রিকার্স আইল্যান্ডের কারাগারে ইমিগ্রেশন অফিস খোলার উদ্যোগে আদালতের বাধা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 18-06-2025

রিকার্স আইল্যান্ডের কারাগারে ইমিগ্রেশন অফিস খোলার উদ্যোগে আদালতের বাধা

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রশাসনের বিরুদ্ধে রিকার্স আইল্যান্ডের কারাগারে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টদের অফিস খোলার পরিকল্পনার নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের দায়ের করা মামলায় গত ১৩ জুন ম্যানহাটনের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মেরি রোসাডো অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল অভিযোগ করেছে, মেয়র অ্যাডামস ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে এক ‘দুর্নীতিপূর্ণ সমঝোতার’ ফলে এই নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছিল। সেই চুক্তির অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইস) রিকার্স দ্বীপে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। বিচারক রোসাডো বলেন, নিউইয়র্ক সিটি, যা অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সেই সম্মান ও বিশ্বাস হারাতে পারে। তিনি আরো বলেন, সিটি কাউন্সিল এই মামলায় সাফল্য লাভের সম্ভাবনা রাখে, অন্ততপক্ষে এটুকু প্রমাণ করতে যে মেয়র অ্যাডামস একটি অপরাধমূলক মামলার বিনিময়ে আইস-কে রিকার্সে ফিরিয়ে আনার চুক্তি করেছিলেন।

মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ ও মেয়রের ভূমিকা নিয়ে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। যদিও পরে ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগ সেই মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। অভিযোগ উঠেছে, মামলাটি বাতিল করার বিনিময়ে অ্যাডামস আইসের কার্যক্রম রিকার্সে চালু করতে রাজি হন। তৎকালীন ইউএস অ্যাটর্নি ড্যানিয়েল সাসুন এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন এবং ‘কুইড প্রো কুয়ো’ অর্থাৎ বিনিময় ভিত্তিক চুক্তির অভিযোগ তোলেন। মেয়রের প্রথম ডেপুটি র‌্যান্ডি মাস্ত্রো, যিনি নির্বাহী আদেশে সই করেন, দাবি করেছেন, এই আদেশ সহিংস গ্যাংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এটি অভিবাসীদের অধিকার খর্ব করার জন্য নয়। তিনি বলেন, বিচারকও স্বীকার করেছেন যে আইনগত দিক থেকে আদেশে কোনো সমস্যা নেই। তবে বিচারক রোসাডো বলেন, মাস্ত্রো সরাসরি মেয়রের অধীনেই কাজ করেন, ফলে তিনি নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না।

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস, যিনি আসন্ন মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এই সিদ্ধান্তকে জনগণের জন্য একটি বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই নগরবাসী তাদের নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করে। অথচ মেয়র অ্যাডামস ট্রাম্পের আইসের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে সেই দায়িত্ব ত্যাগ করতে চেয়েছেন।

নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের সভাপতি মুরাদ আওয়াদেহ বলেন, এই রায়ের ফলে রিকার্সে আটক হাজার হাজার ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে নির্বাসিত হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। নিউ ইয়র্ক সিটি ট্রাম্পের ‘গুম করার নীতি’র অংশ হতে পারে না। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসন আদালতের বাইরে থেকে শুরু করে নানা স্থানে আইস এজেন্টদের উপস্থিতি বেড়েছে। আদালতের মতে, এ ধরনের উপস্থিতি নাগরিক অধিকার এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে এবং অবৈধদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

ম্যানহাটনের সুপ্রিম কোর্টে রিকার্স দ্বীপে আইসের অফিস খোলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জারি করা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসনের প্রতি একটি কড়া চপেটাঘাত। আদালতের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয়েছে, অ্যাডামস তার নিজের বিরুদ্ধে থাকা ঘুষ ও দুর্নীতির মামলার নিষ্পত্তির বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি ‘দুর্নীতিপূর্ণ সমঝোতা’ করেছেন বলে দৃশ্যত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সেই সমঝোতার অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইস) রিকার্স আইল্যান্ডে ফিরিয়ে আনার অনুমতি দেন, যা নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসীবান্ধব নীতির পরিপন্থী এবং নগরের লাখো অভিবাসীর নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি।

নাগরিকদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষার দায়িত্বে থাকা একজন মেয়রের কাছ থেকে এমন স্বার্থান্বেষী ও রাজনৈতিকভাবে অনৈতিক পদক্ষেপ শুধু হতাশাজনক নয়, বরং তা বিশ্বাসঘাতকতাও বটে। আদালতের মন্তব্য অনুযায়ী, মেয়র অ্যাডামস জনগণের স্বার্থের বদলে নিজেকে আইনি বিপদ থেকে বাঁচাতে ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে সিটির নীতিগত অবস্থান তুলে দিতে চেয়েছেন। এতে প্রমাণ হয়, তিনি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নগরের আইন ও নীতির সঙ্গে আপস করতে প্রস্তুত।

এই রায় কেবল নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের আইনি সাফল্য নয়; বরং এটি পুরো নগরবাসীর জন্য একটি সতর্কবার্তা-নেতৃত্ব যখন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তখন নাগরিক অধিকার বিপন্ন হয়ে পড়ে। আদালতের এই হস্তক্ষেপ আপাতত রিকার্স দ্বীপকে আইসের হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করেছে। তবে মেয়র অ্যাডামসের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ এবং তার নেতৃত্বে জনআস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিউইয়র্কবাসীর জন্য এটি একটি সময়োপযোগী উপলব্ধি, শহরের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব অপরিহার্য।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)