কেমন আছে বাংলাদেশ?


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 02-04-2025

কেমন আছে বাংলাদেশ?

পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বাজারে নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে ছিল, বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেটাই স্বাভাবিক থাকায় জনসাধারণ স্বস্তিতে রোজা পালন করলেও আতঙ্ক ছিল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন থাকায় এবং রাজনৈতিক অঙ্গন নানা বিতর্কে উত্তপ্ত থাকায়। 

হঠাৎ করে ধর্ষণ, রাহাজানি, চাঁদাবাজি সীমিত সময়ের জন্য আতঙ্ক জনকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। এখন কিছুটা স্তিমিত। সেনা প্রধানের সতর্ক বাণী এবং সেনা প্রধানের সঙ্গে সদ্য গঠিত একটি রাজনৈতিক দলের দুইজন নেতার সাক্ষাৎকার বিষয়ে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান ভারতে এসে বাংলাদেশ বিষয়ে দেওয়া বিবৃতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াও উত্তাপ ছড়িয়েছে। সব কিছু ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা হলেও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। 

নির্বাচন নিয়ে দুই ধরনের অবস্থান রাজনৈতিক মহলে। মূলধারার কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক দল দাবি করছে দ্রুত কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার করে নির্বাচন। নবগঠিত রাজনৈতিক দলসহ সরকার ঘনিষ্ঠ মহল চাইছে নির্বাচন বিলম্বিত করতে। একটি মহল চায় ক্ষমতা থেকে অপসারিত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্বাচনের বাইরে রাখতে। তাদের অভিযোগ জুলাই আগস্ট ২০২৪ গণহত্যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। গণহত্যার কিন্তু একটি সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা আছে। জুলাই আগস্ট গণহত্যা হয়েছে কি না এবং প্রকৃত পক্ষে তৎকালীন সরকার এবং আন্দোলনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দেশি বিদেশী মহলের কার কতটুকু দায় সেটির বিচার সময় সাপেক্ষ বিষয়। 

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কিন্তু জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা পক্ষের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী একটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আইনগত অধিকার বা ক্ষমতা অনির্বাচিত একটি খণ্ডকালীন সরকারের আছে বলে মনে হয় না। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ভাবনা নেই সরকারের..। 

বলতে দ্বিধা নেই শেখ হাসিনা নেতৃত্বের আওয়ামী সরকার ১৫ বছর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা দুমড়ে মুচড়ে লন্ডভন্ড করেছে, অপশাসন এবং দুর্নীতির কারণে জনরোষে পড়েছে। আর সেই অবস্থার সুযোগ নিয়ে সরকার বিরোধী একটি মহল সরকারকে অপসারণ করেছে। সেনাবাহিনী সরকারের কথায় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলেও সরকার প্রধান এবং ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতিরক্ষা দিয়ে দেশ ত্যাগে সহায়তা করেছে। কিন্তু তাই বলে দেশের সবচেয়ে পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের তৃণমূলে এখনো সংঘটিত বিপুল সমর্থক রয়েছে। তাদের রাজনীতি এবং নির্বাচনের বাইরে রাখলে সেটি কখনো অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে না। 

এমনি যখন অবস্থা তখন সরকার সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সংগ্রহ করে আলোচনার সূচনা করার অবস্থায় রয়েছে। সম্মত সংস্কারগুলো দ্রুত করা গেলে হয়তো ডিসেম্বর ২০২৫ নির্বাচন হতেও পারে। বিশেষত দেশের ভেঙে পড়তে থাকা শিল্পখাত এবং জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে স্থবির হতে থাকা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। মনে হয় না সেটি নির্বাচিত দরকার ছাড়া আদৌ সম্ভব। 

একই সঙ্গে জনগণ চায় সরকার সরকার মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করুক। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের উচ্চারণ জয় বাংলা নিষিদ্ধ কি না, সেটি বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসী জানতে আগ্রহী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন। তাই সরকারের পক্ষে প্রাসঙ্গিক হবে সম্মত অত্যাবশ্যকীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন এবং একটি পথ নকশা ঘোষণা করা। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণ দেশের ভবিষ্যৎ পথ নিয়ন্ত্রণ করবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)