উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস : ঢেউ পুরো দেশেই


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 11-06-2025

উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস : ঢেউ পুরো দেশেই

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নিয়ে বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার মসনদে বসার পর থেকেই এ বিষয়ে নেওয়া তার পদক্ষেপের কারণে বহুবার সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি। বরাবরই এসব উপেক্ষা করে নিজের নীতিতেই অটল থেকেছেন ট্রাম্প। এবার অতীতের সব একগুয়েমির মাত্রা ছাড়িয়ে নিজের অভিবাসী বিদ্বেষ প্রতিষ্ঠায় রীতিমতো স্বৈরাচীর পথে হাঁটলেন ট্রাম্প। তার অভিবাসন হঠানো নীতিতে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির ‘অভিবাসী রাজ্য’ হিসাবে পরিচিত ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। যার ঢেউ আছড়ে পড়ছে পুরো দেশজুড়েই। গত ৬ জুন শুক্রবার শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন সহিংস সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।

১০ জুন মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৫ দিন ধরেই চলছে এ বিক্ষোভ, ধরপাকড়। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরে প্রায় ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের মতো বিতর্কিত পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এখানেই শেষ নয়- ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একের পর এক এমন সিদ্ধান্তকে ‘স্বৈরাচারী পদক্ষেপ’ বলে নিন্দা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।

৯ জুন সোমবার নিউসম জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন। এর আগেও ২,০০০ সেনা মোতায়েন করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে ১৭০০ সেনা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পর প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্ট রাজ্যের গভর্নরের অনুমতি না নিয়েই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করলেন। গভর্নরের মতামত ছাড়াই লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন গভর্নর নিউসম।

ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে বিবেচনা করছে। তারা অভিযোগ করেছেন, এই মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘন করছে এবং ফেডারেল সরকারের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। সোমবার সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালতে করা মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং প্রতিরক্ষা বিভাগকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেছেন, ‘ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে রাজ্যের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। তাই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে বেআইনি ঘোষণা করতে আদালতকে অনুরোধ করা হবে। সে সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে।’

এদিকে অভিবাসীদের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার পঞ্চম দিনেও লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ হয়েছে। যা টেক্সাসসহ বোস্টন, হিউস্টন, এবং ফিলাডেলফিয়া শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ডালাস, আটলান্টাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। এরই মধ্যে বিক্ষোভে ৬০০টিরও বেশি রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। শুক্রবার বিক্ষোভ শুরুর পরপরই একটি কর্মস্থল থেকে ৪৪ জন অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই দিনে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে আরও ৭৭ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, লুটপাট, সহিংসতা এবং অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে।

শনিবার রাতে বিক্ষোভে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ ২৯ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া রোববার পুলিশের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে শহরের কেন্দ্র থেকে আরও ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ দিন সান ফ্রান্সিসকোতে আরও ৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অব্যাহত অভিবাসন অভিযান। দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভকারীরা ফেডারেল এজেন্টদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। যার ফলে শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের বিচারের আওতায় আনার হুমকি দিয়েছেন। গত ৭ জুন দক্ষিণ-পূর্ব লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যারামাউন্ট এলাকায় একটি দোকানের বাইরে অভিবাসীদের আটকের খবর সামনে আসার পর নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একই রকম বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কে। 

লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীরা কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গ করে এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানায়। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে একজন জানান, ‘কোনো মানুষ অবৈধ নয়।’

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সচিব ক্রিস্টি নয়েম সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘এলএ দাঙ্গাবাজদের’ সম্বোধন করে একটি বার্তা পোস্ট করেছেন, সতর্ক করে দিয়েছেন, অভিবাসন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি আমাদের থামাবেন না বা আমাদের গতি কমাতে পারবেন না। আইসিই আইন প্রয়োগ করবে এবং যদি আপনি কোনো আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তার ওপর হাত তোলেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ পরিসরে মামলা করা হবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত জার, টম হোমান, ফক্স নিউজকে বলেছেন যে, শনিবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়। ইতিমধ্যেই আইসিই এজেন্টরা শহরে আইনপ্রয়োগকারী অভিযান পরিচালনা করে অভিবাসন লঙ্ঘনের অভিযোগে কমপক্ষে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরপর বিক্ষোভ মাথাচাড়া দেয়। 

বিক্ষোভকারীরা লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলিতে এডওয়ার্ড আর রয়েল ফেডারেল বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথ এবং প্রস্থান পথ বন্ধ করে দেয়, যেখানে আটক ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘১ হাজার দাঙ্গাবাজ একটি ফেডারেল আইনপ্রয়োগকারী ভবন ঘিরে ফেলে এবং আইসিই আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। ভবন এবং করদাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত সম্পত্তি নষ্ট করে।’

অভিবাসন-সংক্রান্ত কঠোর ব্যবস্থা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির অংশ, যেখানে তিনি রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে কাগজপত্র ছাড়াই দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কারণ হোয়াইট হাউস আইসিইয়ের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার অভিবাসীকে গ্রেফতারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু দেশে বৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিরা তারাও ব্যাপক অভিবাসন দমন অভিযানের কবলে পড়েছেন। প্যারামাউন্ট এলাকার কাছে লস অ্যাঞ্জেলেসের কম্পটন থেকে আল জাজিরার রিপোর্টার রবার্ট রেনল্ডস জানিয়েছেন, শনিবার পুলিশ ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস এবং ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করে।

শনিবারের বিক্ষোভ এবং অভিবাসন তল্লাশির খবরে আইসিই বা ডিএইচএসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষডুকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। লস অ্যাঞ্জেলেসের ডেমোক্রেটিক মেয়র কারেন নিউসাম গত ৬ জুন এক বিবৃতিতে অভিবাসন তল্লাশির নিন্দা জানিয়েছেন। বাস বলেন, ‘যা ঘটেছে তাতে আমি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। এই কৌশলগুলো আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাসের বীজ বপন করে এবং আমাদের শহরের নিরাপত্তার মৌলিক নীতিগুলোকে ব্যাহত করে। আমরা এটি মেনে নেবো না।’

এদিকে নিউইয়র্কেও ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছেন।

ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ

তবে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উসকানি’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ঘাটতির কারণে নয়, বরং তারা একটি নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে চান। এ সময় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাদের (ট্রাম্প প্রশাসনকে) সে সুযোগ দেবেন না। কখনো সহিংস হবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করুন।’

ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরোধিতা করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নও (এসিএলইউ)। মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর ট্রাম্পের নির্দেশ ‘অপ্রয়োজনীয়, উসকানিমূলক ও ক্ষমতার অপব্যবহার’।

এসিএলইউর ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রজেক্টের পরিচালক হিনা শামসি বলেন, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের ‘ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে’।

এদিকে বিক্ষোভ দমনে প্রয়োজনে লস অ্যাঞ্জেলেসে মেরিন সেনা মোতায়েনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি জানান, লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় ক্যাম্প পেন্ডলটনে থাকা মেরিন সেনারা মোতায়েনের জন্য ‘উচ্চ সতর্কতায়’ রয়েছেন। বিক্ষোভ মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা দিয়ে শনিবার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ওই ঘাঁটির মেরিন সেনাদেরও মোতায়েন করা হতে পারে।

বিক্ষোভকারীদের শহর ছাড়ার নির্দেশ পুলিশের, লুটপাটের অভিযোগ

অভিবাসনবিরোধী তল্লাশির জেরে তৃতীয় দিনেও উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কেন্দ্রস্থল। এদিন যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের অবিলম্বে শহর থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তারা। বিবিসির লাইভ আপডেটে বলা হয়েছে, রাতভর অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লস অ্যাঞ্জেলেসের শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে ওই এলাকার কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট হয়েছে বলে জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি)। এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এলএপিডি সেন্ট্রাল ডিভিশন লিখেছে, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অভিযোগ করছেন যে, সিক্সথ স্ট্রিট এবং ব্রডওয়ে এলাকায় দোকান লুট করা হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করতে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন।’

বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোতায়েন করা ন্যাশনাল গার্ড ইউনিটগুলো বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিস্থিতি সত্যিই খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রয়োজনে আরো সেনা মোতায়েন করা হবে।’ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন না করলে লস অ্যাঞ্জেলেসের অবস্থা খারাপ হতো।

যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ট্রাম্পকে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এটিকে ‘অবৈধ’ কাজ বলে অভিহিত করেন। 

মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ

গত ৯ জুন নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘মুখে মাস্ক পরা ব্যক্তিদের এখনই গ্রেফতার করুন।’ এর আগে একাধিকবার তিনি মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করে আসছিলেন। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, মাস্ক ব্যবহার করে অনেকেই নিজেদের পরিচয় গোপন করে সহিংসতায় জড়াচ্ছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিক্ষোভ চলাকালে কেউ মাস্ক পরলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে গত ৬ জুন লস অ্যাঞ্জেলেসের উপশহর প্যারামাউন্টে অভিবাসনবিরোধী অভিযান। ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানটির লক্ষ্য ছিল নথিপত্রহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা। তবে অভিযান শুরুর পর থেকেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।

প্রধানত মেক্সিকো এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের বসবাস এই প্যারামাউন্ট এলাকায়। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ জুন শহরে মোতায়েন করা হয় মার্কিন ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সদস্য। তবে সেনা মোতায়েনের পরও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। সরকারি ভবন ও অফিসগুলোতে সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জের মাধ্যমে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছে।

এখন পর্যন্ত সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও সহিংসতার অভিযোগে অন্তত ২০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং মাস্ক পরিহিত সক্রিয় বিক্ষোভকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টার্গেট করা হচ্ছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)