অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট কতটা জনবান্ধব


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 04-06-2025

অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট কতটা জনবান্ধব

ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মিশনে থাকা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ আকর্ষণ, নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমান কর্মচারীদের চাকরির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সংস্থান করা অন্তর্বর্তী সরকারের ২০২৫-২৬ বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নের চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে কর আহরণ দুর্বলতার কারণে প্রতি বছর বিপুল বাজেট ঘাটতি হয়ে থাকে। তদুপরি পূর্ববর্তী সরকার ঋণ করে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হাতে নেওয়ায় দেনার দায়ে আর্থিক ব্যবস্থা নাজুক। এমনি পরিস্থিতিতে সরকারকে সীমিত সম্পদ নিয়ে বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হলো। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকারকে বাজেট বরাদ্দ রাখতে হয়েছে। অগ্রসরমান কিছু মেগা প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি কিছু অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্প হাতে নিতে হয়েছে। খাদ্য, জ্বালানি বিদ্যুৎখাতের জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন ছিল। আর্থিক খাতের রুগ্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য অর্থের প্রয়োজনও রাখার কথা। সব মিলিয়ে নুন আন্তে পান্তা ফুরোনোর দেশে অনেক ভেবে-চিনতে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। 

সরকারের অন্যতম প্রধান সমস্যা দুর্বল কর কাঠামো। দেশের সক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ করফাঁকি দিয়ে থাকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত। সরকার নীতি এবং বাস্তবায়ন দুই ভাগে ভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের কর, জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশের জন্য অনেক কম। ঋণ-সহায়তা বা উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদান ভিত্তি করে একটি দেশের উন্নয়ন বাস্তবায়ন অকল্পনীয়। তদুপরি একটি অনির্বাচিত সরকারকে বাজেট সহায়তা প্রদান করতে খুব কম দেশ আগ্রহী হবে।

বৈষম্যবিরোধী সফল আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা ছিল অবহেলিত স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে হয়তো কাক্সিক্ষত বাজেট বরাদ্দ। কিন্তু যতটুকু জেনেছি, অন্যান্য খাত যেমন- জ্বালানি, বিদ্যুৎ, কৃষি, খাদ্য, অবকাঠামো খাতের বিবেচনায় এবার শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে হয়তো প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না-ও রাখা হতে পারে। সরকার ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ চালু আছে। কিন্তু জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকট, ঋণসুবিধা সংকুচিত হয়ে আসার কারণে শিল্পগুলো ধুঁকছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে এবং আর্থিক খাতের অপেক্ষাকৃত উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। সরকারকে কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং জ্বালানি-বিদ্যুৎখাতকে প্রণোদনা দিতেই হবে। অনেক অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় সংকোচন করতে হবে। সরকার ভারতীয় ঋণের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কিছু প্রকল্প বাতিল করেছে। এগুলো নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজস্ব ব্যয়ে অবশিষ্ট কাজ সম্পাদনের। সব মিলিয়ে সরকার বহু হিসাব-নিকাশ করেই একটা জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করবে। সেটা কতটা জনবান্ধব হবে তা-ই এখন দেখার বিষয়।


বাজেটের সেকাল একাল 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করলেন। এটি দেশের ৫৪তম বাজেট এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমেদ ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট হবে বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের প্রথম বাজেট। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

নিচে ক্রমানুসারে বাংলাদেশের ৫৩টি জাতীয় বাজেট একনজরে তুলে ধরা হলো। এখানে বাজেটের পরিমাণ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়েছে। 

অর্থবছর, উপস্থাপক, মোট বাজেট-বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) :

১৯৭২-৭৩ তাজউদ্দীন আহমেদ-৭৮৬ কোটি টাকা-৫০১ কোটি টাকা।

১৯৭৩-৭৪ তাজউদ্দীন আহমেদ-৯৯৫ কোটি টাকা-৫২৫ কোটি টাকা।

১৯৭৪-৭৫ তাজউদ্দীন আহমেদ-১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা- ৫২৫ কোটি টাকা।

১৯৭৫-৭৬ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক-১ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা-৯৫০ কোটি টাকা।

১৯৭৬-৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান-১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা-১ হাজার ২২২ কোটি টাকা।

১৯৭৭-৭৮ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান-২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা-১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।

১৯৭৮-৭৯ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান-২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা-১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

১৯৭৯-৮০ ড. এম এন হুদা-৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা-২ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।

১৯৮০-৮১ এম সাইফুর রহমান-৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা- ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

১৯৮১-৮২ এম সাইফুর রহমান-৪ হাজার ৬৭৭ কোটি-৩ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

১৯৮২-৮৩ এ এম এ মুহিত-৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা-২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

১৯৮৩-৮৪ এ এম এ মুহিত-৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা-৩ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।

১৯৮৪-৮৫ এম সাইয়েদুজ্জামান-৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা- ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।

১৯৮৫-৮৬ এম সাইয়েদুজ্জামান-৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা -৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

১৯৮৬-৮৭ এম সাইয়েদুজ্জামান-৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা -৪ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।

১৯৮৭-৮৮ এম সাইয়েদুজ্জামান-৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা- ৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা।

১৯৮৮-৮৯ মেজর জেনারেল মুনিম-১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা-৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।

১৯৮৯-৯০ ড. ওয়াহিদুল হক-১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা- ৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা।

১৯৯০-৯১ মেজর জেনারেল মুনিম-১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা-৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা।

১৯৯১-৯২ এম সাইফুর রহমান-১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা-৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

১৯৯২-৯৩ এম সাইফুর রহমান-১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা-৯ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।

১৯৯৩-৯৪ এম সাইফুর রহমান-১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা-৯ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

১৯৯৪-৯৫ এম সাইফুর রহমান-২০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা-১১ হাজার কোটি টাকা।

১৯৯৫-৯৬-এম সাইফুর রহমান-২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা-১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

১৯৯৬-৯৭ শাহ এ এম এস কিবরিয়া-২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা-১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

১৯৯৭-৯৮ শাহ এ এম এস কিবরিয়া-২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা-১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

১৯৯৮-৯৯ শাহ এ এম এস কিবরিয়া-২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা-১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

১৯৯৯-২০০০ শাহ এ এম এস কিবরিয়া-৩৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা-১২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।

২০০০-০১ শাহ এ এম এস কিবরিয়া-৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা-১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

২০০১-০২ শাহ এ এম এস কিবরিয়া-৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা-১৯ হাজার কোটি টাকা।

২০০২-০৩ এম সাইফুর রহমান-৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা-১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

২০০৩-০৪-এম সাইফুর রহমান-৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা-২০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

২০০৪-০৫ এম সাইফুর রহমান-৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা-২২ হাজার কোটি টাকা।

২০০৫-০৬ এম সাইফুর রহমান-৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা-২৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।

২০০৬-০৭ এম সাইফুর রহমান-৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা-২৬ হাজার কোটি টাকা।

২০০৭-০৮ মির্জা আজিজুল ইসলাম-৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা-২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

২০০৮-০৯ মির্জা আজিজুল ইসলাম-৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা-২৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০০৯-১০ এ এম এ মুহিত-১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা-২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

২০১০-১১ এ এম এ মুহিত-১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা-৩৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।

২০১১-১২ এ এম এ মুহিত-১ লাখ ৬১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা-৪১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।

২০১২-১৩ এ এম এ মুহিত-১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা-৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ এ এম এ মুহিত-২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা-৬০ হাজার কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ এ এম এ মুহিত-২ লাখ ৫০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা-৭৫ হাজার কোটি টাকা।

২০১৫-১৬ এ এম এ মুহিত-২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা-৯৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ এ এম এ মুহিত-৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা-১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ এ এম এ মুহিত-৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা-১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ এ এম এ মুহিত-৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা-১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯-২০ আ হ ম মুস্তফা কামাল-৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা-২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

২০২০-২১ আ হ ম মুস্তফা কামাল-৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা-২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

২০২১-২২ আ হ ম মুস্তফা কামাল-৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা-২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ আ হ ম মুস্তফা কামাল-৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা-২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ আ হ ম মুস্তফা কামাল-৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা-২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ এ এইচ মাহমুদ আলী-৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা-২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

২০২৫-২৬ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা-২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। 

এ এম এ মুহিত ও এম সাইফুর রহমান বিভিন্ন মেয়াদে সর্বোচ্চ ১২টি করে বাজেট পেশ করেছেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)