টেক্সাসে ড্রিম অ্যাক্ট টিকে গেল


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 04-06-2025

টেক্সাসে ড্রিম অ্যাক্ট টিকে গেল

অভিবাসন ইস্যুতে তীব্র রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেও টেক্সাসের মানুষ রাস্তায় নেমে টেক্সাসে ড্রিম অ্যাক্ট বহাল রেখেছেন। এই বিজয় নিশ্চিত করেছে, অভিবাসন স্ট্যাটাস যাই হোক না কেন, টেক্সাসের সব হাই স্কুল স্নাতক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন না। ২০০১ সালে গৃহীত এই ঐতিহাসিক আইনটি বাতিলের উদ্দেশ্যে এবারের ৮৯তম টেক্সাস আইনসভায় ৯টি পৃথক বিল উত্থাপিত হয়েছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এইচবি ২৩২ এবং এসবি ১৭৯৮। বিশেষ করে এসবি ১৭৯৮ বিলটি সিনেটের ইন্টেন্ট ক্যালেন্ডার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টিকে থাকা একটি দ্বিদলীয় নীতির ভিত্তি কতটা নড়বড়ে হয়ে উঠেছিল তা দেখিয়ে দিয়েছিল। তবে টেক্সাসজুড়ে ব্যবসা, শিক্ষা, ধর্মীয় ও কমিউনিটি নেতাদের সম্মিলিত ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বিলটি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠতে পারেনি।

টেক্সাস ড্রিম অ্যাক্ট সেইসব অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের ইন-স্টেট টিউশন সুবিধা দেয়, যারা অন্তত তিন বছর টেক্সাসে বসবাস করেছেন, টেক্সাসের কোনো হাই স্কুল থেকে স্নাতক হয়েছেন অথবা জিইডি অর্জন করেছেন এবং যারা স্থায়ী আবাসিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হলফনামা দিয়েছেন। এই নীতি কেবল সামাজিক ন্যায়ের প্রতিনিধিত্বই করে না, এটি একটি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই উদ্যোগও। ২০২১ সালে এই আইন অনুযায়ী পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা-যাদের ‘অ্যাফিডেভিট স্টুডেন্ট’ বলা হয়, টেক্সাসের পাবলিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৮১.৬ মিলিয়ন ডলার টিউশন ও ফি প্রদান করেছেন। এই আইন বাতিল হলে রাজ্য প্রতি বছর প্রায় ৪৬১ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতো।

একজন সাবেক অ্যাফিডেভিট স্টুডেন্টের ভাষায়, ড্রিম অ্যাক্টের মতো নীতিগুলো কেবল আইনের কয়েকটি ধারা নয়-এগুলো জীবনের রূপরেখা। এগুলো সম্ভাবনার নকশা। যদি আমরা ভাঙা জায়গাগুলোর পূর্ণতাকে দেখতে শিখি, তাহলে হয়তো আরো ভালো কিছু গড়ে তুলতে পারি। এইচবি ২৩২ এবং এসবি ১৭৯৮ বিল দুটি নিয়ে যখন শুনানি হয়, তখন ব্যবসায়ী নেতারা অত্যন্ত সক্রিয় ও সরবভাবে এর বিরোধিতা করেন। টেক্সাস অ্যাসোসিয়েশন অব বিজনেস, গ্রেটার হাউস্টন পার্টনারশিপ, নর্থ টেক্সাস কমিশন, টেক্সানস ফর ইকোনমিক গ্রোথসহ অনেক বাণিজ্যিক সংগঠন অর্থনৈতিক যুক্তির ভিত্তিতে এই বিলগুলোর বিরোধিতা করে। জনসাধারণের প্রতিক্রিয়াও ছিল ব্যাপক। টেক্সাস হাউস কমিটির কাছে জমা পড়া মন্তব্যের ৯৭ শতাংশই ছিল এইচবি ২৩২-এর বিরুদ্ধে। এক ডালাসের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, টেক্সাসের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো এর মানুষ। যারা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চায়, তাদের বিনিয়োগ করলে সবাই উপকৃত হয়।

এই সম্মিলিত পদক্ষেপই পার্থক্য গড়ে দেয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের আইনপ্রণেতারা এমন সব কণ্ঠস্বর শুনেছেন, যারা সাধারণত অভিবাসন ইস্যুতে প্রকাশ্যে অংশ নেন না, যেমন ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা ও স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠকরা। এতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ড্রিম অ্যাক্ট কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়-এটি একটি বাস্তবসম্মত এবং ভবিষ্যতমুখী বিনিয়োগ। তবে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে। যদিও এই প্রচেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হয়েছে, তবে এবারের বিলগুলো আগের তুলনায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। উদ্বেগের বিষয় হলো, ২৬ মে যখন নিশ্চিত হয়ে যায় যে এসবি ১৭৯৮ বিলটি আর পাস হচ্ছে না, তখনো দুজন সিনেটর এই বিলের সহ-লেখক হিসেবে যুক্ত হন। এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, এই বিল ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রচারে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

একটি দীর্ঘস্থায়ী, দ্বিদলীয় শিক্ষা নীতিকে রাজনৈতিক বিভাজনের অস্ত্র বানানো হতাশাজনক। এটি শুধু পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে না, বরং রাজ্যের অর্থনীতিকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। যেখানে কিছু রাজ্য-যেমন ফ্লোরিডা-অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের ইন-স্টেট টিউশন সুবিধা বাতিল করেছে, সেখানে টেক্সাস বিপরীত পথে হেঁটেছে। তারা নেতৃত্ব দিয়েছে, পিছিয়ে যায়নি। আইনপ্রণেতারা মানুষের কণ্ঠ শুনেছেন, তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন, এবং রাজনীতি নয়, ভবিষ্যতের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ড্রিম অ্যাক্ট বজায় রেখে টেক্সাস প্রমাণ করেছে-তারা জাতীয় নেতৃত্বে প্রস্তুত এবং শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই আইনসভা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল-যখন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ একতাবদ্ধ হয়, তখন ভবিষ্যৎ আরো উজ্জ্বল হয়। আর যখন আমরা ভয়ের পরিবর্তে সত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিই, তখনই আমরা গড়ে তুলতে পারি একটি আরো শক্তিশালী, আরো মানবিক টেক্সাস।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)