জোরপূর্বক মুসলিম নারীর হিজাব খোলার অভিযোগে মামলা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 09-07-2025

জোরপূর্বক মুসলিম নারীর হিজাব খোলার অভিযোগে মামলা

গাজা সংহতি বিক্ষোভ চলাকালে শেরিফ বিভাগের ডেপুটিরা জোর করে দুই মুসলিম নারীর হিজাব খুলে ফেলেন-এমন অভিযোগে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরেঞ্জ কাউন্টি ও এর শেরিফ বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন সালমা নাসুরদীন ও শেনাই আইনি নামের দুই তরুণী ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৫ মে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভাইন ক্যাম্পাসে ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষের বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে ডেপুটিরা তাদের গ্রেফতার করেন এবং জোর করে তাদের হিজাব খুলে ফেলেন, যা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে থাকা ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করে।

মামলায় শেনাই আইনি অভিযোগ করেন, একদল পুরুষ অফিসার তাকে ঘিরে ফেলে মাটিতে ফেলে দেন এবং তার হিজাবের ওপর পা রাখেন। ফলে হিজাব খুলে যায়। টেলিভিশন ক্যামেরা সরাসরি ওই দৃশ্য সম্প্রচার করছিল। তিনি তার হিজাব ঠিক করার অনুরোধ জানালেও তারা তা করেনি। এমন কি তিনি নিজেও ঠিক করতে পারেননি। কারণ তার হাত আগেই জিপ-টাই দিয়ে বাঁধা ছিল। পরে আরেকজন নারীর অনুরোধে একজন অফিসার হিজাবটি তার মাথায় ফেলে দেন, তবে সেটি সঠিকভাবে বাঁধা হয়নি। পরে সান্তা আনা প্রসেসিং সেন্টারে, কাচের জানালাওয়ালা একটি কক্ষে, যেখানে পাশের করিডোরে পুরুষ অফিসাররা অবস্থান করছিলেন, এক নারী ডেপুটি তাকে হিজাব খুলতে এবং প্যান্ট খুলে তল্লাশি নিতে বলেন। এরপর তাকে দুটি বুকিং ছবির জন্য আবারও হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়, যেখানে পুরুষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

নাসুরদীনও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে আসার এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে মাটিতে ফেলে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে সবার সামনে তার হিজাব খুলে নেওয়া হয়। সেই ছবি এখন সরকারি রেকর্ডের স্থায়ী অংশ হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার পাসপোর্ট বা আইডির জন্য কখনোই হিজাব খুলতে বলা হয়নি। আমি ভাবছিলাম, এটা কি সত্যিই ঘটছে? আমি কি এখন আমার ধর্মীয় অধিকারের বাইরে?

মামলায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব শুধু একটি পোশাক নয়, এটি তাদের বিশ্বাস, আত্মপরিচয় এবং আত্মরক্ষার প্রতীক। অরেঞ্জ কাউন্টি শেরিফ বিভাগ তাদের নিজস্ব নীতিমালাতেই উল্লেখ করেছে যে, ধর্মীয় কারণে মাথা ঢাকার অনুমতি থাকলে বন্দিকে একটি পৃথক কক্ষে নিয়ে গিয়ে একই লিঙ্গের ডেপুটি তার তল্লাশি করবেন এবং অস্থায়ী হেডকভার সরবরাহ করবেন। এরপর বুকিং ফটো নেওয়া হবে এবং তাকে পুনরায় হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এসব নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুরুষদের সামনে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছে, যা ধর্মীয় অধিকার এবং সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।

বাদীদের আইনজীবীদের মতে, অরেঞ্জ কাউন্টির শেরিফ-কোরোনার ডন বার্নস এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুধু আইন লঙ্ঘনই করেননি, বরং ধর্মীয় অনুভূতিকে অবজ্ঞা করে ইচ্ছাকৃতভাবে মানসিক আঘাতও দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, ডেপুটিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকাও এর অন্যতম কারণ। গাজা সংহতি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জোর করে গ্রেফতার করেন এবং হিজাব খুলে ফেলার জন্য বাধ্য করেন, যা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন। এই ঘটনা তাদের মৌলিক অধিকার, সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং ২০০০ সালের ধর্মীয় জমি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করেছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে সিভিল রাইটস অ্যাটর্নি দিনা চেহাটা বলেন, কারো গ্রেফতার মানে এই নয়, যে সে তার ধর্মীয় অধিকার হারাবে। আমাদের আইন পরিষ্কার যে ধর্মীয় বিশ্বাস ধরে রাখার অধিকার কারাগারের দরজায় থেমে যায় না। মামলার মাধ্যমে বাদীরা আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, এই ধরনের আচরণকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে, ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য জুরি ট্রায়ালের আদেশ দিতে। সংবাদ সম্মেলনে বাদী শেনাই আইনি বলেন, আমার জন্য হিজাব কেবল একটি কাপড় নয়, এটি আমার পরিচয়, আমার আত্মরক্ষা ও আমার বিশ্বাসের প্রতীক। এই ঘটনা শুধু আমার ওপর নয়, প্রতিটি মুসলিম নারীর ওপর আঘাত। আমি চাই, কেউ যেন এমন লজ্জা, অপমান ও ধর্মীয় বিশ্বাসের লঙ্ঘনের শিকার না হয়।

অন্যদিকে অরেঞ্জ কাউন্টি শেরিফ বিভাগের মুখপাত্র ক্যারি ব্রাউন এক বিবৃতিতে জানান, বুকিং প্রক্রিয়ায় নারীদের হিজাব শুধু নারী ডেপুটিদের উপস্থিতিতে একটি ব্যক্তিগত কক্ষে খুলতে বলা হয়েছে এবং কোনো জোরজবরদস্তি করা হয়নি। বুকিং ফটোগুলো ক্যালিফোর্নিয়া আইনে জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য নয় এবং কারাগারের নিরাপত্তা ক্যামেরায় পুরো প্রক্রিয়া ধারণ করা হয়েছে। তবে বাদীপক্ষ এই দাবিকে বিভ্রান্তিকর ও বাস্তবতা-বিচ্যুত বলে উল্লেখ করেছে। মামলাটি বর্তমানে ফেডারেল আদালতে বিচারাধীন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)