নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ‘ন্যূনতম মজুরি’ বড় ইস্যু


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 18-06-2025

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ‘ন্যূনতম মজুরি’ বড় ইস্যু

নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন ২০২৫ সালের মেয়র নির্বাচনে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি অন্যতম প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। যদিও সিটি প্রশাসনের সরাসরি মজুরি নির্ধারণের ক্ষমতা নেই, তবুও বিভিন্ন প্রার্থী তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন উচ্চ মজুরি প্রস্তাব দিয়ে। অধিকাংশ মেয়র প্রার্থীই মনে করেন, বর্তমান ঘণ্টাপ্রতি ১৬.৫০ ডলার মজুরি নগরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য পুরোপুরি অপ্রতুল। সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস প্রস্তাব করেছেন, ন্যূনতম মজুরি কমপক্ষে ২০ ডলার করার এবং তা যেন প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় হয়। তার মতে, একবার মজুরি বাড়ালেই হবে না-নিয়মিত সমন্বয়ই নিশ্চিত করবে জীবনের মানোন্নয়ন। অন্যদিকে অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি আরো উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি ‘৩০ বাই ২০৩০’ পরিকল্পনার আওতায় ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ৩০ ডলার করার দাবি জানিয়েছেন। মামদানি এটিকে শুধু ন্যূনতম নয়, বাসযোগ্য মজুরি হিসেবে চিহ্নিত করছেন, যা তরুণ ও সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

স্টেট সিনেটর জেসিকা রামোস ২০২৩ সালে রাজ্য সিনেটে ‘রেইজ দ্য ওয়েজ অ্যাক্ট’ উত্থাপন করেন, যেখানে ২০২৬ সালের মধ্যে ২১.২৫ ডলার মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব ছিল। যদিও তিনি প্রথমে ২৬ ডলার মজুরির প্রস্তাব দেন, যা রেইজ আপ এনওয়াই প্রত্যাখ্যান করেছিল। রামোস বর্তমানে ৩০ ডলার মজুরির প্রতি সমর্থন দেখে আশাবাদী এবং বিশ্বাস করেন এটি নিউইয়র্কের বাস্তবতা অনুযায়ী যৌক্তিক।

সিটি কম্পট্রোলার ব্র‍্যাড ল্যান্ডার ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ২৪ ডলার করার পক্ষে। অতীতে তিনি সিটি কাউন্সিলে খাবার সরবরাহকারী ও অ্যাপভিত্তিক গাড়িচালকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে আইনি ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর সমালোচনা করে বলেন, কুয়োমো ২০২৭ সালের মধ্যে ২০ ডলার মজুরির প্রস্তাব করলেও তা বাস্তবতার তুলনায় অপর্যাপ্ত ও পশ্চাৎমুখী।

প্রাক্তন গভর্নর কুয়োমো ও প্রাক্তন সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিঙ্গার সরাসরি জরিপে অংশ না নিলেও, স্ট্রিঙ্গারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তিনি ঘণ্টাপ্রতি ২০ ডলার মজুরি সমর্থন করেন। কুয়োমো নিজেকে ১৫ ডলার মজুরির বাস্তবায়ক দাবি করলেও ইতিহাস বলছে, ২০১৪ সালে মেয়র ডি ব্লাসিওর উচ্চ মজুরি প্রস্তাব তিনি নাকচ করেন এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবও তিনি কখনো সমর্থন করেননি। এ নিয়ে শ্রমিক মহলে তার অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

প্রার্থী হুইটনি টিলসন ধাপে ধাপে মজুরি বৃদ্ধির পক্ষপাতি। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে ১৮ ডলার, ২০২৭ সালে ১৯ ডলার এবং ২০২৮ সালে ২০ ডলার মজুরি নির্ধারণ করা হবে। তিনি মনে করেন, হঠাৎ বড় বৃদ্ধি ছোট ব্যবসার জন্য চাপ তৈরি করতে পারে। তাই তিনি ‘নিশ্চিত ও ধীরগতির উন্নয়ন’-এর পক্ষে যুক্তি দেন।

অন্যদিকে মাইকেল ব্লেক সরাসরি ন্যূনতম মজুরির পরিবর্তে ‘বাসযোগ্য মজুরি’র ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে একজন কর্মীর বাসযোগ্য মজুরি ঘণ্টায় ৬৭ ডলারেরও বেশি হওয়া উচিত। তার ভাষায়, শুধু টিকে থাকার মতো মজুরি নয়, উন্নত জীবনযাপনের উপযোগী আয় নিশ্চিত করা দরকার।

সার্বিকভাবে বলা যায়, ২০২৫ সালের এই নির্বাচনে ন্যূনতম মজুরি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিয়েছে। কেউ র‌্যাডিকাল রূপান্তরের পক্ষপাতি, কেউ ধাপে ধাপে উন্নয়নের কথা বলছেন। তবে সবাই একমত যে বর্তমান ১৬.৫০ ডলার মজুরি নিউইয়র্ক সিটির উচ্চ ব্যয়ভার সামলাতে যথেষ্ট নয়। অর্থনৈতিক বাস্তবতা, শ্রমিক চাহিদা এবং রাজনীতির জটিল সমীকরণে এই ইস্যু ভোটারদের সিদ্ধান্তে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)