মাইনাস টু নিয়ে একটা আলোচনা দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর খালেদা জিয়া সব মামলায় মুক্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে চিকিৎসা ও বড় ছেলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছিলেন। গত ঈদুল ফিতরও তিনি ছেলে ও তার ফ্যামিলির সাথে করেছেন লন্ডনে। এদিকে দীর্ঘদিন লন্ডন অবস্থান করায় অনেকেই বিষয়টা সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করেন। তিনিও মাইনাস হলেন কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল কারো কারো। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আগামী মাসে অর্থাৎ মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশে ফিরে আসছেন খালেদা জিয়া এমন তথ্য জানা গেছে দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে।
ইতিমধ্যে তার ফেরার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু কবে ফিরতে পারেন সেটাতে অনিশ্চয়তা ছিল। অবশেষে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। সেটা মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিনি দেশে ফিরে আসছেন।
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরত আনতে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অনুরোধ নিয়ে কাজ করছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরাতে কাতারের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আয়োজন করতে গত সপ্তাহে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি লিখেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তবে ‘আশঙ্কামুক্ত’ নয়। তথাপি তিনি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ওনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসক বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে ফেরাতে পরামর্শ দিয়েছেন।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা মহামারির সময় বিগত সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
এ বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেছেন খালেদা জিয়া। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দি অবস্থায় চারটি ঈদ কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
বর্তমানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।