গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে ডাক দেয়া বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন স্থানে দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র ও এর পাশাপাশি দেশদ্রোহী বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা এমন একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে একটি গ্রুপের দ্বারা ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া রহস্যজনকও। কেননা গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ছিল প্রকৃতপক্ষে ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ জবাব দেওয়া। অন্যদিকে একিই সঙ্গে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’। আর ওই একই সময়ে দিল্লীতে বসে ‘আমি আসিতেছি’ বলে পতিত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হুংকার ছাড়ার বিষয়টিও সরকারকে ভাবাচ্ছে। পুরো বিষয়টির সাথে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি মারাত্মক চক্রান্ত বলে মনে করেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এমনটাই আভাস মিলেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে।
কি কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশে...
গাজায় চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে সোমবার ডাকা হয়েছিল ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’। যেখানে বিশ্বের সব দেশে একযোগে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার আহ্বানও জানিয়েছিলেন গাজার বাসিন্দারা। ইসরাইলের গণহত্যা ও দখলদারির প্রতিবাদ এবং গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজার সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনভর বিক্ষোভ ও সমবেশ করেছে ছাত্র-জনতা। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও বর্বরতার প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে বাংলাদেশ। সারা দেশ এদিন বিশ্বব্যাপী ঘোষিত ‘দি ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিক্ষোভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
কিন্তু বিপরীত চিত্রে সব মাটি..
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও বর্বরতার প্রতিবাদ বিক্ষোভে যখন উত্তাল হয়ে উঠে সারা দেশ ঠিক তখনই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ঘটে যায় মারাত্বক ঘটনা। বিক্ষোভ মিছিল থেকে সিলেট, খুলনা নগরীতে কেএফসি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহরে কয়েকটি দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে কিছু লোক।
সরকারের টনক নড়লো এবং জোড়ালো এ্যাকশন..
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালে সিলেটসহ বিভিন্ন শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকার তৎপর হয়ে উঠে। সর্বশেষ খবরে জানা গেলো হামলাকারীদের শনাক্তে ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানানো হয়। মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এদিকে জানা গেলো যে, গতকাল সোমবারের এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ গতকাল রাতে অভিযান চালিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর পাশাপাশি জানানো হয় যে, তদন্তে সহায়তা করতে পারে, এমন তথ্য যাঁদের কাছে আছে, তাঁদের সহযোগিতার জন্য বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে হামলার ঘটনায় নিন্দা করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই ধরনের ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত’ বলে ব্যাখ্যা করছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
প্রশ্ন হচ্ছে হামলা ভাংচুরের দিকে নিলো কারা..?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে ডাক দেয়া বিক্ষোভ মিছিল কে বা কারা বিভিন্ন স্থানে দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুরের দিয়ে গেলো? পুরো ঢাকায় এমন ঘটনা ঘটেনি কেন? কেনো ঢাকার বাইরে এমন ঘটনা ঘটে গেলো? কি আছে এর নেপথ্যে? অন্তর্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রতি অবমাননাকর। বিবৃতিতে যারা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু কারা করলো বা আইন শৃংখলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনী এগুলো ঠেকাতে কতটা তৎপর ছিল কিংবা আকস্মিক ঘটে যাওয়া এমন ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কে কতটা আন্তরিক ছিল- তা-ও দেখার বিষয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিনিযোগ সম্মেলন কি টার্গেট...?
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ কী করছে, তা নয় বরং এ দেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা কী চান– তা জেনে সহযোগিতার বার্তা দিতে বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হয়েছে সোমবার। বদলে যাওয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে এর আয়োজক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। কারো কারো মতে এমন আয়োজনকে ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে সুযোগসন্থানীমহলটি গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে ডাক দেয়া বিক্ষোভ মিছিলচিকে বিভিন্ন স্থানে দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার তিদকে নিয়ে গেছে। যেনো পুরো বিনিয়োগ সম্মেলনটি যেনো ভেস্তে যায়। যেনো সম্মেলনকে ঘিরে সুসংবাদগুলো গণমাধ্যমের পাতায় না আসে। কেননা এই সম্মেলন থেকে সম্ভাবনাময় এক বাংলাদেশকে তুলে ধরা হচ্ছে। যেখানে উঠে আসে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা কোরিয়ান ইপিজেডের উদ্যোক্তাদের সমস্যা অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র দুই মাসে কীভাবে সমাধান করেছে। যে গল্প কোরিয়ান উদ্যোক্তার মুখ থেকেই শুনলেন তারা। মিরসরাই ইকোনমিক জোনে গিয়ে তারা দেখেছেন, সরকার কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা এরই মধ্যে করে রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য এমন সংসংবাদগুলো গণমাধ্যমে যনো না উঠে আসে তারাই কি গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে ডাক দেয়া বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন স্থানে দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটিয়েছে?
টার্গেট জঙ্গী বাংলাদেশ দেখানো...
কারো কারো মতে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে ডাক দেয়া বিক্ষোভ মিছিল কে বিভিন্ন স্থানে দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার দিকে নিয়ে যাওয়াকে গভীর রহমস্যজনক বলেন মনে করেন। এমন ঘটনা ঘটানোর মধ্য বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশে আসা বিনিযোগকারীদের বুঝিয়ে দেয়া এটি জঙ্গী মৌলবাদিদের আস্থানা। এর পাশাপাশি বিশ্বকেও জানিয়ে দেয়া যে বাংলাদেশ জঙ্গীদের উর্বর স্থান....।
‘আবার আসিতেছি’ কেন একই সময়ে...
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে ডাক দেয়া বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন স্থানে দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা মাঝে সোমবার রাতেই ‘আসতেছি আমি, বিচার করব’ বলে বার্তা দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিনই এক ভার্চুয়াল আলোচনায় দলীয় কর্মীদের সেই আশ্বাসই দিলেন পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়াল আলোচনায় একটি পর্যায়ে তিনি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “চিন্তা করবেন না। আসতেছি আমি।” বিশ্লেষকরা মনে করেন শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য ঠিক এই সময়েই দেওয়াও তাৎপর্যপূর্ণ।