আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনালড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করবেন। এ সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সম্পর্কিত নির্বাহী আদেশের একটি ঢেউ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন আইন বাস্তবায়ন নিয়ে নাটকীয় পরিবর্তন হবে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রথম দিনেই তিনি আমেরিকার ইতিহাসে অপরাধী মানুষদের সবচেয়ে বড় নির্বাসন কর্মসূচি শুরু করবেন। তবে তার পরিকল্পনা কেবল তাদের জন্য নয়, যারা অপরাধমূলক আইনিব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, বরং সেই ৮০ শতাংশ অননুমোদিত অভিবাসী যারা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাদেরও টার্গেট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৮ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে মিশ্র-স্ট্যাটাস বা অবৈধ পরিবারের সদস্য হিসেবে বসবাস করছে, যার মধ্যে ১৯.৫ মিলিয়ন ল্যাটিনো জনগণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি অনেক পরিবারের জন্য উদ্বেগজনক, কারণ তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বা বহিষ্কৃত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের আগামী অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপটে। এই নীতি পরিবারগুলোর স্থিতিশীলতা এবং তাদের আইনি অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে ভবিষ্যতের অভিবাসন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন রিপোর্ট অনুসারে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনেক শিশু, বিশেষ করে মার্কিন নাগরিক শিশু, এ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ল্যাটিনো সম্প্রদায়ের জন্যও এই ঝুঁকি মারাত্মক হয়ে উঠছে, কারণ তারা অন্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় অধিক সংখ্যক মিশ্র-স্ট্যাটাস পরিবারের সদস্য।
ইমিগ্র্যান্ট রাইটস তথ্য প্রকাশ করেছে যে, অনেক মার্কিন নাগরিকের শিশুদেরও এ ঝুঁকিতে পড়তে হবে। কমপক্ষে ৫.১ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক শিশু ১৮ বছরের নিচে, যাদের মধ্যে অন্তত একজন অবৈধ পরিবারের সদস্য রয়েছে। এ পরিসংখ্যানটি পরিবারের স্থিতিশীলতা এবং বিচ্ছেদের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যখন অভিবাসন কার্যক্রমের তীব্রতা বাড়ছে।
যদিও সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবে জানা গেছে যে আগত প্রশাসন তার বিদ্যমান ক্ষমতাগুলো যেমন রাজ্য ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং দ্রুততর অপসারণের প্রক্রিয়া সম্প্রসারিত করবে, যাতে আরো মানুষকে আটকানো এবং নির্বাসন করা সম্ভব হয়। এ পরিস্থিতিতে, অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের জন্য আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ১১.৩ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক এবং আরো ২.৪ মিলিয়ন আইনগত স্থায়ী বাসিন্দা বা অস্থায়ী ভিসাধারীরা মিশ্র-স্ট্যাটাস পরিবারের অংশ হিসেবে বসবাস করছেন, যেখানে ১০.১ মিলিয়ন অবৈধ ব্যক্তি আছেন। এ পরিবারের সদস্যরা সাধারণত অন্তত একজন অবৈধ ব্যক্তি (যাদের কাছে তাৎক্ষণিক সুরক্ষাব্যবস্থা টিপিএস, ডাকা বা অন্যান্য অভিবাসন সুরক্ষা রয়েছে) এবং অন্তত একজন মার্কিন নাগরিক, গ্রিনকার্ডধারী বা অন্যান্য আইনগত অস্থায়ী অভিবাসী সদস্য থাকে।
ল্যাটিনো সম্প্রদায় বিশেষভাবে এ পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। রিপোর্টটি বলছে যে, ১৯.৫ মিলিয়ন ল্যাটিনো মার্কিন নাগরিক বা বাসিন্দা মিশ্র-স্ট্যাটাস পরিবারের সদস্য হিসেবে বসবাস করছেন বা অবৈধভাবে বসবাস করছেন। এই সংখ্যা ল্যাটিনো জনগণের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য, পরিবারগুলো এখন আরো বেশি উদ্বিগ্ন। তারা জানে না যে, কোনো মুহূর্তে তাদের প্রিয়জনকে আলাদা করা হবে বা তারা নিজেও কোনোদিন বহিষ্কৃত হবেন কি না। তাছাড়া ২০২০ সালের পর থেকে যেখানে বিশ্ব মহামারি এবং এর প্রভাবের কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, মিশ্র-স্ট্যাটাস পরিবারের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অভিবাসন নীতির লক্ষ্য হিসেবে শুধু অপরাধী অভিবাসীদের নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি বসবাসকারী অভিবাসীদেরও প্রাধান্য দেবে। এর মধ্যে সেই অভিবাসীরা অন্তর্ভুক্ত যারা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং যারা সমাজে একত্রিত হয়ে গেছেন। এছাড়াও অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের ওপর চাপ বাড়ানো হতে পারে, বিশেষ করে যারা বৈধভাবে কাজ করতে পারেন না এবং বিভিন্ন শিল্পে কর্মরত। এছাড়াও পারিবারিক ভিসা এবং ডিভার্সিটি লটারি সুবিধাভোগীদের নিয়েও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যাদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা এবং নিউইয়র্কে মিশ্র-স্ট্যাটাস বা অবৈধ পরিবারের সংখ্যাও বেশি। এই চারটি রাজ্যেই জাতীয়ভাবে মিশ্র-স্ট্যাটাস বা অবৈধ পরিবারের সদস্যদের ৫৩ ভাগ বসবাস করছে। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নেভাদা, নিউ জার্সি এবং মেরিল্যান্ডে ১০ ভাগ বা তার বেশি বাসিন্দা মিশ্র-স্ট্যাটাস বা অবৈধ পরিবারের অংশ।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। একদিকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাসন প্রক্রিয়া আইনি বাধার সম্মুখীন হতে পারে। কারণ অনেক অভিবাসী তাদের অবস্থান রক্ষা করতে আদালতে যেতে পারেন। এতে প্রশাসনকে কঠিন আইনি সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া এ পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। কারণ মানবাধিকার সংগঠন এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে, যা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও এসব পদক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। কারণ অভিবাসীদের নির্বাসন মানবিক দিক থেকে এক বিশাল প্রশ্ন তুলে ধরে এবং অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনদের হারাবে।
শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতি এবং আইন বাস্তবায়ন নিয়ে পরিবর্তন আসবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর বিশাল প্রভাব ফেলবে। তবে এ পরিবর্তনগুলোর বাস্তবায়নে অনেক আইনগত ও সামাজিক বাধা রয়েছে, তাই তা কীভাবে কার্যকর হবে তা সময়ই বলে দেবে। এতো দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বাস্তব অভিবাসন সংস্কারের জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।