মাইনাস নিয়ে সন্দেহের অবসান


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 11-01-2025

মাইনাস নিয়ে সন্দেহের অবসান

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। চলছে নানান ধরনের কৌতুহলের পাশাপাশি ইতিবাচক ও নেতিবাচক আলোচনা। কেউ কেই এমন ঘটনাকে দেখছেন একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ফুরফুরে আমেজ তৈরির বিশাল গ্রাউন্ড বা ক্ষেত্র। আবার অন্যদিকে এমন ঘটনাকে কারো কারো মধ্যে নেতিবাচকও ঠেকেছে, বলা যায় তাদের করেছে হতাশ।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাক্ষাৎ করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমে এই সাক্ষাতের কথা প্রকাশ করে জানান যে, রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন সেনাপ্রধান। এ সময় সেনাপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী বেগম সারাহনাজ কামালিকা রহমান। আর বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আরো জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ২ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে যান। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর। ফজলে এলাহি আকবরের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে জানানো হয় যে, রাত সাড়ে আটটা থেকে প্রায় ৪০ মিনিট খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান ও তাঁর সহধর্মিণী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেনাপ্রধান সেই দোয়া করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ এর বিষয়টি যেমন আকস্মিক তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কেননা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাতের আগের দিন-ই দেশের বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎ প্রচার করা হয়। এবং এটি প্রায় দু’দিন ওই পত্রিকার ওয়েব সাইটে রাখা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে এনিয়ে চলে বেশ জল্পনা-কল্পনা। কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকারটি যেদিন প্রকাশিত হয় সেদিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম ‘বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে।

কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘কী করে যারা সত্যিকারে বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে “সবার আগে বাংলাদেশ-সেই দলকে, সেই নেতাকে তারা দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এই চক্রান্ত বহুবার হয়েছে, আজকে আবার শুরু হয়েছে।’ তার এমন বক্তব্যে কারো কারো মধ্যে সন্দেহ বা উদ্বেগ দেখা দেয়- ওই গণমাধ্যমটিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি হয়তবা মির্জা ফখরুল ইসলাম ইঙ্গিত করেছেন। কেননা এইসময় রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া নিয়ে বিলম্বের পেছনে অনেকে ‘মাইনাস’ ফর্মূলা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলেন।


আর ঠিক ওই সময়ে ১ জানুয়ারি সকালে বহুল প্রচারিত পত্রিকাটি সেনা প্রধানের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। যা দেখে গুজবের দেশে আরও দশজনের মতো অনেকের মতো কিছুটা বিচলিত বা সন্দেহের উদ্বেগ হয়েই হয়তবা ওইদিন সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্যটি দেন বলে কারো ধারণা। কারণ বাংলাদেশে সেনাবাহিনী’র এমন পদে আসীন কেউ সহজে কোনো বিষয়ে মুখ খুলেন না। যা ওই গণমাধ্যমেই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেও স্বীকার করেছেন। পত্রিকারটির সাংবাদিকের এত প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেছেন, সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন গণমাধ্যমে কথা বলেন না। এটা অনেক আগের রেওয়াজ। বহুদিন থেকেই এই পরিবেশ গড়ে উঠেছে। তবে তিনি এটাও ইঙ্গিত করেছেন যেসব গণমাধ্যম দাযিত্বশীল ভূমিকা রাখে তাদের সাথে কথা বলা যায় বা স্বাচ্ছন্দ বোধ করা যায়। অর্থ্যাৎ প্রায়শ দেখা যেতো একশ্রেণীর গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা নিয়ে কখনো কারো মুখে লেখনিতে কোনো প্রশংসা শোনা যায় না, বা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে না। সেনাপ্রধান তা-ই অন্য কেনো পত্রিকার প্রসঙ্গ না টেনে ওই পত্রিকার দাযিত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তাই আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’

ফলে তার এমন বক্তব্যের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থানও পরিস্কার করে দেয়া হয়। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এ-ও জানান সেনাবাহিনীর ১/১১ এর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সেনাসদস্যদের মাঠে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও সংখ্যাটা খুবই কম। শৃঙ্খলাজনিত ঘটনার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শেষে শাস্তি-ও দিই। এরপরও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের তো এ ধরনের কাজে যুক্ততা কিংবা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়নি। এর অর্থ সেনাবাহিনী এখন রিয়েলেটি মেনেই কাজ করতে অভিজ্ঞ, এবং সামনের দিনে তা-ই করবে বলে একটি আভাস দেয়া হয় সেনাপ্রধানের মুখে। আবার সেনাপ্রধান বলেন, আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। আবার আরেক জায়গায় সেনাপ্রধান বলেছেন, সামরিক বাহিনীর অবশ্যই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। বলেছেন, এ জন্যই আমার অঙ্গীকার হচ্ছে, সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না। আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না। এটাই আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদের বিকল্প রাজনীতিবিদেরাই। তাঁদের বিকল্প সেনাবাহিনী নয়।

মাইনাস ফর্মূলার ইতি টানলেন সেনাপ্রধান?

ফলে সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্য হয়তোবা পুরোপুরি না পড়ে বিএনপি শীর্ষদের কেউ কান ভারি করেছেন, ষড়যন্ত্রের ফাঁদ দেখিয়েছেন বলে মির্জা ফখরুল হয়তোবা এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাই অনেকের ধারণা মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য আর রাজনৈতিক অঙ্গনে মাইনাস ফর্মুলার নিয়ে গুজবের ইতি টানতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের আকস্মিক সাক্ষাৎটি বেশ ভূমিকা রেখেছে তা বলার রাখে না। আরেকটি বিষয় এমন সাক্ষাৎ এর নেপথ্যে কাজ করেছে বলে কারো কারো ধারণা। তা হলো, একটি মহল বেশ জোরেসোরে দেশে-বিদেশে প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের খায়েশ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতায় বসানো।


এর পাশাপাশি ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অত্যন্ত চরম সময়ে সেনাবহিনীর সাহসী সহযোগিতা করেছে। এখনো পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতাকে করে যাচ্ছে যা কোনো কোনো মহলের মধ্যে নানান ধরনের সন্দেহের জালে ফেলা হয়েছে। প্রচার-প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়েছে বা দিচ্ছে। আর সে ক্ষেত্রে ওই পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাতটি সব জল্পনার কল্পনার অবসানে একটি শক্ত বার্তা দেয়া হয়েছে বলেও কারো কারো অভিমত।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)