জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সাথে শরিকরাও একাট্টা


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 19-02-2025

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সাথে শরিকরাও একাট্টা

চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র দাবির সাথে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা একাট্টা। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের দীর্ঘদিনের মিত্ররা এর পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও চায় না। বিএনপি’র পাশাপাশি শরিকরাও মনে করে একটি রাজনৈতিক দল খুব দ্রুত নির্বাচন না চাওয়ার পেছেনে রয়েছে রহস্যজনক কোনো কারণ। তেমনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দাবির পেছনেও দলটির অসৎ কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে। মুখে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের কথা বললেও তাদেরই পথ অনুসরণ করে দেশে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করে দলটি ফায়দা লুটতে চায়- বলেও বিএনপি’র নেতারা এখন বলাবলি করছে। এমন ধারণা পাওয়া গেছে বিএনপিসহ তাদের সাথে থাকা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের। 

কে কি বললো

দেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে সদ্য পতিত আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের সব ক’টি দলই। কিন্তু এক সময়ে ক্ষমতাসীন সেই আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই জনগণের সে দাবির প্রতি সম্মানতো দেখায়নি বরং জেল-জুলুম, গুম-খুনের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব ক’টি দলকে দীর্ঘ ১৭ বছর দাবিয়ে রেখেছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুখে ফ্যাসিবাদ আকড়ে থাকা দলটি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গেছে গত বছর ৫ আগস্ট। আর এই ফ্যাসিবাদের হোতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এরপর বাংলাদেশে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয় তার দায়িত্ব পান শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস। আর এই ড. ইউনুস সরকারেরর কাছে সব দলমত নির্বিশেষে দাবি জানিয়ে আসছে একটি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সব দলই এমন দাবিতে একাট্টা। জামায়াত চায় দীর্ঘ সংস্কারের পরেই নির্বাচন। অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে দেশে বিদেশে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে বলা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন যত বিলম্ব হবে দেশের সমস্যা তত বাড়বে। জনগণ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব ঠিক করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব না পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কোনোভাবেই সংস্কার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন যত দেরি হবে, সমস্যা তত বাড়বে। 

অন্যদিকে সর্বশেষও সম্পূর্ণ (?) সংস্কার শেষে নির্বাচন চায় বলে জানিয়ে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর পাশাপাশি তিনি। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগে স্থানীয়নির্বাচন চাই। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কিন্তু কেনো?

একটি সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সংস্কার শেষে নির্বাচন চাওয়া ও স্থানীয় সংস্কারের নির্বাচনও আগে চাওয়া নিয়ে বিএনপি খুবই বাঁকা চোখে দেখে। তারা মনে করে দীর্ঘ সংস্কারের কথা বলে জামায়াত প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের মতাদর্শের লোকদের আসীন করতে চায়। আর অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী’র নেতারা মনে করেন দেরিতে নির্বাচন হলে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বিষিয়ে উঠবে। তারা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। দুর্নামে ভাগিদার হবে দেশে বিদেশে। আর এসুযোগে জামায়াত তাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্র ঠিক আওয়ামী লীগের মতো সাজিয়ে নেবে। বিএনপি’র একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কার। অথচ এই জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতারা প্রশ্ন করেন একদিকে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের কথা বলে বেড়ানো হচ্ছে অন্যদিকে তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতির নেয়ার পাশাপাশি আগে ভাগে ভাগেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও চাওয়া হয় কিভাবে? এব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক করছে। তারা বলছে, স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, এর পরে সংসদ নির্বাচন হবে। স্থানীয় নির্বাচন আগে নাকি সংসদ নির্বাচন আগে, এই কথাগুলো আসছে কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চান না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। 

শেষ কথা.. 

তবে একটি সূত্র জানায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে যতই আওয়াজ তোলা হোক না কেনো চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র দাবির সাথে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা একাট্টা। এদাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে বিএনপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এর পাশাপাশি চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কাজ চলছে বলে বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকের পর এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন দেখা যাবে সামনের দিনগুলিতে দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে দাবিয়ে রাখতে জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক চাল চালা হয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)