মুসলিম ছাত্রী লাইলা শায়েখকে হুমকিমূলক চিঠি


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 23-04-2025

মুসলিম ছাত্রী লাইলা শায়েখকে হুমকিমূলক চিঠি

ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটির একজন মুসলিম ছাত্রী এবং স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন সংগঠনের সভাপতি লাইলা শায়েখের বাড়িতে ইসলামোফোবিক ও হুমকিপূর্ণ একটি চিঠি পাঠিয়েছে দুর্বৃত্তরা। চিঠি পাওয়ার পর মানবাধিকারকর্মী ও সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। লাইলা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে না; বরং দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। চিঠিতে এমনকি প্রাণনাশের ইঙ্গিতও ছিল, যা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। এটি ছিল শায়েখের কাছে পাঠানো দ্বিতীয় ঘৃণামূলক বার্তা। ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সহপাঠী ও অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি, দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরো বাড়বে।

গত ১৩ এপ্রিল লাইলা শায়েখ তার সিনসিনাটির বাড়িতে প্যালেস্টাইনপন্থী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক ভাষায় লেখা একটি দীর্ঘ চিঠি পান। চিঠিতে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লেখা ছিল। তাকে এবং অন্যান্য ‘টেররিস্ট ট্যাগ পরা’ ব্যক্তিদের গাজায় ফেলে দিন, ঠিক একটি আইডিএফ বোমা হামলার আগে। এর আগেও ২০২৩ সালের অক্টোবরে, লাইলা তার কর্মস্থলে আরেকটি ইসলামোফোবিক চিঠি পান, যেখানে তাকে সরাসরি বলা হয়, গাজায় ফিরে যাও, তোমাকে এখানে কেউ চায় না। লাইলা জানান, তার বর্তমান ঠিকানা কোনো সরকারি রেকর্ড বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নেই, তাই চিঠিটি কারো হাতে পৌঁছানো আরো উদ্বেগজনক। শায়েখ বলেন, কেউ যদি আমার ঠিকানা বের করে চিঠি পাঠাতে পারে, সেটা শুধু আমাকে নয়, আমার পুরো পরিবারকে ভয় দেখানোর চেষ্টা। তার ১০ বছর বয়সী ছোট বোন চিঠিটি হাতে পায়, যা তাকে আরো মর্মাহত করে তোলে। চিঠি পাওয়ার পর শায়েখ প্রথমে ইউনিভার্সিটি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে তারা তাকে স্থানীয় ওয়্যারেন কাউন্টি শেরিফ অফিসে যেতে বলেন, যেহেতু ঘটনাস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতার বাইরে। কিন্তু স্থানীয় পুলিশও জানায়, চিঠিটি আইনত ‘যথেষ্ট হুমকিস্বরূপ নয়’ বলে এটি নিয়ে কোনো অপরাধমূলক তদন্ত শুরু করা সম্ভব নয়।

ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, একজন ছাত্র আমাদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি তার বাড়িতে এবং অন্য একটি জায়গায় হুমকিপূর্ণ চিঠি পেয়েছেন। আমরা তাকে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সহায়তা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করেছি। তবে শায়েখ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন থেকে যথাযথ সহায়তা না পাওয়ার ফলে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন। আমরা যখন নিরাপত্তার কথা বলি, তখন বলা হয় শুধু সতর্ক থাকতে বা ‘বিয়ার স্প্রে’ রাখতে। অথচ বাস্তব নিরাপত্তার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। শায়েখ মনে করেন, এই ধরনের ঘৃণামূলক কর্মকাণ্ড তাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারছে না। বরং এতে তারা আরো দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘যদি আমাদের ভয় দেখানোই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের আন্দোলনকে আরো উজ্জীবিত করছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালেস্টাইনপন্থী ছাত্রদের প্রতি দ্বৈত মানদণ্ড প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং এই ধরনের হুমকির ঘটনাগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না। আমাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো প্রকাশ্যে হুমকির মুখে পড়লেও, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

এখন পর্যন্ত চিঠির তদন্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। লাইলা শায়েখ এবং তার সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)