান্তে জ্বলছে রুম। এটা কখনই নাশকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ বিল্ডিংটা শীর্ষ কেপিআই তালিকাভুক্ত স্থাপনা। এখানে অনুপ্রবেশ এবং চলাচল সংরক্ষিত এবং নিবিড় মনিটরিং হওয়ার কথা। 

বলা হচ্ছে, যেসব মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে আগুন ধরেছে সেগুলোর বিষয়ে পূর্ববর্তী সময়ে মহা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। খোদ সচিবালয়ে আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার জন্য কি পূর্ববর্তী সরকারকে ঢালাওভাবে দায়ী করা চলে? সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় এই ধরনের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা অথবা পতিত সরকারের অন্তর্ঘাত তৎপরতা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেন চার মাসে সচিবালয়ের মতো স্থাপনাকে সুরক্ষিত করা গেল না? কাদের অবাধ বিচরণ এখন সচিবালয়ে? কেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যার্থতা? গোয়েন্দারা কি করেছে? কি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়?

দেশে কিছু ঘটলেই বলা হচ্ছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা। বিশেষ পরিস্থিতির মাধ্যমে ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতায় এসেছে সরকার। পূর্ববর্তী সরকার নানাভাবে চেষ্টা করবে সরকারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে। সেটি সহজেই অনুমেয়। কিন্তু সরকার কেন নিজেদের সুরক্ষায় যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ? তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে? উপদেষ্টারা নিজেদের কাজে কতটা অদক্ষ সেটি করুন ভাবে ফুটে উঠছে।

সর্বশেষ ঘটনায় এটি সুস্পষ্ট যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারসাধন করা দূরে থাকে নিজেদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। উপদেষ্টারা প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে নানা কথা বলে চলেছেন। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মত সফলতা নেই।

অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনার কারণে হতে পারে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ধরণ দেখে এটি দুর্ঘটনা নয় বলে প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞরা মতামত প্রকাশ করেছেন। একটি তদন্ত কমিটি করে আবার সেটি পরিবর্তন করা হয়েছে। গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া বা রিমোট ডিভাইস ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ে থাকলেও দায় দায়িত্ব বর্তমান প্রশাসন এবং সরকারের ওপর বর্তাবে।

দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কার্যালয়ে দাবি দাওয়া নিয়ে অরাজকতা চলছে। এমনকি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাঝে আন্ত ক্যাডার বিতর্ক দ্বন্দ্ব চলছে। তদুপরি সাম্প্রতিক কিছু তদন্তে সরকারের কিছু মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ওঠায় আমলাতন্ত্রের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। প্রশ্ন হলো গোয়েন্দা সংস্থানগুলো কি করেছে? অভিযোগ আছে অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

স্মরণে আছে ৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের মত স্পর্শকাতর স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। অনেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে। ঘটনা ঘটনার জন্ম দেয়। সচিবালয়ে অগিকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে বিবেচনার সুযোগ নেই। দলদাস আমলাদের ক্ষমতায় রেখে কোনো সরকার দেশে স্থায়ী উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)