বাংলাদেশে নির্বাচন কবে?


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 23-04-2025

বাংলাদেশে নির্বাচন কবে?

বাংলাদেশে এখন ঘরে ঘরে প্রতিদিনের আলোচনা কবে হবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন? প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে ২০২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলছেন অংশীজনদের সম্মতি অনুযায়ী সীমিত অথবা ব্যাপক সংস্কারের ওপর ভিত্তি করে ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে জুন ২০২৬ সময় সীমার মধ্যে হতে পারে নির্বাচন। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে নির্বাচনের সুস্পষ্ট পথ নকশা বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বের সংলাপ বিষয়টির জট খুলতে পারে নি। সংলাপ শেষে বিএনপি নেতারা দাবি করছে তাদের কাছে ডিসেম্বর ২০২৫ কাট অফ ডেট। অপরদিকে সরকারের পক্ষে আইন উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দিষ্ট করবেন কখন নির্বাচন হবে। তিনি সংস্কার এবং বিচারকাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য সময় প্রয়োজন জানিয়েছেন। মোদ্দাকথা, নির্বাচন কখন হবে কেউ এখনো নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। এমনি অনিশ্চিত পরিবেশে অনেকেই রাজনৈতিক অঙ্গন সংঘাতপূর্ণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। দেশে কিছু চাঁদাবাজি, ধ্বংসযজ্ঞ, লুটপাট চলছে। পুলিশ প্রশাসন, বেসামরিক প্রশাসন পুরো মাত্রায় সচল হয়নি। 

বর্তমান সময়ে আঞ্চলিক এবং গ্লোবাল ভূরাজনৈতিক ডামাডোলে বিশ্ব টালমাটাল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বিগত আট মাস একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন। স্মরণ করা যেতে পারে ২০০৯-২০২৪ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল জনগণের ভোট প্রদানের মৌলিক অধিকার হরণ, অনুষঙ্গ হিসাবে ছিল ব্যাপক এবং অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি এবং অপশাসন।

সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং শক্তিগুলো দীর্ঘসময় ভোটের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গণগ্রেফতার, জেল, গুম ও খুনের শিকার হয়েছে। অবশেষে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতন হওয়ার পর একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে কনস্টিটিউশনের অধীনে বিশেষ আইনি ব্যবস্থায় একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। 

সরকার আইন, বিচার, প্রশাসনে কিছু পরিবর্তন এনে, কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে। কিছু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় এবং অবাধ দুর্নীতি এবং বিপুল অর্থ পাচারের কারণে ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়ায় সরকারের কাজ মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচার কাজ দ্রুতভাবে সম্পাদন।

পরিবর্তনের পক্ষের শক্তির দাবি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃবৃন্দের বিচার এবং দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণ। পূর্ববর্তী সরকার নানাভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলেই পতন ঘটেছে সন্দেহ নেই তাই বলে বাংলাদেশের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে যুক্তিযুক্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন কঠিন হবে। জুলাই আগস্টের ঘটনাবলীর নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হলে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের মুখোশ উন্মুক্ত হতে পারে। 

এ কাজগুলো করার মতো পর্যাপ্ত সময় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নেই। আর নানা কারণে বর্তমান সরকার বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। তৃণমূলে এখনো আওয়ামী লীগের বিপুল জনসমর্থন আছে, নির্দিষ্ট ভোট ব্যাঙ্ক আছে। আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল চাচ্ছে অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। 

এখন আসেন সংস্কারের কথায়। মোটাদাগে নির্বাচন বিষয়ে কিছু মৌলিক সংস্কার এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত কিছু প্রতিষ্ঠানের সংস্কার সরকারের সঙ্গে অংশীজনের সহমতের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পাদন করে ডিসেম্বর ২০২৫র মধ্যে নির্বাচন করা কঠিন বলে মনে হয় না। তবে সমস্যা হলো সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা এবং সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের অতি কথনে সরকারের নিরপেক্ষতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত একটি দলকে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। ওই দলটি আবার বলছে প্রশাসন নাকি একটি বিশেষ দলকে সহযোগিতা করছে। কিছু মহল বর্তমান সরকার বিশেষ করে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে দীর্ঘসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রাখার বিষয় আলোচনা করছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কিন্তু এই ধরনের বিতর্ক থাকবেই। 

বাস্তবতা বিবেচনায় সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়েই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ করা সম্ভব না হলে আগামী রোজার আগে জানুয়ারি ২০২৬ হতে পারে। আশা করি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব পক্ষ সম্মত হয়ে নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলায় সরকারকে সহায়তা করবে। সরকারে যারা দল নিরপেক্ষ নয়, তারা অবিলম্বে পদত্যাগ করে সরকারকে নিরপেক্ষভাবে মহান দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)