জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে ছাত্রদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক গঠন নিয়ে বিএনপি’তে কোনো পর্যায়েই মাথা ব্যাথা নেই। বরং নতুন গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের বিভিন্নভাবে সহায়তা-ও করে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করেন, বিশেষ করে ২০২৪’এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যানারে নতুন দল গঠনকে তারা গণতান্ত্রিক রীতির মধ্যেই পড়ে বলে মনে করছেন। তারা মনে করেন, কারো কারো নতুন দল গঠন করা নিয়ে হা-হুতাশ, বিষোদগার করা হলে এতে করে বড় দল হিসাবে বিএনপি’র রাজনৈতিক দীনতা বা দেউলিয়াপনা বলে জনগণের কাছে ভুল মেসেজ যাবে।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জুলাই অভ্যুত্থানের মূল নেতাদের নেতত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের খবর শোনা যাচ্ছে জোরে-সোরে। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম আলোচিত হচ্ছে। সদস্য সচিব হিসেবে শোনা যাচ্ছে কয়েকজনের নাম। এপর্যন্ত সব ঠিক থাকলে বাকি কমিটির শীর্ষ চার পদের অন্য দুটিতে মুখ্য সংগঠক পদে সারজিস আলম এবং মুখপাত্রের দায়িত্বে হাসনাত আব্দুল্লাহ আসতে পারেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এর পাশাপাশি বলা হচ্ছে যে, আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হতে পারে।
গড়ার আগেই বিরোধ বিভক্তি
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালে ফ্যাসিপাদ পতনে সফল আন্দোলন হলেও এদের-ই নেতৃত্বে নতুন দল গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে মারাত্মক এক বিরোধ দেখা দিয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শক্তি নিয়ে। আলোচিত হচ্ছে এমন দলের নেতত্বে আসলে কারা থাকবে? বাংলাদেশে রাজনীতিতে একাত্তরের পরাজিত কোনো শক্তি বা সেধরনের আদর্শের ব্যানারে এমন দলটির যোগাযোগ বা পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে কি-না? বা তাদের রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়ন করা হবে কি-না তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই, আর বড়ো ধরনের বিরোধ মূলত এগুলো নিয়েই। কেননা এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে শোনা গেছে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পক্রিয়ার বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীকারী দল বলে যাদের মনে করা হয় তাদের ছাত্র সংগঠনের সাবেক বা বর্তমান কাউকে শীর্ষ পদে না রাখার বিভিন্ন প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। নতুন দলের কোনো পর্যায়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী দলটির ছাত্র সংগঠনের কাউকেই নেতৃত্বের হাল ধরতে দেয়া হচ্ছে না। যার কারণে নতুন দল গঠন পক্রিয়া আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে কারো কারো অভিমত। তাই এমন মতে বিশ্বাসীরা মনে করেন দেশে বিদেশে একটি আওয়াজ উঠেছে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিবিধি বিপদজ্জনক দিকে মোড় নিয়েছে। এখানে মৌলবাদি সাম্পদায়িক শক্তি গেড়ে বসেছে। সেক্ষেত্রে নতুন দলের ব্যানানের গড়া দলের একেবারে শীর্ষ পদে এমন আর্দশের কাউকে বসানো হলে এতে করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পুরো ইমেজেই আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। ইতোমধ্যে জামায়াত শিবির-সংশ্লিষ্টতার কারণে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের নতুন দলে নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে-এ অভিযোগ চরমে উঠেছে।
এখনো আসল প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে একটি রাজনৈতিক দল গঠনে অনেক দূরে যেতে হয় সবাইকে নিয়ে। আসে ভাঙ্গা গড়ার খেলা। সেক্ষেত্রে মাঠে যে নতুন দলের বিভিন্ন কাহিনী আর উচ্চাভিলাষী প্রক্রিয়ার কথা শোনা যাচ্ছে তা তো একেবারেই প্রাথমিক। কেননা দলের প্রকৃত হাল ধরবেন কে? তার রাজনৈতিক আর্দশ বা চেতনা কতটা বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের সাথে খাপ খাপে তা-ও বিবেচ্য বিষয়। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে এই নতুন দলের হাল করা হবে না ওই পদে থেকেই দলের কার্যক্রম চালিয়ে যওয়া হবে তাও পরিষ্কার না।
বিএনপি নো টেনশন মুডো
একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ইমেজকে ধারণ করে নতুন রাজনৈদিক দলকে কোনোভাবেই বিএনপি টেনশনে নিচ্ছে না। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজে গড়ে উঠা যে কোনো রাজনৈতিক দল বা মত গণান্ত্রিক রীতিনীতির বাইরে গিয়ে কোনো দল গঠন করতে পারবে না। এটা পুরো আন্দোলনে চেতনা বিরোধী হবে। অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে পেছনে যদি অদৃশ্য কোনো শক্তি কাজ না করে সেক্ষেত্রেও এমন দলকে বিকশিত হতে দিতে বিএনপি’র কোনো দ্বিধা নেই। বিএনপি’র নেতাদের মতে, অতীতের মত কেউ কিংস পার্টি করে বর্তমানে ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা হবে মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তা হবে বির্তকিত। এসব কারণে শুধু মাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে উঠা দলকে বিএনপি ঝামেলাপূর্ণই বলে মনে করে না। অন্যদিকে নানান মতাদর্শকে এক করে একটি দল করে তা-র আদর্শ নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া সহজ বলে মনে করে না বিএনপি। ইতোমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, দেশে প্রয়োজনে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে। এটি গণতান্ত্রিক রীতি। তিনি নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছেন।
যারা জনগণের আদালতের মুখোমুখি হতে ভয় পায় অথবা তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে কিংস পার্টির ব্যানারে বা অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার গন্ধ না থাকার কারণে বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যানারে নতুন দল নিয়ে মোটেই বিচলিত নয়। বরং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার চেতনাকে ধারণ করে একটি দল ভবিষ্যতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদে আসীন হলে সবার জন্য তা হবে মঙ্গল। আর আন্তর্জাতিকভাবেও অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটিও হবে বেশ গ্রহণযোগ্য। কেননা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনেই গত বছর দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পাশাপাশি তা দল আওয়ামী লীগও এখনো নিষিদ্ধ না হলেও দলটির নেতাকর্মীরা পুরোপুরি রাজনীতিতে আসা এখনই সম্ভবই না বলে মনে করেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ এমনতেই ফাঁকা থাকবে। সেক্ষেত্রে ২০২৪ এর আন্দোলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার ইমেজকে ধারণ করে কেউ নতুন দল করলে বিএনপি তাতে চিন্তিত বা বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। এসব কারণে বিএনপি কোনো টেনশনেই নে-ই নতুন দলের গঠনের খবরে।