গুলশানে ছোট ভাইয়ের বাসায় চার ঘণ্টা একান্তে সময় কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। সঙ্গে ছিলেন তার দুই পুত্রবধূ— বড় ছেলে তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকার স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান ম্যাডাম তার ছোট ভাইয়ের বাসা গেছেন। একান্তে সময় কাটিয়েছেন।’ গত ১০ মে রাতে ৯টা ১৩ মিনিটে একটি নীল কালারের একটি কারের সামনের সিটে বসে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় যান বিএনপি চেয়ারপারসন। ফিরোজায় ফিরে আসেন রাত ১টা ৪৫ মিনিটে। গাড়িটি গুলশানের ৪২ নম্বর সড়কে ২৪/বি বাসাটি শামীমের। সাড়ে ৯টায় খালেদা জিয়ার গাড়িটির প্রবেশ করেন। গাড়ির দুই দিকে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ছিল একটিতে বিএনপির পতাকা ছিল।
বাসায় পৌঁছালে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার তার সহধর্মিণী কানিজ ফাতেমা, আরেক ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের সহধর্মিণী নাসরিন আহমেদ, সেজো বোন সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়।
এই সময়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শামসুল ইসলাম শামস, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিমুল বিশ্বাস জানান, ম্যাডাম এমনিতেই সচরাচর বের হন না। পরিবারের এক অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে গেছেন, পরিবারের সদস্যরা ভীষণ খুশি হয়েছে। বিশেষ করে ম্যাডামকে কাছে পেয়ে ছোট শিশুদের খুশির শেষ ছিল না।
লন্ডন থেকে গত ৬ মে দেশে ফেরার পর এই প্রথম খালেদা জিয়া নিজের বাসা ফিরোজার বাইরে বেরোলেন। খালেদা জিয়া গুলশান থেকে বেরোলে তার গাড়িকে আগে পেছনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ চেয়ারপারসনের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের গাড়ি নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যায়।
দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় পরে এই প্রথম খালেদা জিয়া কোনো নিকটাত্মীয়ের বাসায় গেলেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হেঁটেই ঢোকেন বাসায়। এরপর বাসার বাইরে ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে যাওয়াটা সবাই পজিটিভভাবেই দেখছে।
বর্তমান সময়ে খালেদা জিয়ার বড্ড প্রয়োজন। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এসব দেশের জন্য যেমনটা জরুরি তেমনি দলের জন্যও। বড় ছেলে তারেক রহমান সব সামলে নিয়েছেন। কিছুটা অ্যাকটিভ জোবাইদা রহমানও। এরপর খালেদা জিয়ার সুস্থতা বিএনপি এটাকে দারুণ পজিটিভ হিসেবেই দেখছে।
কোকোর কবর জিয়ারতে জোবাইদা
স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে সঙ্গে নিয়ে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করলেন জোবাইদা রহমান। ১০ মে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে বেরিয়ে বনানী কবরাস্থানে আসেন এবং ফাতেহা পাঠ করে কোকোর কবর জিয়ারত করেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কোকো স্ত্রী ও দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে রেখে গেছেন। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও মামলার বেড়াজালে জোবাইদা দেবরের দাফন ও কবরের পাশে যেতে পারেননি। ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন তিনি শাশুড়ির সঙ্গে। এতেই তিনি জিয়ারতে যান।
রুমন জানান, পরে বনানী কবরাস্থানে শায়িত আরাফাত রহমান কোকো ভাইয়ের শ্বশুর এইচ এম হাসান রেজা এবং শাশুড়ি এসইউএফ মুকরেমা রেজার কবরও তারা জিয়ারত করেন।
এ সময়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শামসুল ইসলাম শামস, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ এপ্রিল সৈয়দা শর্মিলা রহমানের মা, কোকোর শাশুড়ি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০১৭ সালে মারা যান শর্মিলার বাবা এইচ এম হাসান রেজা। কবর জিয়ারত শেষে জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের ফিরোজায় ফেরেন।