আমি সবসময় কিছু খুঁজে বেড়াই


আলমগীর কবির , আপডেট করা হয়েছে : 16-04-2025

আমি সবসময় কিছু খুঁজে বেড়াই

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা ‘দাগি’। ‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেকের পর এবারও তিনি হাজির হয়েছেন একটি গল্পনির্ভর চরিত্রে। মুক্তির পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি পাচ্ছে দর্শকের ব্যাপক সাড়া ও প্রশংসা। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: আপনার মুখে প্রায়ই শোনা যায়-গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করতে চান। ‘দাগি’ কি সেই ভাবনারই একটি বাস্তব রূপ?

আফরান নিশো: হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে। আমি সবসময় এমন কিছু খুঁজে বেড়াই যেখানে নিজেকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। ‘দাগি’ সেই জায়গায় এসে মিলে গেছে। এখানে যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, সেটা কেবল অভিনয়ের জায়গা থেকে নয়, মানসিকভাবে নিজেকে গভীরভাবে জড়াতে হয়েছে। নিশান চরিত্রটা সোজাসাপ্টা কোনো চরিত্র নয়। এটার মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে, বেদনা আছে, একটা অতীত আছে যা তাকে চালিত করে। এমন চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে আমি সত্যিই নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করেছি। আমি মনে করি, ‘দাগি’ আমার সেই ইচ্ছারই প্রতিফলন, যেখানে আমি গতানুগতিক গল্প বা চরিত্রের বাইরে গিয়ে নিজের সীমা ভাঙতে চেয়েছি।

প্রশ্ন: ‘দাগি’ মুক্তির পর দর্শকের কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

আফরান নিশো: সত্যি বলতে কী, আমি খুব অভিভূত। আমি সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি সময় দিই না, তবে ‘দাগি’ মুক্তির পর দর্শকের ভালোবাসা যেন চারপাশ ঘিরে ধরেছে। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ করেছেন, কেউ কেউ সিনেমা দেখে কেঁদেছেন বলেও জানিয়েছেন। আমি নিজে কয়েকটা প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছি, দর্শকের সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখেছি-তারা গল্পে ডুবে গেছেন, চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এটা একজন অভিনেতার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। নিজের কাজ যদি দর্শকের মনে নাড়া দিতে পারে, সেটা হলো আসল স্বীকৃতি।

প্রশ্ন: এই সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে আপনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

আফরান নিশো: এটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি তো পেশাদার গায়ক না। প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল প্রথমে যখন গানটির ডেমো শোনান, তখনই বলেছিলাম-‘এই গানটা দারুণ।’ কিছুদিন পর হঠাৎ করেই তিনি বললেন, “তুমি নিজেই যদি গাও?” আমি তো চমকে গেলাম! পরে সংগীত পরিচালক নিধি যখন স্টুডিওতে ডাকলেন, তখন একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে তিনি এত সুন্দরভাবে গাইড করলেন যে, মাত্র ৪৫ মিনিটে পুরো রেকর্ডিং শেষ হয়ে গেল। এটা এক ধরনের নতুন অভিজ্ঞতা এবং দর্শক গানটি যেভাবে গ্রহণ করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে ভয় পাওয়ার কিছু ছিল না।

প্রশ্ন: সহশিল্পীদের অভিনয় নিয়ে আপনার মূল্যায়ণ কী?

আফরান নিশো: আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ভালো পারফরম্যান্স তখনই সম্ভব হয় যখন আপনার পাশে ভালো অভিনেতারা থাকেন। ‘দাগি’-তে প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। আমার চরিত্র নিশান একা দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো এতটা প্রভাব ফেলতে পারত না। তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, রাশেদ মামুন অপু-তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ চরিত্রে দুর্দান্ত ছিলেন। আমি তাদের সবাইকে সিনেমার পিলার বলি, কারণ এদের মধ্যে কেউ একজন দুর্বল হলে পুরো গল্পটাই ভারসাম্য হারাত। আমরা একটা টিম হিসেবে কাজ করেছি, আর সেই টিমওয়ার্ক দর্শক টের পেয়েছেন, সেটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতেও কি গল্পনির্ভর সিনেমায় কাজের ধারা ধরে রাখতে চান?

আফরান নিশো: অবশ্যই। আমি সবসময় গল্পকে অগ্রাধিকার দিই। আপনি যদি আমার টেলিভিশনের কাজগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন আমি কন্টেন্ট বা গল্প ছাড়া কিছুতেই যাইনি। ‘সুড়ঙ্গ’ হোক বা ‘দাগি’-দুটোই আমি করেছি গল্পের জন্য। আমি চাই এমন সিনেমায় কাজ করতে যেখানে গল্প নিজেই একটা চরিত্র হয়ে উঠবে। হোক সেটা কমেডি, অ্যাকশন বা রোমান্স-গল্পটা যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে আমি আগ্রহ পাই না। ভবিষ্যতেও আমি সেই নীতিতেই চলতে চাই।

প্রশ্ন: বছরে কয়টি সিনেমায় অভিনয়ের পরিকল্পনা করছেন?

আফরান নিশো: আমি মনে করি, আমাদের দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এখন একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভালো গল্পের সিনেমার চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সংখ্যায় আমরা এখনো পিছিয়ে। আমি ভাবি, যদি একজন শিল্পী বছরে অন্তত তিনটি ভালো সিনেমায় কাজ করে, তাহলে সেটা শিল্প এবং দর্শক-উভয়ের জন্যই ইতিবাচক হবে। ঈদ ছাড়াও পুরো বছরজুড়ে ভালো কনটেন্ট আসা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই আমার ইচ্ছা, বছরে অন্তত তিনটি সিনেমায় কাজ করব। কারণ একা ভালো করলেই হবে না-আমাদের সবার একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: ওটিটি ও নাটকে আপনার উপস্থিতি এখন অনেকটাই অনিয়মিত। এসব মাধ্যমে আবার দেখা যাবে কি?

আফরান নিশো: নাটক তো আমার শুরু, আমার শিকড়। সেটা কখনোই অস্বীকার করতে পারব না। আমি ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় এসেছি, কিন্তু ছোটপর্দাকে ভুলে যাইনি। সময় এবং প্রজেক্টের ভারসাম্যের কারণে হয়তো নাটকে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে না। তবে আমি কোনো মাধ্যমকে না বলিনি। ভালো স্ক্রিপ্ট, ভালো টিম পেলে আমি নাটক, ওটিটি-সবখানেই কাজ করতে আগ্রহী। সিনেমা আমার এক্সপানশন, কিন্তু শিকড়টা আমি ধরে রাখব।

প্রশ্ন: ‘দাগি’-তে আপনার চরিত্রটি যেভাবে দর্শকের মন ছুঁয়েছে, সেটা কি আপনার ভবিষ্যৎ চরিত্র নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?

আফরান নিশো: অবশ্যই। একজন অভিনেতা হিসেবে দর্শকের প্রতিক্রিয়া আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘দাগি’-তে নিশান চরিত্রটা যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছে, সেটা আমাকে আরও সচেতন করেছে। এখন চরিত্র বাছাইয়ের সময় আমি আরও বেশি করে ভাবব, এটা কেবল স্ক্রিপ্ট ভালো কি না, তা নয়- এই চরিত্রটা মানুষের মনে থাকবে কি না, মানুষের অনুভূতির সঙ্গে মিশবে কি না। আমার কাজ যদি কারও মনে নাড়া দিতে না পারে, তাহলে সেটা অর্থহীন।

প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন, নিশো এখন কেবল অভিনেতা নন, বড়পর্দার একজন ভাবনার মানুষ। আপনি নিজেকে কীভাবে দেখেন-শুধু পারফর্মার, নাকি গল্পেরও একজন সহযাত্রী?

আফরান নিশো: ভীষণ সুন্দর প্রশ্ন। আমি নিজেকে কেবল পারফর্মার হিসেবে দেখি না। আমি যখন কোনো সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়ি, তখন কেবল নিজের চরিত্র দেখি না- পুরো গল্পটা দেখি। গল্পটা কী বলতে চাইছে, তার মধ্যে আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি-এসব ভাবি। আমি চাই প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি দৃশ্য যেন গল্পের সেবা করে। যদি গল্পটা ভালো হয়, দর্শকও তা বুঝতে পারেন। আমি নিজেকে গল্পের একজন সহযাত্রী হিসেবেই দেখতে চাই-ক্যামেরার সামনে নয়, গল্পের ভেতরে।

প্রশ্ন: আপনার অভিনয় যাত্রা এতদূর পর্যন্ত এসে কী শিখেছেন?

আফরান নিশো: আমি শিখেছি-অভিনয় শুধু পেশা নয়, এটা একধরনের যাত্রা। এখানে প্রতিটি চরিত্র আমাকে কিছু শিখিয়েছে, ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে। আমি আগের নিশো নই, ‘দাগি’র পরে আমি আরও পরিণত নিশো। প্রতিটি সিনেমা, প্রতিটি সহশিল্পী, দর্শকের প্রতিটি মন্তব্য আমাকে গড়ে তুলছে। আমি শিখছি, এবং সবসময় শিখে যেতে চাই।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)