অশান্তির চিত্র বদলে সর্বত্র স্বস্তি


মাসউদুর রহমান , আপডেট করা হয়েছে : 28-05-2025

অশান্তির চিত্র বদলে সর্বত্র স্বস্তি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভেতরে ও বাইরে আরেকটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এখান থেকে রক্ষা পেতে হবে। তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বিভাজন থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।” হঠাৎ তৈরি হওয়া অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে ২৫ মে রোববার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগ ভাবনার’ বিষয়টি সামনে আসার পর ২৪ মে শনিবার রাতে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন ইউনূস। বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে তিন দলই নিজেদের আগের অবস্থান তুলে ধরে। রোববার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার আরও ২০ দলের নেতাদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা, যা শেষ হয় রাতে। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে প্রেস সচিব বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন।

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করা নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এক কথার মানুষ। আমি কালও (শনিবার) বলেছি, আজও বলছি উনি এক কথার মানুষ। তিনি বারবার বলেছেন, ‘ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। জুলাইয়ের এক তারিখ পার হবে না’।”

রোডম্যাপের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, “যখন সময় আসবে, তিনি (মুহাম্মদ ইউনূস) রোডম্যাপ বা সিডিউল ঘোষণা করবেন।” সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে প্রধান উপদেষ্টা অপরাধবোধে ভুগবেন বলেও বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বলেছেন বলে তুলে ধরেন শফিকুল।

তিনি বলেন, স্যার (ইউনূস) তার বক্তব্যে বলেছেন, আমরা বড় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য যতভাবে সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে। এখান থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে। তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বিভাজন থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। ঐকমত্য থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু দাঁড়াতে পেরেছি, সেটা যেন সামনে এগোয়। সবাই একসঙ্গে আছেন আমি সাহস পাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে আমি অপরাধবোধ করব।

প্রেস সচিব বলেন, অভ্যুত্থানের কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশকে টেনে তোলার এ মহাসুযোগ কাজে লাগানোর কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। দলগুলোর নেতারা তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। সংস্কার, শুরু হওয়া বিচার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের জন্য যে কাজ চলছে, সেটির প্রতি তারা পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবেন। এটাই ছিল মূল বার্তা।

এদিকে রাজনৈতিক দলসমূহের সাপোর্টের পর দেশজুড়ে যে একটা শঙ্কা বিরাজ করছিল প্রফেসর ইউনূস থাকছেন কি থাকছেন না। তাহলে কী আওয়ামী লীগ আবারও ফিরবে? দেশে কী আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়াদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হবে? এমন শঙ্কায় বহু মানুষ নিশি জেগেছেন। দুশ্চিন্তায় অনেকেই মুষড়ে যান। শেষ পর্যন্ত ওই অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করেন তারা প্রফেসর ইউনূস পদত্যাগ করছেন না এ খবর প্রাপ্তির পর। একই সঙ্গে কেটে গেছে অনেক কালোমেঘও। সেনা সদর থেকে ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি বরং একসঙ্গে কাজ করছে। ২৬ মে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছে সেনা সদর। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।’ করিডর নিয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ। এ দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও ভালো মন্দের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। এ দেশকে ভালো রাখতে হলে আমাদেরকেই রাখতে হবে।’

ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, ‘সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে, ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়তই সরকারের সঙ্গে কাজ করছি, সরকারের নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি। দেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা কথা বলতেই পারে। এটা নিয়ে আমরা যেভাবে চিন্তা করছি যে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ রয়েছে, মিডিয়াতে বিষয়টি যেভাবে আসছে- এ রকম আসলেই কিছু হয়নি। সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। এটা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।’ 

এরপর সচিবালয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি নিয়ে আরেক দফা জটিলতা। সেটাও কদিন অশান্তভাবে চলার পর এখন কন্ট্রোলে নিয়ে নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার। আন্দোলন স্থগিত করে আলোচনার টেবিলে চলে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। যার অর্থ সেখানেও ফিরেছে শান্ত পরিবেশ। এরবাইরেও ছোটখাট যে সকল সমস্যা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্য হত্যাকান্ড, মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ নেয়ার বিষয়, বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সেটা সরকারের পক্ষে শক্ত হাতে দমন ও সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব। তাছাড়া বন্দর, মানবিক কোরিডোর নিয়েও যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল সরকার সেগুলোও দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কিছুতে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ সমস্যারও আপাতত সমাধান। সব মিলিয়ে গত কয়েকদিন বাংলাদেশ জুড়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও নানা বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশিত হয়। সেসবের অবসান। সেগুলোও বর্তমান পরিস্থিতিতে হালে পানি পাচ্ছে না। 

দেশের এসকল সমস্যার আপাতত সমাধান করে গত ২৭ মে মঙ্গলবার রাতেই জাপানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে বড় একটা বাজেট সহযোগিতাও প্রত্যাশা করছে প্রফেসর ইউনূস জাপানের কাছ থেকে। জানা গেছে বেশ কয়েকটি ট্রেনের উন্নয়ন বা বাস্তবায়নের জন্যও অলোচনা ও সহায়তা চাওয়া হতে পারে। আশা করা হচ্ছে চীন সফরের মত প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরও দেশের জন্য সাফল্য বয়ে নিয়ে আসবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)