বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও ভিসা বাতিল


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 02-04-2025

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও ভিসা বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের এক তুর্কি ডক্টরেট শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও তার ভিসা বাতিল করেছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে এ শান্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়েছে ৩০ জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা।

ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর নাম রুমেসা ওজতুর্ক (৩০)। বোস্টনের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দেশজুড়ে যে প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি, তাতে তার (রুমেসা) বাক্‌স্বাধীনতার অধিকারচর্চাই তাকে আটক করার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

মাশা খানবাবাই, আইনজীবী

রুমেসাকে গ্রেফতার ও ভিসা বাতিল করায় বোস্টনের ফেডারেল আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন তার আইনজীবী মাশা খানবাবাই। পিটিশনে আইনজীবী বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে রুমেসা গত ২৫ মার্চ তার সমারভিলের বাসা থেকে বাইরে যান। সে সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করেন। রুমেসার সমর্থকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে বোস্টন থেকে এই প্রথম কোনো অভিবাসী শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হলো।

ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে সংশ্লিষ্ট থাকায় ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি বংশোদ্ভূত কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বা আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে রুমেসা গত ২৫ মার্চ তার সমারভিলের বাসা থেকে বাইরে যান। সে সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে বাক্‌স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে। তবে এই প্রশাসনের যুক্তি, ফিলিস্তিনিপন্থী কিছু বিক্ষোভ ইহুদিবিরোধী ও তা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি লঙ্ঘন করে থাকতে পারে।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এক্সে এক পোস্টে বলেন, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে ওজতুর্ক হামাসকে সমর্থন করে এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এটি একটি বিদেশি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন, যারা মার্কিনিদের মেরে ফেলাকে সমর্থন করে। তুর্কি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, ‘ভিসা একটি বিশেষ সুবিধা, কোনো অধিকার নয়।’ ওইসব কর্মকাণ্ড কী, সেটি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন। টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রকাশনা টাফটস ডেইলিতে প্রকাশিত একটি মতামতের সহরচয়িতা ছিলেন রুমেসা।

ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে এবং ফিলিস্তিনি গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যে সাড়া দিয়েছিল, তার সমালোচনা করা হয় ওই নিবন্ধে। এ ঘটনার এক বছর পর রুমেসা গ্রেফতার হলেন।

আইনজীবী খানবাবাই বলেন, ‘দেশজুড়ে যে প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি, তাতে তার (রুমেসা) বাক্‌স্বাধীনতার অধিকারচর্চাই তাকে আটক করার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’ নাগরিকদের স্বাধীনতা রোধ করতে চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার সাম্প্রতিকতম ঘটনা এটি।

আদালতের নির্দেশ

রুমেসাকে গ্রেফতারের ঘটনায় গত ২৫ মার্চ রাতে একটি নির্দেশ দিয়েছেন বোস্টনের মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জজ ইন্দিরা তালওয়ানি। গ্রেফতারের ঘটনায় পিটিশন দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ নির্দেশ দেন। বিচারকের নির্দেশে অন্তত ৪৮ ঘণ্টার নোটিশ না দিয়ে রুমেসাকে ম্যাসাচুসেটসের বাইরে না পাঠাতে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইসিই) বলা হয়।

ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে এবং ফিলিস্তিনি গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যে সাড়া দিয়েছিল, তার সমালোচনা করা হয় ওই নিবন্ধে। এ ঘটনার এক বছর পর রুমেসা গ্রেফতার হলেন।

ইতিমধ্যে খানবাবাই এক আবেদনে আদালতকে জানান, বিচারকের ওই নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি (আইনজীবী) গত ২৬ মার্চ বিকাল পর্যন্ত নিউইংল্যান্ড অঞ্চলে রুমেসার অবস্থান সম্পর্কে জানতে ব্যর্থ হন। পরে মার্কিন সিনেটরদের অফিস থেকে জানতে পারেন, তাকে লুইজিয়ানায় স্থানানতর করা হয়েছে। রুমেসার সঙ্গে তার যোগাযোগের সুযোগ করে দিতে আইসিইকে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

রুমেসাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। তাদের মধ্যে ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের স্বাধীনতা রোধ করতে চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার সাম্প্রতিকতম ঘটনা এটি।’

৩০ ডেমোক্র্যাট এমপির নিন্দা

টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং তুর্কি নাগরিক রুমেসা ওজতুর্ককে ‘ফিলিস্তিনপন্থী’ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য গ্রেফতার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ৩০ জনেরও বেশি মার্কিন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা।

গত ২৮ মার্চ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর। গত ২৭ মার্চ ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, এই গ্রেফতারের যুক্তি ওই শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের কারণে বলে মনে হচ্ছে। আমরা এই মামলার পূর্ণাঙ্গ যথাযথ প্রক্রিয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং এই মামলা এবং আইসিইর নীতি সম্পর্কে জবাব চাইছি, যার ফলে বৈধ আইনি মর্যাদা সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেফতার করা হয়েছে।’

চিঠিটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নয়ম এবং মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লিয়ন্সকে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে স্বত্বন্ত্র বার্নি স্যান্ডার্স এবং ডেমোক্র্যাট টিনা স্মিথ, পিটার ওয়েলচ, ক্রিস ভ্যান হোলেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং জেফ্রি মার্কলেসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন সিনেটর।

প্রতিনিধি পরিষদের বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য, যারা ওজতুর্কের গ্রেফতারের বিষয়ে আগে কথা বলেছিলেন, তারাও চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান আয়ান্না প্রেসলি ওজতুর্কের গ্রেফতারকে ‘রুমেসার গ্রেফতার যথাযথ প্রক্রিয়া এবং বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।

এক বিবৃতিতে প্রেসলি ওজতুর্ককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)