নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়েতে গুরুতর অপরাধ গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, তার সঙ্গে গোটা নিউইয়র্ক শহরজুড়ে গুলির ঘটনা ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। এনওয়াইপিডি নতুনভাবে সাবওয়ে নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর পর এই ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। অতিরিক্ত আসন দখল করা, ট্রেনের ভেতরে উচ্চস্বরে সংগীত বাজানো, বা প্ল্যাটফর্মে অনধিকার প্রবেশের মতো ছোটখাটো নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর ওপর নতুন করে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যদিও অনেকেই একে ‘ব্রোকেন উইন্ডোজ’ পুলিশিং বলে সমালোচনা করেছেন, যা সংখ্যালঘু ও গৃহহীন ব্যক্তিদের ওপর অন্যায়ভাবে কেন্দ্রীভূত হতে পারে। তবে পুলিশ বলছে, এই কঠোর মনোযোগ ইতিমধ্যেই সুফল দিতে শুরু করেছে। অপরাধ প্রতিরোধের পাশাপাশি যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়াতে প্রতিটি সাবওয়ে স্টেশনে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং ট্রেনের প্রতিটি বগিতে মোবাইল টিম পাঠানো হয়েছে।
কুইন্স ও ব্রুকলিনের দুটি ট্রানজিট ডিস্ট্রিক্টে এই কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। জানুয়ারি ১৮ থেকে কুইন্সে এবং ফেব্রুয়ারি ১৭ থেকে ব্রুকলিনে চালু হওয়া এই প্রোগ্রামের অধীনে, পুলিশ ৯৮৪ জন যাত্রীকে বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য চিহ্নিত করেছে। তাদের মধ্যে ৬৭১ জনকে সমন জারি করা হয়েছে, আর ৩১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৮০ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই পূর্বে সহিংস অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ট্রানজিট সিকিউরিটি ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু ছোটখাটো অপরাধ নয়, বরং বড় অপরাধের মূল হোতাদেরও আমরা ধরতে পারছি।
এই নিয়ম প্রয়োগের উদ্যোগটি বৃহত্তর সাবওয়ে পরিকল্পনার অংশ, যেখানে শত শত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যকে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি রাতের বেলায় প্রতিটি ট্রেনে দু’জন করে অফিসার উপস্থিত থাকেন। ফেব্রুয়ারি মাসে গোটা শহরে গুরুতর অপরাধ ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ১ হাজার ৩২৮টি কম গুরুতর অপরাধের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি কম হত্যা এবং ৩১৫টি কম ডাকাতির ঘটনা। এ বছরের প্রথম দুই মাসে মাত্র ৯৩টি গুলির ঘটনা ঘটেছে, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশেষ করে টাইমস স্কয়ার, হারলেম, এবং ব্রঙ্কসের কিছু অঞ্চলে বন্দুক সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
অপরাধ প্রতিরোধে এনওয়াইপিডি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়িয়েছে। নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা এবং এআই-চালিত অপরাধ বিশ্লেষণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে সন্দেহভাজনদের দ্রুত শনাক্ত করা হচ্ছে। ট্রেন স্টেশন এবং আশপাশের এলাকায় ড্রোন ব্যবহার করে লাইভ নজরদারি চালানো হচ্ছে, যা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করছে।
যৌন সহিংসতা ও আইনি পরিবর্তনে, নিউইয়র্ক সিটিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে, যেখানে ফেব্রুয়ারিতে ১৪০টি ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫টি বেশি। এনওয়াইপিডি জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর ১ থেকে কার্যকর হওয়া নতুন আইনি সংজ্ঞা ধর্ষণকে আরো বিস্তৃত করেছে, যার ফলে আরো বেশি ঘটনা আইনের আওতায় আসছে। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ বলছে, নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, অতীতে যেসব ঘটনা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো না, সেগুলোকেও এখন গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর ফলে আরো ভুক্তভোগী সাহস করে সামনে আসছেন, যা ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ কমাতে সাহায্য করবে।
এনওয়াইপিডি কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের কথা শুনে, তাৎক্ষণিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে আমাদের সম্পদ মোতায়েন করে আমাদের শহরকে আরো নিরাপদ করে তুলতে থাকব। কমিউনিটির সঙ্গে আরো ভালো সংযোগ তৈরির লক্ষ্যে পুলিশ বিভাগ এখন নিয়মিত সেফটি ফোরাম আয়োজন করছে, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের উদ্বেগ ও পরামর্শ জানাতে পারছেন। এছাড়া স্কুল-কলেজ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একত্রে কাজ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য নতুন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে, নতুন নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নির্দেশে এনওয়াইপিডির নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা ইতিবাচক ফলাফল দেখাচ্ছে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, অপরাধের হার হ্রাস পাওয়ার এই প্রবণতা নগরবাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা বহন করছে। পুলিশি নজরদারি, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং কমিউনিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ- সব মিলিয়ে নিউইয়র্ক শহর আরো নিরাপদ ও বাসযোগ্য হয়ে উঠছে, যা নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।