২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বেরিজ এলাকায় প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আয়োজিত এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী সমাবেশে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক সিটি এবং নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি) কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও প্রতিবাদকারীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে ১৬ জানুয়ারি ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী আটজন প্রতিবাদকারী পক্ষে এ মামলা দায়ের করেছে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস, নিউইয়র্ক শাখা এবং ওমর মোহাম্মেদি, এলএলসি আইনজীবী ফার্ম। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, প্রতিবাদ র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার সময় পুলিশ সদস্যরা অত্যধিক বলপ্রয়োগ করেছে এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে প্রথম সংশোধনাধিকার (ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট রাইটস) লঙ্ঘন করেছে।
মামলায় নিউইয়র্ক সিটি এবং এনওয়াইপিডির বিরুদ্ধে নিম্নোল্লিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করেছে। প্রথমত, ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে, যাতে পুলিশ সদস্যদের কার্যকলাপের কারণে প্রতিবাদকারীদের শারীরিক আঘাত, মানসিক যন্ত্রণা এবং সংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয়ত, মামলাটি এনওয়াইপিডির নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে এবং ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। তৃতীয়ত, শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে, যাতে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি প্রদান এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ থেকে বিরত রাখা যায়।
এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে, যাতে তারা তাদের অপরাধমূলক আচরণের জন্য দায়ী হন। এ মামলার মূল লক্ষ্য হলো প্রতিবাদকারীদের বিবেকের স্বাধীনতা এবং সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা এবং এনওয়াইপিডির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া। মামলাটি নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শহর এবং এনওয়াইপিডিকে দায়ী করে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কেয়ার নিউইয়র্ক এবং ওমর মোহাম্মেদি আইনজীবী ফার্ম থেকে কেয়ার নিউইয়র্কের সুপারভাইজিং অ্যাটর্নি লামিয়া আগরওয়ালা এস কে এক বিবৃতিতে বলেছেন, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাজকর্ম পরিষ্কারভাবে সংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের একটি গুরুতর দৃষ্টান্ত। এ মামলা নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং সিটি কর্তৃপক্ষকে তাদের জাতিগত এবং ধর্মীয়ভাবে প্রণোদিত কাজের জন্য জবাবদিহি করার আহ্বান জানানো হয়। মামলা দায়েরকারী আইনজীবী ওমর মোহাম্মেদি বলেছেন, আমরা এই মামলা দায়ের করছি কারণ আমাদের ক্লায়েন্টদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। মেয়রের নেতৃত্বে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের যে হিংসাত্মক আচরণ হয়েছে, তা আমাদের সংবিধানিক অধিকারের বিরুদ্ধে গুরুতর আক্রমণ। এই মামলা আদায়ের মাধ্যমে আমরা একধরনের বার্তা পাঠাচ্ছি যে, কোনো ধরনের ঘৃণা এবং বৈষম্য সহ্য করা হবে না। আমরা প্রতিটি প্রতিবাদকারীকে তার অধিকার রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এই মামলা কেবল নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার দাবি করছে না, বরং ভবিষ্যতে সব প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে আরো দায়িত্বশীল এবং সংবিধানসম্মত হতে উৎসাহিত করছে। মামলাটি থেকে স্পষ্ট হয় যে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ একটি মৌলিক অধিকার, যা সুরক্ষা পাওয়া উচিত, এবং যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ এ ধরনের আন্দোলনকে নিপীড়ন করে, তবে তা আইনের আওতায় আনা হবে।
এই মামলা নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মামলার মূল লক্ষ্য হলো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা এবং এটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া যে, কোনো সরকারি সংস্থা বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তাদের মতপ্রকাশের অধিকার বা সমাবেশের স্বাধীনতাসংক্রান্ত অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে না। যেহেতু প্রতিবাদ একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও সমাবেশের অধিকার সর্বজনীনভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাই ঘণচউ কর্তৃক প্রদর্শিত সহিংসতা, অযৌক্তিক আটক এবং অত্যধিক বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ মামলা দ্বারা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করা হবে যে, তারা যদি এমন আচরণ করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়াও মামলায় ক্ষতিপূরণ, শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়েছে, যা মূলত পুলিশ শক্তির অপব্যবহার রোধ করবে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। মামলার মাধ্যমে শুধু এ ঘটনা থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি নয়, বরং এটি সমাজে বৈষম্য, ঘৃণা এবং বিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা হয়ে উঠবে। এ ধরনের আইনি পদক্ষেপ সমাজে মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধার পরিবেশ সৃষ্টি করবে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবে। মানবাধিকার রক্ষা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং ন্যায়বিচারের আদেশ কেবল প্রতিবাদকারীদের জন্য, বরং একটি সুষ্ঠু, ন্যায়ভিত্তিক এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যও অপরিহার্য।