অভিবাসন ব্যবস্থায় এআই প্রযুক্তির প্রসার


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 14-05-2025

অভিবাসন ব্যবস্থায় এআই প্রযুক্তির প্রসার

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে— এটি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস)-এর ২০২৪ সালের আপডেটেড ইনভেন্টরিতে। ডিএইচএসের প্রকাশিত এই তালিকায় ১০৫টি সক্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ক্ষেত্রের তথ্য পাওয়া গেছে, যা বিভিন্ন অভিবাসন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষভাবে আশ্রয় আবেদন পর্যালোচনা, সীমান্ত নজরদারি, প্রতারণা শনাক্তকরণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে স্পষ্ট যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নয়, বরং বর্তমানে অভিবাসন প্রয়োগের বাস্তব অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক আগেই শুরু হয়েছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত সম্প্রসারণ এই ব্যবস্থাকে এক নতুন ও জটিল পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রকাশিত এআই ব্যবহারের তালিকা থেকে জানা গেছে, আশ্রয় আবেদন যাচাই, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ, প্রতারণা শনাক্তকরণ এবং তদন্তসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বর্তমানে শতাধিক এআই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও এই প্রযুক্তি প্রশাসনিক দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে, তবুও এতে গুরুতর নৈতিক ও মানবিক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অভিবাসন সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা কমে যাচ্ছে, ব্যক্তিগত অধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো— অভিবাসীরা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন। এই বাস্তবতায় প্রযুক্তি ব্যবহারের জবাবদিহিতা ও মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এই তালিকা ২০২২ সাল থেকে প্রকাশ করে আসছে, তবে ২০২৪ সালের ইনভেন্টরি সবচেয়ে বিস্তৃত ও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এবারের তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি— ১০৫টি এআই ব্যবহারের ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালে তা ছিল মাত্র ৩৯টি। এর মধ্যে কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) ৫৯টি, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) ২৩টি এবং ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) ১৮টি ব্যবহারের উল্লেখ করেছে। ডিএইচএস সদর দফতরের আরো পাঁচটি সাধারণ এআই ব্যবহার রয়েছে, যা বিভিন্ন সংস্থার ওপর প্রযোজ্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের বেশির ভাগই আইন ও ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে কেন্দ্রীভূত। এর মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ, সীমান্ত স্ক্রিনিং এবং তদন্ত সহায়তা। যেমন— কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশনের ইউনিফায়েড প্রসেসিং সিস্টেম মুখাবয়ব শনাক্তকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্বপরিচিত বা নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে আইসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন ইউনিট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ই-মেইল, অডিও-ভিডিও বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য অপরাধমূলক কার্যক্রম শনাক্ত করে।

ডিএইচএসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ১০৫টি ব্যবহারের মধ্যে ২৭টি ‘অধিকার-প্রভাবিত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এগুলো এমন ক্ষেত্র যেখানে ব্যক্তির গোপনীয়তা, স্বাধীনতা, সমান সুযোগ কিংবা সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে। কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশনের অধীনে সর্বাধিক ১৪টি, ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের ৭টি এবং আইসের ৫টি অধিকার-প্রভাবিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার চিহ্নিত হয়েছে। পাশাপাশি, আরো ২৮টি ব্যবস্থাকে ‘খুব নতুন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো ভবিষ্যতে অধিকার প্রভাবিত কি না— তা নির্ধারণ করতে হবে।

এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার নিয়ে অভিবাসন আইনজীবীরা উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে যেহেতু সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া অনেকটাই অস্বচ্ছ। যদি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেম কোনো আশ্রয় আবেদনকে ‘প্রতারণামূলক’ হিসেবে চিহ্নিত করে, তাহলে সেই তথ্য কীভাবে আবেদনকারীকে জানানো হবে? তারা কীভাবে এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করবেন? এই প্রশ্নগুলো এখনো অনির্দিষ্ট।

ডিএইচএসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের প্রকৃতি ও এর প্রভাব নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ব্যবহার ইতোমধ্যে অভিবাসন সিদ্ধান্তে গভীর প্রভাব ফেলছে এবং এর প্রভাব ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো যে আমরা কীভাবে এই প্রযুক্তি এবং এর সিদ্ধান্তকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে তুলতে পারি? সবকিছু বিবেচনায়, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত ও বিস্তৃত ব্যবহার একদিকে যেমন আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতীক, অন্যদিকে তা অভিবাসীদের ন্যায্য অধিকার, গোপনীয়তা এবং বিচার পাওয়ার পথকে আরো অনিশ্চিত করে তুলছে। এআই যদি জবাবদিহিহীন ও অস্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা মানবিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং হাজারো অভিবাসীর ভবিষ্যৎকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অভিবাসন প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা, স্বচ্ছতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার। শুধু প্রযুক্তির ওপর ভরসা না করে, আমাদের উচিত একটি মানবিক, ন্যায্য এবং জবাবদিহিমূলক অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি অভিবাসী সুবিচার পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ছায়ায় নয়, মানবিক ন্যায়বিচারের আলোয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)