বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবী, বিএনপি এবং এর পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের সব ধরনের আর্শিবাদ পেতে জাতীয় পাটির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলটির সিনিয়র নেতাদের বলির পাঠা বানাচ্ছেন। আবার কারো কারো মতে, দলের নিজের অবস্থান পোক্ত করতে সিনিয়রদের সরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এসব করে নিজেকে ও জাপাকে ফ্যাসিবাদের দোসরের কালিমা থেকে রেহাই পেতে চাইছেন। এসব তথ্য জানা গেছে, জাপা সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে।
কি কি ঘটেছে গত কয়েকদিনে?
গত ৭ জুলাই সোমবার তিন প্রভাবশালী সিনিয়র নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জাতীয় পাটির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তাঁরা হলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক (চুন্নু)। অন্যদিকে কো-চেয়ারম্যান শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব নিযুক্ত করেছেন তিনি। গত এক সপ্তাহে মোট ১১ জন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। অব্যাহতি দেওয়া তিন নেতার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ।
অব্যাহতি প্রাপ্তদের অভিযোগ..
এদিকে অব্যাহতি প্রাপ্তরা তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং পরে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেন, চেয়ারম্যান জি এম কাদের জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারার যে ক্ষমতাবলে তাঁদের অব্যাহতি দিয়েছেন, তাঁরা সেটি চ্যালেঞ্জ করবেন, গঠনতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারি ধারার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। তারা বলেন, চেয়ারম্যানের এই অব্যাহতি আদেশ ও মহাসচিব নিয়োগপ্রক্রিয়া অগণতান্ত্রিক, গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন এবং এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। এদিকে পরেরদিন অর্থ্যাৎ ৮ জুলাই মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির অব্যাহতি পাওয়া নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত বেআইনি। আমরা এখনো স্বপদে বহাল আছি। আমরা সবাই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। চেয়ারম্যানের প্রতিটি সিদ্ধান্ত স্বৈরাচারী। গুলশানে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।
কেনো এমন ঘটলো
সিনিয়র নেতাদের অব্যাহতি দেওয়ার আগে জাপার দলের একটি বড়ো অংশ বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সরাতে গোপনে পরামর্শ করেন। এতে দলের বর্তমান এবং সাবেক সিনিয়র নেতারা ছিল। জানা গেছে, তাদের আবার একটি অংশ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শুধু জি এম কাদেরকে সরাতেই না তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপর হয়। কারো কারো মতে, খোদ জি এম কাদের-ও এমন একটি গোপন তৎপরতায় জড়িত ছিল। তবে জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা জুলাই বিপ্লবীদের পাশাপাশি বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি বিরাগভাজন হন। বলা চলে জি এম কাদের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশি বিতর্কিত হয়ে পড়েন। এমন পর্যায়ে জাপাকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টির- জি এম কাদেরের গোপন মিশন ভেস্তে যায়। পুরো সুযোগটা চলে আসে সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্তদের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ জুন কাউন্সিলেই এই বিষয়টি পাকাপোক্ত হয়ে যায় তারা জি এম কাদেরকে হটাবেই। কিন্তু এই গোপন বিষয়টি জানাজানির পর জি এম কাদের নিজেই এ্যাকশনে যেতে শুরু করেন। এজন্য প্রথমে তিনি ২৮ জুন দলের সম্মেলন একই দিনে একইস্থানে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি রয়েছে- কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। এরপরেই এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে মোট ১১ জন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন তিনি।
এর শেষ কোথায়
কারো কারো মতে, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোক্ষম সুযোগটি নিয়েছেন জিএম কাদের। তিনি ভালো করেই জানের এই পরিস্থিতিতে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা বড়জোর একটি সংবাদ সম্মেলন করতে পারবে। নতুন করে দল গোছাতে বা গঠনে তারা কোনোভাবেই এগুতে পারবে না। কারো কারো মতে, গত এক সপ্তাহে মোট ১১ জন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো শক্ত সিদ্ধান্তের পেছনে জিএম কাদেরের অদৃশ্য ক্ষমতাবান কোনো পক্ষ কাজ করছে। সে-ই ক্ষমতাবান পক্ষটি এখনো মনে করেন জিএম কাদের দিয়েই আগামীতে জাপাকে তাদের নতুন খেলার সাথী হিসাবে রাখা যাবে। এখন দেখা যাক জিএম কাদের রাজনীতিতে কি খেলার সহযোগি হন!