দুই দশক অবৈধ বসবাস ১৮ লাখ ডলারের জরিমানা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 21-05-2025

দুই দশক অবৈধ বসবাস ১৮ লাখ ডলারের জরিমানা

দীর্ঘ ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পর হন্ডুরাস থেকে আগত এক অভিবাসী নারীকে ১৮ লাখ ২১ হাজার ৩৫০ ডলারের বিপুল অঙ্কের জরিমানা করেছে মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। দক্ষিণ ফ্লোরিডার এই ৪১ বছর বয়সী নারী তিনজন মার্কিন নাগরিক সন্তানের মা। নিরাপত্তার কারণে তার নাম প্রকাশ না করলেও ‘মারিয়া’ ছদ্মনামে পরিচিত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মারিয়া জানান, জরিমানার নোটিশ পাওয়ার পর থেকে তার জীবন এক আতঙ্কময় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমি আতঙ্কে থাকি, ঘুমাতে পারি না, নিজেকে অনুভব করতে পারি না, বলতে গিয়ে তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় এক মায়ের অসহায় আকুতি। তিনি বলেন, আমি ফিরে যেতে চাই না।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারিয়া ক্যালিফোর্নিয়া সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে একটি ইমিগ্রেশন শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে নির্বাসন আদেশ জারি করে আদালত। ওই আদেশ অনুযায়ী, প্রতিদিন অনুপস্থিতির জন্য তার নামে ৫০০ ডলার করে জরিমানা ধার্য হয়। চলতি বছরের ৯ মে আইস থেকে পাঠানো নোটিশে দেখা যায়, মোট জরিমানার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২১ হাজার ৩৫০ মার্কিন ডলার। মারিয়া জানান, সে সময় তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না এবং কোনো অফিসিয়াল নথিপত্রও পাননি। তিনি বলেন, আমি অফিসারকে বলেছিলাম, আমার এখানে কেউ নেই, কোথায় থাকব তাও জানি না। আমি কোনো নথি পাইনি।

মারিয়ার পক্ষে আইনি লড়াই করছেন অভিবাসন আইনজীবী মিশেল সানচেজ। তিনি বলেন, এটা একেবারে পাগলামি মনে হয়েছে। আমি যত মামলা দেখেছি, এটা তার মধ্যে সবচেয়ে অস্বাভাবিক ও অন্যায় একটি ঘটনা। সানচেজ ২০২৪ সালে মারিয়ার পক্ষে নতুন করে আবেদন করেন, যাতে উল্লেখ করা হয় দীর্ঘদিন বসবাস, অপরাধহীন জীবন এবং তার সন্তানদের কল্যাণের জন্য তিনি স্থায়ী বসবাসের যোগ্য। কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং পরের মাসেই আইস থেকে আসে বিশাল অঙ্কের জরিমানা চিঠি।

আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট (আইএনএ)-এর ধারা ২৭৪ডি অনুযায়ী, নির্বাসন আদেশ অমান্যকারীদের প্রতিদিন ভিত্তিতে আর্থিক জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মী ও অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের এমন প্রয়োগ অমানবিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মারিয়া বলেন, আমার সন্তানদের জন্ম, বেড়ে ওঠা-সবকিছুই এই দেশে। এই দেশই তাদের পৃথিবী, তাদের পরিচয়। আমাকে যদি আলাদা করে দেওয়া হয়, সেটা শুধু আমার নয়, আমার শিশুদের জন্যও চরম মানসিক যন্ত্রণা হবে। তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন একটি আকুতি দিয়ে, আমি দয়া প্রার্থনা করছি, আমাকে আমার সন্তানদের সঙ্গে থাকতে দিন।

এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান কঠোর অভিবাসন নীতির বাস্তবতা তুলে ধরে, যেখানে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে আইনি প্রক্রিয়া ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে এই জরিমানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছে। মারিয়ার ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে প্রশাসনের সদিচ্ছা ও সমাজ ও মিডিয়ার চাপের ওপর। এই মামলা একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে যে, অভিবাসন ন্যায়বিচার ও মানবিকতার মধ্যে ভারসাম্য কতটা রক্ষা করা হচ্ছে বা হচ্ছে না।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)