কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করুন: টিআইবি


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 21-05-2025

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করুন: টিআইবি

কালো টাকা সাদা করার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল সুযোগ অধ্যাদেশের মাধ্যমে চিরতরে বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার বাতিলের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আরো কয়েকটি দুর্নীতিসহায়ক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক বিধান এখন রয়ে গেছে যা অনতিবিলম্বে বাতিল করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য অর্থ উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত ২০ মে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ২১বার এ সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। বিভিন্ন সরকারের আমলে বারবার দেওয়া এই অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা, যা সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে, দুর্নীতিকে পুরস্কৃত করে এবং দুর্নীতির বিস্তার ঘটায়। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সর্বশেষ বাজেটেও বিনা প্রশ্নে তা বহাল ছিলো। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল ঘোষণা করে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উক্ত ঘোষণা বৃহত্তর সংস্কারের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে স্বাগত জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার দুর্নীতিসহায়ক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক বিধান বাতিল করার বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। একইসঙ্গে, অর্থ উপদেষ্টার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধের প্রতিশ্রুতি আমাদের আশান্বিত করেছে। তবে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আয়কর আইন ২০২৩-এ অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার নামে কালো টাকার অর্থাৎ বৈধ আয় বহির্ভূত অর্থের বৈধতা প্রদানের তিনটি বিধান এখনও বিদ্যমান আছে। “বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শন; অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ প্রদর্শনে বিশেষ ব্যবস্থা: স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস এবং ভূমিতে আগে বিনিয়োগ ছিলো, কিন্তু তা অপ্রদর্শিত রয়ে গেছে, এমন হলে প্রতি বর্গমিটারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর পরিশোধ করে তা রিটার্নে দেখানো যাবে; আয়ের স্বপ্রণোদিত প্রদর্শন: আগে রিটার্ন দাখিল না করলে বা রিটার্ন দাখিল করে থাকলেও কোনো আয় রিটার্নে প্রদর্শন না করলে, ওই অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর নিয়মিত হারে কর প্রদান করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে তা বৈধ করা যাবে।” উক্ত বিধানসমূহ প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে চিরতরে বাতিল করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। কারণ, এ তিনটি ক্ষেত্রেই যেহেতু বৈধ সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য নিশ্চিতের বাধ্যবাধকতা নেই, সে কারণে অপ্রদর্শিত আয়ের নামে কালো টাকার বৈধতার সুযোগ নেওয়া হয়। যা সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তিন নম্বর সুপারিশেও বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যে কোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বারবার দেওয়া হলেও, এর ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণ কখনোই সেভাবে বাড়েনি। যতটুকু হয়েছে, তার জন্য নৈতিকতার বিসর্জন অগ্রহণযোগ্য। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে দৃষ্টান্ত স্থাপনের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে উল্লিখিত ধারাসমূহসহ কালো টাকা সাদা করার সকল প্রকার সুযোগ চিরতরে বাতিল করা হবে। এ বিষয়ে আমরা অর্থ উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছি। আশা করি, আমরা এর ইতিবাচক প্রতিফলন দেখতে পাবো।’


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)