এফবিআই কর্তৃক মুসলিম ইমিগ্র্যান্টদের হয়রানি


মঈনুদ্দীন নাসের , আপডেট করা হয়েছে : 22-06-2022

এফবিআই কর্তৃক মুসলিম ইমিগ্র্যান্টদের হয়রানি

আরব ও মুসলিম ইমিগ্র্যান্টদের প্রতি এফবিআই  (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এবং যুক্তরাষ্ট্র কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) ক্রমাগতভাবে বর্ধিত নজরদারির কারণে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলে কর্মরত কেটি মুরডজা ও রেবেকা ওলফ তাদের সাম্প্রতিক এক আর্টিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা লিখেছেন, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই ও কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন বা সিবিপির মধ্যে সহযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই হয়রানি বাড়ছে। বিষয়টা এমন নয় যে, কোনো একজন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, কিন্তু কোনো লোক এফবিআইয়ের ইনফরমার হিসেবে তার কাজ না করার অধিকার ব্যক্ত করেছে এ ধরনের লোকের বেলায়ও নজরদারির খড়গ নেমে আসছে। 

আসওয়াদ খান নামের একজন এফবিআই এজেন্ট বা ইনফরমার হিসেবে কাজ করতে না করায়। তাকে ১২ বছর যাবৎ বিপদে কাটাতে হয়েছে। বিশেষ করে তার বন্ধুদের, পরিবার সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর সিবিপি তাদের ওপর নজরদারি করেছে। কারণ সিবিপি প্রকৃতপক্ষে এফবিআইয়ের সহযোগিতাকারী সংগঠন। এই সহযোগিতা ও বর্ধিত নজরদারি আরেকটি বৈষম্যমূলক আচরণের উদাহরণÑ কীভাবে ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত নীতি আরব ও মুসলিম ইমিগ্র্যান্টদের প্রতি বৈষম্যমূলক হতে পারে। 

গত ২০ বছর ধরে এফবিআই তাদের ইনফরমার নিয়োগে বিশেষ করে আরব ও মুসলিম দেশ থেকে ইনফরমার নিয়োগ করতে তৎপর রয়েছে। যাদের ইনফরমার নিয়োগ করা হয়, তাদের বুদ্ধি, জাতীয়তা, ভ্রমণের ধরন, বয়স, নাম অথবা বিভিন্ন কন্টাক্টের সঙ্গে যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে। 

এফবিআই তাদের প্রয়োজনীয় কন্টাক্ট গড়ে তোলার জন্য তালিকা তৈরি করে তা সিবিপিকে দেয়। যেসব সফরকারী আসে তাদের শনাক্ত করে এফবিআইকে দেয়া হলে তারা অতিরিক্ত সিবিপি স্ক্রিনিংয়ের জন্য দিয়ে দেয়। এই স্ক্রিনিং কোনো অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ীদের শনাক্তকরণের জন্য নয় বা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি কিনা তার জন্য নয়, বরং তা হচ্ছে যে লোককে এফবিআইয়ের ইনফরমার হিসেবে কাজ করবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ করা হয়েছে তার জন্য। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের ফেডারেল ল’ এনফোর্সমেন্টের গাইডলাইনে এখনো সিবিপি ও এফবিআইকে বর্ণবাদী ও ধর্মীয় প্রোফাইলিংয়ের অনুমতি দেয়া আছে।

২০১২ সালে বোস্টন এয়ারপোর্টে সিবিপি ৪৭টি পরিদর্শন করে তার মধ্যে ৩২ জনকে ইনভেস্টিগেটিভ স্কোয়াডের কাছে রেফার করে। অনেক লোক রিপোর্ট করেছে এফবিআই তাদের কাছে ইন্টিলিজেন্স ইনফরমেশন চেয়েছে। আসওয়াদ খানকে দ্বিতীয় সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। খুব শিগগিরই সিবিপি খানকে তার বন্ধুদের ও সংশ্লিষ্টদের হয়রানি শুরু করে।

তার এক বন্ধু ফয়সাল মুন্সী আগে অনেকবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করে থাকলেও পরে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি ব্যবসা ও পরিবারকে দেখার জন্য। একসময়ে সিবিপি কর্মকর্তারা মুন্সীকে তার পরিবার থেকে পৃথক করে ৬ ঘণ্টা আটকে রাখে। সিবিপি মুন্সীকে প্রশ্ন করে আসওয়াদের আগের চার বন্ধু সম্পর্কে এবং তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি তা জানতে চায়। তারা আরো সাজেস্টিভ প্রশ্ন করে যে, সে একজন সন্ত্রাসী।

খান যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে লেখাপড়া করেন। প্রত্যেক গ্রীষ্মে সে পরিবার দেখতে স্বদেশে যায়। তার ওপর এই হয়রানি শুরু হয় ১০ বছর আগে। সে কয়েক বছর সামাজিকভাবে বিভিন্ন হযে পড়ে। তার বন্ধুরা আমেরিকান সরকারের সঙ্গে সমস্যা বাড়তে পারে এজন্য তার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। খানের অভিজ্ঞতা সরকার কীভাবে ইমিগ্রেশনকে ব্যবহার করছে তার একটা উদাহরণ। আর কীভাবে আরব ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করছে তার নিদর্শন। 

সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১-এর পর ২৫টি আরব, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের লোক যারা নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার আমেরিকায় ছিলেন তাদের টার্গেট করা হয়। বাংলাদেশও সে টার্গেটের মধ্যে ছিল। যারা বিশেষ রেজিস্ট্রেশনে গেছে তারাও ইমিগ্রেশন সমস্যায় পড়ছে। এই কর্মসূচিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের অধিকাংশ মুসলিম।



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)