৮ বছরের মুসলিম ছাত্রীকে হেনস্তায় স্কুলশিক্ষিকা বরখাস্ত


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 02-04-2025

৮ বছরের মুসলিম ছাত্রীকে হেনস্তায় স্কুলশিক্ষিকা বরখাস্ত

মেরিল্যান্ডের মন্টগোমারি কাউন্টির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মুসলিম ছাত্রীকে হেনস্তা ও অপমানের অভিযোগে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি ৮ বছরের মুসলিম ছাত্রীকে তার মুসলিম পরিচয়ের কারণে অপমান এবং হেনস্তা করেছেন। ক্যাবিন ব্র্যাঞ্চ এলিমেন্টারি স্কুলে পড়াশোনা করা ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছে যে, শিক্ষক তার হিজাব এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায় তাকে বেশি শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পর ছাত্রীর পরিবার মন্টগোমারি কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষিকা ওই মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব সরাতে চাপ দিয়েছেন। তাকে শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন। এছাড়া ছাত্রীটিকে বেশ কিছু মৌলিক প্রয়োজন, যেমন- বিশ্রাম নেওয়া, পানি পান করা, কিংবা বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি, যা তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জানা গেছে, শিক্ষিকার আচরণের ফলে ওই ছাত্রীর মধ্যে অত্যধিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, যার ফলে সে একাধিক প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হয় এবং চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, ওই পরিস্থিতির কারণে তার মেয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে ভয় পেতো এবং মানসিকভাবে ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। মন্টগোমারি কাউন্টি পাবলিক স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযোগ পাওয়ার পরই তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং শিক্ষককে তার শ্রেণিকক্ষ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই শিক্ষিকা আর ওই ছাত্রীর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখতে পারবেন না। তবে শিক্ষিকাকে কোন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা জানানো হয়নি।

মেরিল্যান্ডের কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)-এর পরিচালক, জাইনাব চৌধুরী বলেন, এই ধরনের আচরণ শুধু ওই ছাত্রী নয়, বরং পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অবমাননা। এরকম ঘটনা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে। তবে আমরা মন্টগোমারি কাউন্টি পাবলিক স্কুলের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রশংসা করি। তারা যখন আমাদের সহায়তা চেয়েছিল, আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিলাম এবং শিক্ষকটি এখন আর ওই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। চৌধুরী আরো জানান যে, মেয়ে তার বাবার সহায়তায় কেয়ারের কাছে অভিযোগ জানাতে সক্ষম হয়েছিল এবং তার পরই সংগঠনটি দ্রুত স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়। তবে তিনি জানিয়েছেন যে, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রথমে উপযুক্ত পদক্ষেপ না পাওয়ায় পরিবারটি উদ্বিগ্ন হয়েছিল। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আরো দ্রুত এবং সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

ছাত্রীর বাবা এক বিবৃতিতে বলেন, এটি আমাদের পরিবারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, আমাদের মেয়ে এখন স্কুলে গিয়ে নিরাপদ অনুভব করতে পারে। আমাদের অনেক উদ্বেগ এবং মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের মেয়ে অত্যন্ত ভীত ছিল, তবে এখন সে স্কুলে নিরাপদে যেতে পারে। কোনো শিশুকে তার ধর্ম বা সংস্কৃতির কারণে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা কোনো স্কুলে কিংবা কোনো শিক্ষক দ্বারা হওয়া উচিত নয়। এটি আমাদের সমাজের প্রতি এক ধরনের অযত্ন এবং বৈষম্য প্রকাশ করে। মন্টগোমারি কাউন্টি পাবলিক স্কুলের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় এবং তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারবে না।

এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, তারা এই ধরনের বৈষম্য ও হেনস্তার বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা কেবল ওই ছাত্রীর জন্য নয়, বরং মুসলিম ছাত্রদের জন্যও একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনার পর মেরিল্যান্ডের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং শিক্ষাবিষয়ক সংগঠনগুলো দাবি করেছে যে, স্কুল কর্তৃপক্ষকে হেনস্তাকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং প্রতিটি স্কুলে শিক্ষকরা যেন শিক্ষার্থীদের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই ঘটনা মন্টগোমারি কাউন্টি স্কুলে শিক্ষিকার আচরণের মাধ্যমে একটি গুরুতর বৈষম্য এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অভাবকে তুলে ধরেছে, যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য সমাজে নিরাপত্তাহীনতা এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি করতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ, পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরো সক্রিয় পদক্ষেপ প্রয়োজন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)