নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর ক্যাথি হোকুল গত ২০ মে মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কংগ্রেসের হাউজ রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত বাজেট বিল কার্যকর হলে নিউইয়র্ক স্টেটের স্বাস্থ্য খাতে প্রতিবছর প্রায় ১৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হবে। এই বিল মেডিকেইড এবং এসেনশিয়াল প্ল্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থায়নে ব্যাপক কাটছাঁট করতে যাচ্ছে। যার ফলে নিউইয়র্কে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারেন। গভর্নর হোকুল বলেন, হাউজ রিপাবলিকানরা বারবার সেইসব নিরাপত্তা কর্মসূচি কেটে ফেলার চেষ্টা করছে, যেগুলোর ওপর লক্ষ লক্ষ নিউইয়র্কার নির্ভর করেন। কোনো একটি রাজ্যের পক্ষেই এত বড় কাটা পূরণ করা সম্ভব নয়। নিউইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের এখনই তাদের নিজ নিজ জেলার মানুষের পক্ষে কথা বলতে হবে এবং এই বিধ্বংসী বাজেট প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট বিলের ফলে এসেনশিয়াল প্ল্যানের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন কাটা পড়বে, যার ফলে কয়েক লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য কভারেজ হারাবেন। একই সঙ্গে, প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় রাজ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, যা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চরম আর্থিক সংকটে ফেলবে।এছাড়াও, এনার্জি অ্যান্ড কমার্স কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, মেডিকেইড ব্যবস্থাপনায় কঠিন ও জটিল যাচাইকরণ প্রক্রিয়া প্রবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে মেডিকেইড পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে এবং প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে যাবে। রাজ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে, কেবল এই প্রশাসনিক খরচেই প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে নিউইয়র্কে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যবিমা হারাবেন।
নিউইয়র্ক স্টেটের স্বাস্থ্য কমিশনার ড. জেমস ম্যাকডোনাল বলেন, ফেডারেল বাজেটে এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে নিউইয়র্কে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কভারেজ হারালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি জানান, তারা প্রতিটি স্তরের সরকারের সঙ্গে কাজ করে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে লড়বেন।এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার একে “নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন” পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি প্রায় ১৪ মিলিয়ন আমেরিকানকে স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত করবে। নিউইয়র্কে এর প্রভাব পড়বে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষের ওপর। এটি কোনো বাজেট সাশ্রয় পরিকল্পনা নয়, বরং ধনীদের করছাড় দেওয়ার অজুহাতে দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা।
নিউইয়র্ক সিনেটর কিরস্টেন গিলিব্র্যান্ড বলেন, এই প্রস্তাব স্বাস্থ্য খাতের জন্য ধ্বংসাত্মক। অধিকাংশ মেডিকেইড গ্রহীতা নিজেরাই কর্মজীবী, অথচ তাদের উপর কাজের শর্ত আরোপ করা হচ্ছে, যা বাস্তবে কোনো সাশ্রয় আনবে না-বরং প্রশাসনিক ব্যয় বাড়াবে। হাউজ ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফরিস বলেন, এই প্রস্তাব আসলে ধনীদের করছাড় দেওয়ার একটি ছলনা। এর ফলে হাসপাতাল, নার্সিং হোম ও কমিউনিটি হেলথ সেন্টারগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিউইয়র্কের হাউজ রিপাবলিকানদের এখনই সাহসিকতার সঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কংগ্রেস সদস্য জেরল্ড ন্যাডলার বলেন, এই বিল শিশু, নারী, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি নৈতিকভাবে নিন্দনীয় এবং সমাজের সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর উপর সরাসরি আঘাত। প্রতিনিধি নিদিয়া ভেলাসকেস বলেন, এটি অভিবাসী, শ্রমজীবী এবং অনুন্নত সম্প্রদায়ের উপর একটি সংগঠিত আক্রমণ। এসেনশিয়াল প্ল্যানের অর্থায়ন কেটে নেওয়া এবং রাজ্য থেকে ১৩.৫ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়ার অর্থ-জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া। কংগ্রেস সদস্য ইভেট ক্লার্ক বলেন, এই বাজেট শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, সাধারণ মানুষের খাদ্য ও মৌলিক চাহিদা পূরণেও বাধা সৃষ্টি করবে। এটি প্রমাণ করে রিপাবলিকানরা ধনীদের করছাড় দিতে গরিবদের জীবন বিপন্ন করতেও রাজি।কংগ্রেস সদস্য পল টনকো বলেন, এই বাজেট নিউইয়র্কবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। মেডিকেইডে কাটছাঁট হলে মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। তিনি জানান, এই নিষ্ঠুর বাজেটের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। কংগ্রেস সদস্য গ্রেস মেং বলেন, আমার কুইন্স জেলায় শত শত হাজার মানুষ মেডিকেইড পায়। এই বাজেট তাদের জীবন অন্ধকারে ঠেলে দেবে এবং আমাদের হাসপাতাল ও হেলথ সেন্টারগুলো দেউলিয়া করে ফেলবে।
এই প্রস্তাবিত বাজেট বিল এখনো কংগ্রেসে চূড়ান্তভাবে পাস হয়নি। তবে এটি পাস হলে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। নিউইয়র্কের নেতারা একজোট হয়ে এই বিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।