শেখ হাসিনা ভারতের ‘ব্যর্থ খদ্দের’


মঈনুদ্দীন নাসের , আপডেট করা হয়েছে : 26-03-2025

শেখ হাসিনা ভারতের ‘ব্যর্থ খদ্দের’

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সহজ করা হলে তা ভারতের আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রভাবকে ব্যাপকভাবে খর্ব করে দেবে। এ কারণে একদিকে ভারত যেমন বিএনপিকে কাছে টানতে চায়, তেমনি ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে তার দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে চায়। বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব বজায় রাখার জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছে।

ভারতের দি হিন্দু পত্রিকায় রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রবিষয়ক অন্যতম ভাষ্যকার প্রণয় শর্মার ২১ মার্চ প্রকাশিত ভাষ্য থেকে জানা যায়, তিনি লিখেছেন পাকিস্তান থেকে কার্গো নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের কারণে কয়েক দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ সমুদ্র কানেকশন পুনরায় চালুর সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশে উৎসুক সৃষ্টি হয়েছে। এই যোগাযোগ ভারতে রণকৌশল চিন্তাবিদরা মনে করেন এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ঢাকা, ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক করে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তা উভয় দেশকে আরো ঘনিষ্ঠ করতে সহায়ক হবে।

পাকিস্তানি মিডিয়া ইতিমধ্যে রিপোর্ট করেছে যে, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দুটি পাকিস্তানি কার্গো জাহাজ ১ হাজার কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এর মধ্যে সোডা এশ, ডোলোসাইট এবং মারবেলসহ গার্মেন্টস, কাঁচামাল, চিনি ও অন্যান্য উৎপাদিত সামগ্রী রয়েছে।

পাকিস্তানি চিন্তাবিদরা বিষয়টিকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান ছক পরিবর্তনের বিষয় বলে বর্ণনা করছেন। এ প্রথমবার কোনো পরিদর্শন ছাড়া পাকিস্তানি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে আসতে দেওয়া হয় ১৯৭৩ সালের পর থেকে। আর তা চট্টগ্রামের ডকে অবাধ নোঙর করে। শেখ হাসিনার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে চলে যাওয়ার পর এই যোগাযোগ স্থাপিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে। এ নতুন বাংলাদেশ পাকিস্তানের যোগাযোগব্যবস্থা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য পরিবর্তনের সুবাতাস বয়ে আনে।

আগস্টের ৫ তারিখে শেখ হাসিনার পতনের পর সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ পাকিস্তানি জাহাজ পরিদর্শন ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশ না করার যে ধারা ছিল, ভারত ও বাংলাদেশের এক চুক্তিতে (যা এতদিন ছিল কারো অজানা) তা বাদ দেওয়া হয়। এ চুক্তির কারণে হাসিনার আমলে পাকিস্তানি কার্গো বাংলাদেশে আনতে হলে তা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় খালাস করে অন্য কার্গো জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম আনা হতো। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ভারতীয় কর্মকর্তাদের পাকিস্তানি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকতে চাইলে তা কঠোর পরিদর্শনের আওতায় আনার অনুমতি দিয়েছিল। ঢাকা এখন ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দরে যে তদারকির সুযোগ দিয়েছিল, তা বিবেচনা করে দেখছে বলে হিন্দুর রিপোর্টে বলা হয়।

তাছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখন সরাসরি বিমান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করছে। বিষয়টি ভারতের চিন্তার কোনো কিছু নয়। কারণ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুটি সার্বভৌম দেশ। তারা নিজ দেশর স্বার্থে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। অথচ এতদিন এক ‘বিষমাখা’ চুক্তি দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করেছিল। পাকিস্তানিরা মনে করে, ভারত যদি বিমান তার আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড়তে বাধা দেয়, তাহলে পাকিস্তানও ভারতের বিমান তার আকাশসীমার ওপর দিয়ে যেতে বাধা দেবে। এতে করে কারো মঙ্গল হবে না। হিন্দুর প্রতিবেদন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এ ব্যবস্থা বহাল হলে তা উলফা গেরিলাদের অস্ত্র সরবরাহের সুযোগ হবে বলে এক ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়।




হাসিনা সরকারের পতনের পর তাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনরায় সতেজ হয়েছে, যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে ধস নেমেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বাংলাদেশের ড. ইউনূসের দুটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির এখনো কোনো বৈঠক হয়নি। ড. ইউনূসের সরকার মনে করে, মোদি তাঁর প্রতি অবজ্ঞা পোষণ করছেন। হাসিনা ছিল ভারতের একমাত্র বিশ্বস্ত অংশীদার। অথচ ভারতবিরোধী মনোভাবের ফাঁকে তার পতন হয়েছে।

ইতিমধ্যে চীন দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক পাকা করছে। চীন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের কাছে অস্ত্রের সোর্স। ভারতের বিরোধিতার পরও বিভিন্ন দেশ চীনের বিআরআই প্রজেক্টে যোগ দিচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ প্রকল্প ভারতের জন্য উদ্বেগজনক। 

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চাইলেও অনেক বিষয় আছে, যার রাশ টানা জরুরি। যেমন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান কোনোরকম ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্যই করেনি। পাকিস্তানের রণকৌশলগত বিষয় নিয়ে লেখিকা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, পাকিস্তানি জেনারেলদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

ভারতীয় লেখক ঐতিহাসিক শ্রীনাথ রাগবন বলেন, ‘ভারত এখন এক কাদায় আটকে যাওয়া উইকেট, ভারতের খদ্দের হাসিনা এক ব্যর্থ খদ্দের।’ তিনি বলেন, এর অনেক কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অবস্থা কি দাঁড়ায় তার ওপর। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ভারতে হাসিনার উপস্থিতি ভারতকে তার উদ্দেশ্য সাধনে কিছু সুযোগ দেবে। বিশেষ করে রাগবন মনে করেন বর্তমান এবড়ো থেবড়ো অবস্থা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ৪০ শতাংশ (?) ভোট প্রভাবিত করতে পারে। যদি কোনো নির্বাচন হয় আর তাতে যদি খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়, তবে বিষয়টি কঠিন হতে পারে। ভারত ও হাসিনা কী করবে, তা বোঝা যাবে সংসদীয় নির্বাচনের সময়। কিন্তু এখনো ভারত সংশয়ে আছে হাসিনাকে নিয়ে এগোনো যাবে কি না? কারণ যে পরিমাণে হত্যাযজ্ঞ ও অর্থ পাচার তার আমলে হয়েছে, তা তার উন্নয়নের খতিয়ানকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। কাজেই ভারতকে বাংলাদেশ নিয়ে কি তার ছক বদলাতে হবে?

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমারের মোকাবিলায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে প্রস্তুতকৃত জেএফ ১৭ থান্ডার বিমান ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে। মিয়ানমর প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিমান ওড়াচ্ছে। তা মোকাবিলায় এই ফাইটার বাংলাদেশের দরকার। সম্ভবত ড. ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। আর তাতে আঞ্চলিক সহযোগিতায় পুনর্বিন্যাস হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)