আদালতের রায়ে ফ্লোরিডার বিতর্কিত অভিবাসনবিরোধী আইন স্থগিত


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 11-06-2025

আদালতের রায়ে ফ্লোরিডার বিতর্কিত অভিবাসনবিরোধী আইন স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম সার্কিট কোর্ট অব আপিলস গত ৬ জুন শুক্রবার ফ্লোরিডা স্টেস্টের বিতর্কিত অভিবাসনবিরোধী আইন এসবি-৪ সি প্রয়োগে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে। আদালত স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস উথমিয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দিয়েছে, এই আইন ফেডারেল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অন্তত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর করা যাবে না। এসবি-৪ সি আইন অনুযায়ী, কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের ফ্লোরিডায় প্রবেশকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, এমনকি জামিন ছাড়াই আটক রাখার বিধান ছিল। এই আইনের আওতায় বেশ কয়েকটি গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিকও ভুলভাবে গ্রেফতার হন।

এই আইনের বিরুদ্ধে ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশন, ফার্মওয়ার্কার অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা এবং ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনের পক্ষে মামলা করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে ফেডারেল জেলা আদালত আইনটির বিরুদ্ধে প্রাথমিক স্থগিতাদেশ জারি করেন। এরপর ফ্লোরিডা কর্তৃপক্ষ এই আদেশ বাতিলের জন্য আপিল করে, কিন্তু তিন বিচারকের একটি সর্বসম্মত প্যানেল আপিল প্রত্যাখ্যান করে আইনটির কার্যকারিতা স্থগিতই রেখেছেন। আদালতের মতে, অভিবাসননীতি হচ্ছে ফেডারেল সরকারের বিষয় এবং কংগ্রেস ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে ব্যাপক আইন প্রণয়ন করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে ফ্লোরিডার এই আইন ফেডারেল আইনের পরিপন্থী।

এছাড়াও আদালত উল্লেখ করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল উথমিয়ের একটি চিঠি, যেখানে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জেলা আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে এসবি-৪সি কার্যকর করার আহ্বান জানান, যা আদালতের অবমাননার মতো। এই বিষয়ে একটি আলাদাভাবে শুনানি চলেছে এবং আদালত উথমিয়ের আচরণকে ‘অবজ্ঞাপূর্ণ ও আদালতের আদেশ অমান্য করার হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দেন।

এসিএলইউ, ইমিগ্র‍্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের উপ-পরিচালক কোডি উফসি বলেন, এখন পর্যন্ত এই ধরনের প্রতিটি আইনকেই বিভিন্ন আদালত অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। এখন সময় এসেছে রাজ্যগুলো এই বার্তা বুঝে নিক: অভিবাসন বিষয়ক রাজ্য আইন সংবিধানবিরোধী। এসিএলইউ ফ্লোরিডার নির্বাহী পরিচালক বাকার্দি জ্যাকসন বলেন, এই রায় কেবল আইনি জয় নয়, এটি একটি নৈতিক জয়ের বার্তাও। ফ্লোরিডার আইনপ্রণেতারা ভয়ভীতি ও বর্ণবৈষম্যের ভিত্তিতে আইন বানিয়ে অভিবাসীদের টার্গেট করেছিল, কিন্তু সংবিধান রাজনৈতিক নাটকের কাছে মাথা নত করে না। এসবি-৪ সি আইনের মাধ্যমে অভিবাসীদের ফ্লোরিডায় প্রবেশ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো এবং অনেককেই বিচারপূর্ব আটকাদেশে রাখা হতো। বাদীপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে থাকা অভ্যন্তরীণ চলাফেরার স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে এবং অভিবাসন সংক্রান্ত ফেডারেল আইনকে অগ্রাহ্য করে।

আমেরিকানস ফর ইমিগ্রান্ট জাস্টিসের আইনি পরিচালক পল আর চাভেজ বলেন, এই আদেশ আমাদের মক্কেলসহ ফ্লোরিডার অসংখ্য মানুষকে একটি নিষ্ঠুর ও অবৈধ আইন থেকে রক্ষা করেছে। এসবি-৪ সি মানুষকে কেবল তাদের অস্তিত্বের জন্যই শাস্তি দিচ্ছিল। আজ সংবিধান জয়ী হয়েছে। এই রায় পুরোপুরি আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি নয়, তবে এটি ফ্লোরিডার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে থাকা অবৈধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিকে কেন্দ্র করে চলমান আইনি লড়াইয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকল।

ওকলাহোমার অভিবাসনবিরোধী আইন এইচবি ৪১৫৬ সাময়িকভাবে স্থগিত ফেডারেল আদালতের

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে অভিবাসীদের লক্ষ্য করে প্রণীত বিতর্কিত আইন এইচবি ৪১৫৬-এর কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব ওকলাহোমার ফেডারেল আদালত। আদালতের দেওয়া এই প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আইনটি কার্যকর করা যাবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আইনটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থী, কারণ অভিবাসন-সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিমালা নির্ধারণের পূর্ণ এখতিয়ার শুধু ফেডারেল সরকারের কোনো অঙ্গরাজ্যের নয়। ২০২৪ সালে পাস হওয়া এইচবি ৪১৫৬ আইন অনুযায়ী, যারা ‘অননুমোদিত অভিবাসী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাদের ওকলাহোমা রাজ্যে প্রবেশ বা সেখানে অবস্থান করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। এমনকি যারা আশ্রয়প্রার্থী বা বৈধ অভিবাসনের জন্য আবেদন করছেন, তারাও এই আইনের আওতায় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন। এই আইনের মাধ্যমে রাজ্য পুলিশকে অভিবাসীদের গ্রেফতার করার, তাদের জেলহাজতে পাঠানোর এবং রাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। অথচ অভিবাসন-সংক্রান্ত এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারণ এবং আইন প্রয়োগের পূর্ণ কর্তৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের। কোনো অঙ্গরাজ্যের নয়।

এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), এসিএলইউ অব ওকলাহোমা এবং তুলসাভিত্তিক আইন সংস্থা রিভার্স অ্যাসোসিয়েটস। বাদী হিসেবে ছিলেন ওকলাহোমাভিত্তিক অভিবাসী সংগঠন প্যাড্রেস উনিডোস দে টুল্স এবং একাধিক ব্যক্তি, যারা এই আইনের কারণে অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন। মামলায় যুক্তি তুলে ধরা হয়, এই আইনটি মার্কিন সংবিধানের ‘সুপ্রিমেসি ক্লাউসে’ লঙ্ঘন করে, কারণ অভিবাসন সম্পর্কিত নীতিমালা শুধু ফেডারেল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণাধীন।

এসিএলইউয়ের অভিবাসী অধিকার প্রকল্পের সিনিয়র আইনজীবী নূর জাফর বলেন, প্রতিদিনই এইচবি-৪১৫৬ কার্যকর থাকলে অভিবাসীদের জন্য বিপদের কারণ হতো। আদালতের রায় অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। এসিএলইউ অব ওকলাহোমার আইনি পরিচালক মেগান ল্যাম্বার্ট বলেন, আদালত পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অভিবাসন পরিচালনায় রাজ্যের কোনো এখতিয়ার নেই। অভিবাসীরা আমেরিকায় একটি ভালো জীবনের খোঁজে আসে। এই ধরনের বৈষম্যমূলক আইন আমাদের রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে না। তুলসাভিত্তিক আইনজীবী লোরেনা রিভাস বলেন, এই রায় আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য স্বস্তির বার্তা। রাজ্য যেন অভিবাসনকে কেন্দ্র করে অমানবিক আচরণ ও পরিবার বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্র না হয়ে ওঠে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত সেটাই নিশ্চিত করেছে।

যদিও এটি মামলার চূড়ান্ত রায় নয়, তবে আদালতের এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞার ফলে আপাতত এইচবি-৪১৫৬ আইনটি বলবৎ করা যাবে না। এটি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অন্যায় আচরণ থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে এবং মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী ফেডারেল নীতির কর্তৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)